গল্প- খেলা ঘর

খেলা ঘর

-শিলাবৃষ্টি

 

 

খেলাই বটে!
জীবনের এক চরম খেলা!
ফেসবুকের খেলা!
আজ আশার হৃদয় ব্যাকুলতায় ভরা। ভালো লাগছেনা কিছুই । সারাটা দিনের পরে অবসরে সব যেন ছবির মতো ভেসে উঠছে। ফেসবুকে পরিচয়। এত কিছু বুঝতো না আশা। কেমন যেন মায়া পড়ে গেল ছেলেটার ওপর। দিন দিন কথা বাড়ে- ফোনে, মেসেজে। নাম রাতুল। চাকরি একটা করে, তেমন কিছুই না।বিশ্বাস করে ফেলেছে সম্পূর্ণ আশা। বয়েসে অনেকটাই ছোট রাতুলের ওপর খানিকটা নির্ভরতাও এসে গেল। একদিন দেখাও হল।তারপর থেকে দরকারে অদরকারে দেখা হওয়া বেড়েই চলল। পরিবারে অনেকগুলো মানুষ। মেয়ে, স্বামী, দেওর, শাশুড়ির চোখ বাঁচিয়ে কেমন যেন অনেক কাছাকাছি চলে এলো তারা। অদ্ভুত এই সম্পর্কের কথা ভাবলে অবাক হয় আশা। রাতুল শোনায় নিত্য নতুন ভালোবাসার কথা, ভালো লাগে। এমন ভাবে তো কখনো কেউ বলেনি।
স্বামীর সাথে সম্পর্ক কোনকালেই গাঢ় ছিলনা, দিনে দিনে আরো তেঁতো হয়েছিল।শুধু ব্যবহারিক জীবনে যেটুকু কথাবার্তা হয় … সেইটুকুই। তাই আশা রাতুলের ভালোবাসায় ভেসে গেল। কয়েকটা বছর
অদ্ভুত এক স্বপ্নের মধ্যেই দিন হল অতিবাহিত। একেই বোধহয় প্রেম বলে।
আশার এখন মনে হয়..রাতুল আগের মতো নেই। কেমন যেন পাল্টে গেছে। এখন সময় তার কাছে দামি অনেক। কাজের অনেক চাপ। বিয়ের জন্য প্রস্তুতি চলছে। সুন্দর স্বপ্নটা ভেঙে গেল আশার। এবার জাগতে হবে । বাস্তবের মাটিতে পা রাখতে হবে। সংসার, স্বামী, সন্তান, বুড়ি শাশুড়ি.. সবাই যে তারই অপেক্ষায়।
জোর করে রাতুলই একদিন তার খেলাঘরের একটা পুতুল বানিয়ে নিয়েছিল তাকে। জানে না আশা- এভাবে ফেসবুকের কত বন্ধুকেই হয়তো রাতুলের সঙ্গী হতে হয়েছে। মিথ্যের পাঁচিল দিয়ে ঘেরা সেই খেলাঘর থেকে আশার বেরোনোর সময় হয়ে গেছে। আর তো রাতুল আগের মতো জোর করে না কোন কিছুতেই। আগের মতো ভালোবাসায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়না কোথাও। তবে কোনদিনই অসম্মানের মতো কোন কাজ রাতুল করেনি। এটা তার চরিত্রের বিশেষ গুণ।

আজ পড়ন্ত বিকেলে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আশা ভাবে — ঈশ্বর কেন এমন ঘটালেন …এর কি কোন প্রয়োজন ছিল?
পাগলের মতো ভালোবাসা দিয়েছিল রাতুলকে। আজ ফেসবুকে অনেক মেসেজ দিয়েও রিপ্লাই আসেনা অন লাইনে থাকা রাতুলের। সাত সকালে কেউ মেসেজ দেয়না “তুমি ব্রেকফাষ্ট করোনি এখনো?” কেউ বলেনা – ” না, এখন একটু থাকো। আমরা গল্প করি।” ভালোবাসার, আদরের সোহাগের.. কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যখন নেট অফ করতো আশা…রাতুল রাগ করতো।
আজ কিন্তু সব পাল্টে গেছে। আজ কথা শুরু হতে না হতেই রাতুল বলে-“তুমি কি ব্যস্ত?” হায় রে কপাল! রাতুল কি আজ আর বোঝেনা সব ব্যস্ততা তো তারই জন্য!

না আর নয়। মুখে না বললেও রাতুল হয়তো মুক্তিই চাইছে। তার নতুন জীবনের শুরুতে আর কেন কাঁটা হয়ে থাকা! প্রতিটা দিন আশা ভাবছে বিদায় নেওয়ার কথা। কিন্তু কিছুতেই কেন পারছেনা। প্রতিনিয়ত চোখে জল আসছে। ঈশ্বর কি এভাবেই তাকে “ভালোবাসা কারে কয় “এর উত্তর দিলেন! কিন্তু আশার ভালবাসা তো মিথ্যে নয়। তাই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সে রাতুলের মঙ্গল কামনা করে যাবে। নীরব প্রেমই থাকবে তার সম্বল! আর থাকবে স্মৃতিগুলো। যা দিয়ে সারাজীবন একটা মালা গাঁথবে সে। স্মৃতির মালা! এভাবেই কাটবে তার সারাবেলা। চুলে ধরেছে পাক, কদিন পরে বয়েসের ছাপ পড়বে.. চোখে, মুখে, চামড়ায়। তার চেয়ে “এই করেছ ভালো নিঠুর হে।”খেলাঘর এবার ভাঙার সময় এসেছে । আর নয় । “যা পাখি, উড়তে দিলাম তোকে”।

অনেক রাত এখন — আশা সন্তর্পণে বিছানা থেকে ওঠে। বাড়ির সবচেয়ে প্রিয় জায়গা ছাদে চলে যায়। হাতে প্রিয় মোবাইলট, অন করে। ফ্রেণ্ড লিষ্টে যায়। রাতুল মিত্র … স্পর্শ করে — ……ব্লক্।।
উন্মুক্ত আকাশ মাথার ওপরে — দু’চোখে জলের ধারা বয়ে যাচ্ছে। দু’টো হাত প্রসারিত করে আশা … উড়িয়ে দেয় জীবন ডাইরির কিছু পাতা।

Loading

Leave A Comment