অণু গল্প

অণুগল্প- গোড়ায় গলদ

গোড়ায় গলদ
– নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত

 

বহুূদিন পর চন্দ্রাণীর সাথে ইন্দ্রাণীর দেখা। দু’জনেই একদা সহপাঠী এবং বর্তমানে শিক্ষিকা। ভিন্ন ভিন্ন বিদ্যালয়ে এবং জেলায়।
দু’জনই উচ্ছ্বসিত।
: কেমন আছিস রে চন্দ্রাণী? কেমন শুকিয়ে গেছিস মনে হচ্ছে! কোনো অসুখ-বিসুখ?
: না রে, আমার অসুখ-বিসুখ, জ্বরজারি বড় একটা হয় না। কিন্তু একসাথে সংসার আর চাকরির দাবি মেটাতে গিয়ে হাড়মাস কালি হয়ে গেল।
: সংসার! সে তো সবাইকে করতে হয়। আমাকেও তো রান্নাবান্না করে ছেলেকে নাইয়ে -খাইয়ে -পরিয়ে স্কুল পাঠিয়ে নাকে মুখে দুটো গুঁজে চাকরিতে আসতে হয়। তোর কাজের মাসি নেই?
:নেই আবার? কিন্তু তাকে দিয়ে ক’টা কাজ হয়? ঘর ঝেটোনো, ঘরমোছা, বাসনমাজা, মাঝেমধ্যে দু’একটা কাপড়কাচা –এর বাইরে তো সে কুটোটি ভেঙেও দু’খানা করবে না।আর সব কাজ তো আমাকেই করতে হয়। সে কি কম কাজ! সকালের বিছানা-মশারি তোলা, চা বানানো, জলখাবার, ছেলের স্কুলের টিফিন, রান্নাবান্না, ছেলেকে খাইয়ে দাইয়ে সাজিয়ে-গুজিয়ে স্কুলে পাঠিয়ে তবে নিজের স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি। আর সে স্কুলও তো আঠাশ কিলোমিটার দূরে ধ্যাদ্দেরা গোবিন্দপুরে।
: আর তোর উনি? উনি কী করেন?
: উনি থাকেন ওনার কাজ নিয়ে। একে তো দেরিতে ওঠেন। তারপর চা খেয়ে টয়লেট সেরে দাড়ি কামিয়ে স্নান করে ঠাকুরঘর। ওনাকে তো আবার ন’টার ট্রেন ধরে অফিসে যেতে হয়। কাজেই দম দেওয়া পুতুলের মতো আমাকেই…….
: সে তো তোর গোড়ায় গলদ। আমার কিন্তু এত সব করতে হয় না। বিছানা- মশারি তোলা, ছেলেকে ঘুম থেকে তুলে বাথরুম করানো, স্নান করানো, জামাজুতো পরানো, রান্নার জন্য সব্জি- তরকারি কেটে দেওয়া এসব কাজ ছেলের বাবাই করে। আমার ভাই খুব একটা অসুবিধে হয়না।
: সত্যি তুই ভাগ্যবতী। এমন বর ক’জনের হয়? কিন্তু তুই আমার গোড়ায় গলদের কথা বলছিলি না? কি গলদ রে?
: কেন, চাকুরে ছেলেকে বিয়ে করিস নি? আমার মতো বেকার ছেলেকে বিয়ে করলে তোকে এতো খাটতে…
: চলি রে, আমার বাস এসে গেছে। বলে হাঁটতে শুরু করে চন্দ্রাণী।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page