অপরূপা প্রকৃতি
– শচীদুলাল পাল
আমি মহাকাল সৃষ্টি স্থিতি লয়,
উপস্থিতি গরমকাল আমি প্রলয়।
রুদ্রতাপে প্রকৃতি ধরিত্রী জনসাধারণ,
সবার আবাহনে পরিত্রাণে আমার আগমন।
আমি ঝঞ্ঝা আমি বেগ রুদ্র তাপস,
ঝড় জল গতিবেগে নেই কোনো আপস।
কড়কাপাতে বজ্রাঘাতে মুহুর্মুহু আঘাতে,
দমকা হাওয়ার সাথে অঝোর ধারাপাতে।
তান্ডবে প্রচন্ড বেগে করি তছনছ,
লণ্ডভণ্ড করি, ভাঙি ডালপালা গাছ।
তবু আমার আগমনে দিশাহারা আত্মহারা,
প্রলয় ভুলে শীতলে প্রাণীকুলে আনন্দধারা।
রুক্ষ অবনিপরে প্রথম বরিষণ,
সোঁদা গন্ধে কুমারীর প্রথম প্রেমের মত শিহরণ।
আনন্দে বর্ষণসিক্ত বসনে সর্বাঙ্গ মাখামাখি,
তপ্ত ধরণীর বাসনা পূরণে আমি কালবৈশাখী।
জৈষ্ঠের দুপুরে শুঁকছে ধুলো কুকুরে
প্রচন্ড রোদের জ্বালায় অবগাহন পুকুরে
অঙ্গে অঙ্গে জ্বালা পরিত্রাণে ছত্রতলে
প্রেমিক প্রেমিকার সান্নিধ্য গাছতলে
তপ্ত রোদে শ্রমিক কৃষক গগনতলে
রুজি রুটির সন্ধানে কর্মস্থলে
কিশোর কিশোরী টিউশনি শেষে সাইকেলে
বাড়ি ফেরে চুয়াল্লিশ ডিগ্রির তাপে পুড়ে সকলে।
আমি মৌসুমী, আমার প্রতিক্ষায়,
তপ্ত ধরিত্রীর শান্তি আমার আসায়।
নীলনবঘনে আষাঢ়ে, আমি নবজলধর,
এক পসলা বরিষণে ঝরঝর।
অবিরামে, ঝড়বাদলে অশান্ত
নিম্নচাপে গতিবেগে আমি দুরন্ত।
জলোচ্ছ্বাস, জলভাসি আমার কীর্তি।
বন্যা,প্রানহানি,গৃহহীন আমার অনাসৃষ্টি।
কৃত্রিম জলাধারের সৃষ্টি আমার
বিপদসীমার পর রব ছাড় ছাড়।
আমি যোগাই জগতবাসির অন্ন
আমি ছাড়া খরা, আকাল, নিরন্ন।
রিমঝিম বরষায়, রক্ষায় ছত্রধর, বর্ষাতি,
প্রেমিক যুগল সিক্ত বসনে মাতামাতি।
শিশুর ক্রন্দন, আষাঢ়ের বর্ষণ,
এই আছে এই নেই স্থায়ী অল্পক্ষণ।
তালপাতার ছানি,মেখলা মাথায় কামিন,
মানেনা বর্ষণ, চারা রোপন,সারাদিন।
নদীনালা, ডোবা,পুকুর, পুষ্করিণী,
জল টইটম্বুর, কর্দমাক্ত অবনী।
গ্রামে গঞ্জে, জল কাদায় পথচলা অন্তরায়,
শহরে হাঁটুজলে পথচলা জুতা মাথায়।
কড়কাপাত, বজ্রবিদ্যুত সহ শিলাবৃষ্টি।
বরফপাত, স্বাভাবিক বৃষ্টি, প্রকৃতির সৃষ্টি।
কেয়া, কামিনী, জুঁই, বর্ষায় কদমফুল,
পথঘাট মাঠ, নদীনালা জল থৈথৈ আকুল।
রিমঝিম, ঝমাঝম, ইলশেগুঁড়ি, বাদলধারা,
টাপুরটুপুর, ধারাপাত, বৃষ্টি মুশলধারা।
ময়ূরীর নাচনে, সিক্ত বসনে স্বরূপা,
ঘূর্ণিঝড়ে, প্রলয়ে, আমি বর্ষা শতরূপা।
আমি শরতের শিউলি ফুলে
শ্বেতশুভ্র চারিদিক কাশফুলে।
সবুজ ধানের ক্ষেতে রবির কিরণ
মৃদুমন্দ হাওয়ায় পরাগ মিলন।
আকাশে বাতাসে পূজার গন্ধে মাতোয়ারা
দেবীর আগমনে মেঘমুক্ত কখনো বাদলধারা।
কার্তিকের নাতিশীতোষ্ণ বাতাবরণ
সোনালী ধানের উপর হিমেল শিহরণ।
ডালে ডালে পাখিদের কলতান।
চাষির ধান নিয়ে ঘরে আগমন।
দিনের শেষে বেলা ডুবে নদীর কিনারায়।
সন্ধ্যা প্রদীপ জলে ঘরের আঙিনায়।
আমি নবান্নের অগ্রহায়ণ।
নতুন ধানে ঘরে ঘরে পার্বণ।
হিমের রাতে তারার ওই দীপধারা
স্নিগ্ধ শীতের আনন্দে আত্মহারা।
পৌষের ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন।
হাড়কাঁপানো শীতে প্রকৃতি মগ্ন।
নানান ফুলে ফুলে ভরে ওঠে বাগান,
শাক সবজি খেতে মাঠে, পিঠে পার্বণ।
টুসু পার্বণ নানান মেলায় কাতারে কাতারে
পৌষ সংক্রান্তির স্নান নদী সাগরে।
মাঘের জাড়ে কাঁথা কম্বল সোয়েটারে
গরীবের দিন কাটে সূর্য তাপে আগুনের ধারে।
ফাল্গুনে রক্তপলাসের সাথ বসন্ত।
ঋতুরাজের আগমনে আনন্দে দিকদিগন্ত।
ডালে ডালে আম্রমুকুল কাঞ্চন ফুল
নাতিশীতোষ্ণ বাতাবরণ রূপ রস গন্ধে আকুল।
মধুমাসে বাতাস বয় মন্দ মন্দ
প্রকৃতির রূপ হেরি মনে জাগে অপার আনন্দ।
চৈত্রে চড়ক শিবের গাজন।
প্রকৃতির রূপে বারোমাস পরিবর্তন।
ধন্যবাদ সবাইকে