রঙ
-অমল দাস
রবিবার ছুটির দিন একসাথে সবাই মিলে চায়ের টেবিলে। একসাথে সবাই মানে খুব বেশি নয়। মা, বাবা আর প্রভাংশু এই তিন জনের পরিবার। প্রভাংশু চায়ের কাপে হালকা মেজাজি চুমুক দিতেই মা দীর্ঘ দিনের সুপ্ত ইচ্ছা জাগিয়ে বাবার দিকে চেয়ে বলে ওঠে- এবার একটা মেয়ে-টেয়ে দেখো অংশুর জন্য!
প্রভাংশুর বাবা বলল- বেশতো দেখলেই হয়! আত্মীয় স্বজনদের খবর দিয়ে দাও তাহলে। তারপর প্রভাংশুরকে উদ্দেশ্য করে জানতে চায়- তা তুই কি বলিস? বা তোর কোন মতামত থাকলে বল।
প্রভাংশু মৃদু হেসে বলল- মতামতের আর কি আছে! তোমাদের যখন ইচ্ছা বা বিয়ে যখন একটা করতেই হবে, তবে দেখতে তো হবেই।
মা বলল- আমি তাহলে তোর মাসী, আর পিসিমাকে খবর দিয়ে রাখি? যদি তাদের পরিচিত কোন মেয়ে থেকে থাকে জানাশোনার মধ্যে।
বাবা বলল- সে তো বলবেই! তা অংশুর যদি কোন কেউ পছন্দে থাকে সেটাও আগে জেনে নাও।
প্রভাংশু স্বাভাবিক স্বরেই- না বাবা.. তেমন কেউ নেই! তবে চ্যটার্জী বাড়ির মেয়েটি দেয় কিনা খোঁজ নিয়ে দেখত পারো তোমরা!
মা একটা অবজ্ঞা মিশ্রিত সুরে বলল- কে? প্রিয়া না কি নাম সেই মেয়েটা?
-হ্যাঁ! মেয়েটি জানাশোনার মধ্যে ভালোই শুনেছি।
মা চোখ উঁচিয়ে, ঠোঁট বাঁকিয়ে উস্মা প্রকাশ করে বলল- না…. না… ওই মেয়ের সাথে তোর বিয়ে!
– কেন ও মেয়ের আবার কি হল? তুমি কিছু জানো না কি? বাবা জানতে চাইল।
– জানি বলতে মেয়ের গায়ের রঙ খুবই চাপা, অংশুর সাথে মানাবে না।
প্রভাংশু বলল- মা গায়ের রঙ আজকাল আর ম্যাটার নয়! মেয়েটা ভালো কি মন্দ সেটা দেখার। কারণ ভালোটার সাথে জীবন কাটবে রঙের সাথে নয়!
হালকা ধমক বা জোর খাটানো কণ্ঠে- তুই থাম! সরকারী চাকরি করছিস, তোর জন্য কোথায় একটা ফর্সা রূপসী মেয়ে আনবো ভাবছি! তা.. না….
– কতখানি ফর্সা মানেই কি মেয়ে ভালো? প্রভাংশুর প্রশ্ন।
এসবের মধ্যে বাবা আর সাড়া দিল না ঠোঁট দু’টো মুচকি হাসিতে উজ্জ্বল করে তুললো মজা নেওয়ার ভঙ্গিতে।
-তুই যাই বলিস! প্রিয়ার গায়ের রঙ আর তোর গায়ের রঙ মানাবেই না।
– মা…! পৃথিবীতে সব কি মর্জিমত মানিয়েই হয়? অনেক কিছু মানিয়ে চলতে হয়। এই ধরোনা তোমার আর বাবার কথাই বলি! তোমাকে কি বাবার পাশে মানিয়ে ছিল, সেই চারহাত এক হওয়ার সময়?
বলতে বলতে চায়ের শেষ চুমুকটা দিয়ে প্রভাংশু উঠে গেল। মা কোন সাড়া দিল না বা দিতে পারলো না। আর কিই বা বলবে কথাটা যে আক্ষরিক অর্থে সত্যি তা সে মরমে মরমে টের পেয়েছিল। একবার অংশুর বাবার মুখে নির্লিপ্ত ভাবে চেয়ে নিজেই মাথা নত করে বসে রইল অনেকক্ষণ এবং টেবিলের কাঁচের গ্লাসে নিজেরই প্রতিবিম্বের মধ্যে নতুন করে নিজেকে খোঁজার এক দীর্ঘ প্রয়াস চলতে লাগলো।
অসাধারণ
ধন্যবাদ
সামনে প্রতিবিম্ব থাকে না বলেই মানুষ সমালোচনা প্রবণ হয়ে ওঠে। খুব সুন্দর।
একদম বাস্তব সত্য