নিজের সাথে দ্বন্দ্ব
– রেহানা দেবনাথ
সমাজসেবী সুমিতা দেবী আজ নিজের ঘর অন্ধকার করে বসে আছেন। আজ তার নিজের সঙ্গে নিজের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে।পাশের বাড়িতে ষোলো বছরের ঝুমার বিয়ে চলছে চুপিসারে! সে কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরে ঝুমার মা মালতীকে ডেকে জিগ্যেস করতেই সে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে বলে “দিদিমণি আমাকে ক্ষমা করবে এত কম বয়সে মেয়েটার বিয়ে দিতে চাই নি কিন্তু আমি নিরুপায়। জানোতো আমার স্বামী বদ্ধ মাতাল তাই সে যখন তখন আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে শরীরের খিদে মেটানোর জন্য।তখন দেখে না একটাই ঘরের মধ্যে আরো চারটে বাচ্ছা রয়েছে যারা এগুলো দেখতে পাচ্ছে। মেয়েটার শরীরে যৌবন আসতেই ও এগুলো দেখে বাইরে কোথাও কিছু করছে বলে আমার সন্দেহ হয় কারণ ওর মধ্যে মনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের পরিবর্তন ও আমি লক্ষ্য করেছি। তার জন্য ওকে বুঝিয়ে, বকে, মারধোর করেছি তবুও কোনো কিছু জানতে পারিনি। এমন কি ও স্কুলেও যায় না। তার উপর সপ্তাহ খানেক আগে দুপুরে আমি হঠাৎ লোকের বাড়ি থেকে কাজ করে ফিরে দেখি ঝুমার সঙ্গে ওর বাবা খারাপ কাজ করছে।কি করবো বুঝতে পারছিলাম না! স্বামীকে যে তাড়িয়ে দেব সেটাও উপায় নেই কারণ একা মেয়ে থাকলে শেয়াল কুকুরে আমাদের ছিঁড়ে খাবে!
তিনদিন আগে জগা গুন্ডার ছেলে এসে বলে গেছে সে ঝুমাকে পছন্দ করে তাই ওর সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করতে না হলে তুলে নিয়ে যাবে! তাই বাধ্য হয়ে আমার দাদার বন্ধুর ছেলের সাথে চুপিসারে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি!”
সুমিতা দেবী চুপ করে সব শুনে অবাক হয়ে বললো “ওর আঠেরো এখনো হয় নি, শিশু বিবাহ আইনত অপরাধ। পুলিশকে জানিয়ে দিলে তোমরা সবাই জেলে যাবে তাই এই বিয়ে বন্ধ করো মালতী”।
মালতী সুমিতা দেবীর পা দু’টি জড়িয়ে ধরে বলে এমন কাজ করবেন না দিদি “ওকে ঘরে রাখলে যে হয় ওর বাবার ভোগ্য হবে না হলে গুন্ডাদের দ্বারা ধর্ষিত হবে তার চেয়ে এটা ভালো নয় কি?”
সুমিতাদেবী বললো “কোথাও খাওয়া পরার কাজে অথবা সরকারী হোমে ওকে রাখার ব্যবস্থা করলেই হয়!’
মালতী উঠে দাঁড়িয়ে বলে “দিদি আপনি যে জায়গাগুলোর কথা বলছেন সে জায়গায় আমার সুন্দরী মেয়ে যদি নিরাপদ থাকবে বলে আপনি যদি দায়িত্ব নেন,তাহলে এই বিয়ে আমি বন্ধ করে দিতে পারি। কথাটা বলে মালতী চলে যায়।
সেই থেকে সুমিতাদেবী নিজের সঙ্গে নিজে লড়াই করছে একবার ভাবছে পুলিশকে খবর দিয়ে বিয়েটা বন্ধ করে তার কাজের দায়িত্ব পালন করবে আরেকবার ভাবছে তারপর ভাবছে বিয়েটা বন্ধ করে দিলে সে কিভাবে অন্য আর সবার থেকে মেয়েটাকে বাঁচাবে!