ডাক
-শক্তি পুরকাইত
বিপ্লবী অমূল্য প্রামানিকের ফাঁসি হয়ে গেছে। দেবজিতের চোখে তার মুখটা বার বার ভেসে উঠছে।জেলের ভিতর সে ঘুমোতে পারে না। উস্ পাশ করে। এক- এক করে সব কয়েদিরা ঘুমিয়ে পড়েছে। ইস্কুল পড়া ছাত্র সে দিন পিস্তল হাতে নিয়ে ছুটে ছিল ইংরেজ সাহেবকে মারবে বলে। টার্গেট গুলি করা।
প্রথম গুলির শব্দ শুনেছিল সে। তারপর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ল সে ধরা পড়েছে। ব্রিটিশ পুলিশ তাকে টানতে টানতে নিয়ে এসে ছিল। দেবজিৎ জেলের ভিতর থাকতে থাকতে কখন সবার আপনজন হয়ে উঠেছিল, সে নিজেও জানে না। জেলার থেকে কারারক্ষী ওকে খুব ভালবাসে। চারিদিকে ভেসে আসছে দেশ মুক্তির গান। সে চিৎকার করে ওঠে, ব-ন্দে-মা-ত-র-ম্! তার চিৎকার শুনে কারারক্ষী ছুটে আসে। বুঝতে পারে, বিপ্লবীদের সঙ্গে আবার মারপিট বেঁধেছে! দেখে দেবজিতের স্থির চোখ দু’টো জেলের অন্ধকারে মিট মিট করছে। দু’চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে জল। জেলার কাল ওর ছুটি ঘোষণা করে গেছে। দীর্ঘ কয়েক বছর পর কারাবাস থেকে মুক্তি। দেখতে দেখতে কখন সকাল হয়ে গেছে সে জানতে পারেনি। আজ যে তার ছুটি। তাই ছুটির আনন্দটা অন্যরকম। তার সহযোদ্ধারা জিজ্ঞাসা করে, তুই আমাদের ছেড়ে চলে যাবি, তোর সাথে আর কোনদিন দেখা হবে না রে …! সে বলে আগে দেশকে মুক্ত করি, তারপর দেখা হবে ঠিক! সহযোদ্ধাদের চোখে জল দেখে সেও কেঁদে ওঠে। কারারক্ষী গেট খুলে দেয়। জেল থেকে ওর সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে বাইরে আসে। প্রথমে এসে তার নিজের জন্মভূমি গ্রামের মাটিতে পা রাখে। দেখে তার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। কাকারা তাদের সব সম্পত্তি লিখে নিয়েছে। সে কার কাছে গিয়ে উঠবে। ভেবে পায় না। একজন পড়শি বলে ওঠে, ওরে স্বদেশী ডাকাত এসেছে, গ্রাম থেকে তাড়া ওকে! সে বুঝতে পারে বিপ্লবী মানে একজন স্বদেশী ডাকাত। তাই গ্রামের মানুষের কাছে সন্দেহ! বিপ্লবীদের ডাকের অপেক্ষা না করে আবার সে নেমে পড়ে দেশের কাজে।সে উপেক্ষিত মানুষের কাছে স্বদেশী ডাকাত নামে। জোরে একটা গুলির শব্দ শোনা যায়। অন্ধকারে গা ঢাকা দেয় দেবজিৎ। বিপ্লবী নয়, পালিয়ে যাওয়া একটা স্বদেশী ডাকাত।