ক্ষমাহীন ভুল
– বিভূতি ভূষন বিশ্বাস
হাসিটা সত্যি দেখার মতো, যেন মুক্ত ঝরে পড়ছে। মেয়েটি এক নম্বর প্লাটফর্মে আর আমি ওর সোজাসুজি দু’ নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে ওর সৌন্দর্য্য উপভোগ করছি। মেয়েটির সঙ্গে একটি ছেলে আছে সম্ভবত ওর বয় ফ্রেন্ড হবে। ছেলেটি কতটা সৌন্দর্য্য উপভোগ করছে জানিনা কারণ ওর হাতে একটা ঠোঙ্গায় পিস করা মুসাম্বি লেবু, দু’জনে একটা একটা লেবুর পিস মুখে পুরছে আর খেয়ে রেল লাইনের ভিতরে ছুঁড়ে ফেলছে । ওদের থেকে দশ হাত দূরে একটি ডাসবিন আছে তাতে না ফেলে রেল লাইনে ফেলা দেখে আমার মনে হচ্ছিল ডাসবিনটা নিয়ে রেল লাইনে মাঝে আমি দাঁড়িয়ে বলি হে সুন্দরী বালিকা লেবুর খোসা এতে ফেলুন।
হঠাৎ আমার পাশের ওভার ব্রিজ দিয়ে মাঝ বয়সী এক ভদ্রলোক কানে হেড ফোন হাতে লম্বা মোবাইল নিয়ে দৌড়ে নেমে এলেন। পাশে দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করলেন কৃষ্ণনগর যাবার ট্রেন কখন আসবে। আমি বলতে যাবো তাঁর আগেই দোকানদার বললেন ওই এক নম্বর প্লাটফর্মে কৃষ্ণনগর লোকাল ঢুকছে, এটা দু’ নম্বর প্লাটফর্ম। ততক্ষণে ট্রেন সবে মাথা ঢুকিয়েছে প্লাটফর্মে। ভদ্রলোকটি ওভার ব্রিজ দিয়ে না গিয়ে নীচে দিয়ে এক দৌড়ে এক নম্বরে প্লাটফর্মে উঠতে গিয়ে লেবুর খোসায় পা পড়ে পিছলে গিয়ে এক নম্বর লাইনে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো। সকলেই হৈ হৈ করে উঠলো। ততক্ষণে সব শেষ ট্রেনটি সেকেন্ডের মধ্যে বুকের উপর দিয়ে চলে গেলো। আমি বাক রুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ট্রেনটি চলে যেতেই প্রচুর লোকজন ঘিরে মোবাইলে ছবি তোলায় ব্যস্ত। হ্যাঁ ওই ছেলেটিও মোবাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, আর ওর বান্ধবী পাশে দাঁড়িয়ে ওকে নির্দেশ দিচ্ছে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে ছবি তোলার জন্য।
কিছুক্ষণ পরে রেল পুলিশ এসে দেহটিকে তুলে নিয়ে গেলো। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি আমার গন্তব্যের গাড়ি ডাউন শন্তিপুর লোকাল ঢুকছে। অনেক কিছু বলার ছিলো কিন্তু কাউকে কিছু্ই বলতে পারলাম না। শুধু ভাবলাম এই ছোট্ট ছোট্ট ভুলগুলি সত্যি ক্ষমার অযোগ্য ।