অণু গল্প

অণু গল্প- লন্ঠন

লন্ঠন
– শক্তি পুরকাইত

 

আঃ আর পারছি না, ছেড়ে দাও! ও এসে পড়বে, ছেড়ে দাও! তখনও অন্ধকার রাতের চাঁদের আলোয় ফর্সা নিটোল স্তনের উপর মুখ দিয়ে রনজয়। এই সুযোগ আর কখনো আসবে না। একুশের যৌবনপ্রবনা শিউলিকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। বুকের একখন্ড শাড়ির আঁচল নৌকার পাঠাতনে পড়ে আছে। ঘুমন্ত শরীর বার বার রনজয়ের হাতের সমস্ত আঙুল স্পর্শ করছিল। নদীর জলে ভেসে থাকা কাঠের নৌকা দু’টি শরীরের দোলনে বার বার দুলে উঠছে। শিউলির মুখের ভিতর ঠোঁট দিয়ে আয়তন মাপছিল সে। সারা শরীর থর থর করে কেঁপে উঠছিল শিউলির। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছিল জল। কিসের জল, সে জানে না। জানতেও চায় না। রনজয়, শিউলির গলার কাছে ঠোঁট বোলায়। একের পর এক সারা শরীরে ঠোঁট রাখে। উরুতে নাভিতে পায়ের পাতায়। কী অদ্ভুত যন্ত্রণা অনুভব করে সে! মাস তিনেক রনজয়, সুকেশের নৌকায় কাজ করছে। শিউলি, সুকেশের বিবাহিত স্ত্রী। শিউলির স্বামীর প্রতি টান না থাকলেও সংসারের গন্ডিতে বাঁধা। মাঝে মাঝে তার মনে হয় এ গন্ডি পেরিয়ে চলে যেতে। কিন্তু কোথায় যাবে! এত বছর বিয়ে হলেও সুকেশ, শিউলিকে খুশি করতে পারে নি। বিয়ের পর থেকে নৌকা- নদী। শিউলির মন কেমন উদাস। এক রত্তি মেয়েটার মুখে হাসি নেই। শিউলি বার বার বলেছিল একটা সন্তানের কথা। সুকেশ উপহার দিতে পারেনি। তাই তার মনে যন্ত্রণা বাসা বেঁধে আছে। পোয়াতি মেয়েদের দেখলে শিউলির হিংসে মা হবার। ভগবান, তার কথা কোনদিন শুনতে পায় না। যে দিন থেকে রনজয়, শিউলিদের নৌকায় কাজ করতে এল, সে দরজার আড়াল থেকে একপলক দেখেছিল সুঠাম শরীর কারগরি কৌশল। সে দিন রনজয়ের চোখের ভাষা পড়ে নিতে শিউলির এতটুকু অসুবিধে হয়নি। এতদিন হয়তো সেই ভাষা পড়ার জন্য অপেক্ষায় ছিল শিউলি। সেই জন্যেই তো ভগবান পাঠিয়েছেন এমন সুপুরুষকে। সবই কপাল! শিউলি রোজ রান্না করে সুকেশ, রনজয়ের জন্যে ভাত নিয়ে যায়। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে রনজয়ের নদীর জলে ভেজা শরীর । মেয়েরা শুধু ভালবাসে নয়, দেখে গোপনে পুরুষের ভেজা শরীরও। সে গোপনে কখন রনজয়কে ভালবেসে ফেলেছিল নিজেও জানে না। আজ এই সুযোগেই দুইজন মিলিত হয়েছে। চাঁদের আলোয় জ্যোৎস্নায় ঘামে ভেজা শিউলির নগ্ন শরীরের ভাষা রনজয় পড়ে নিয়েছে। নৌকার পাঠাতন দুলছে দু’টি শরীরের দোলনে। সাথে সাথে নৌকায় বাঁধা লন্ঠনটাও দুলছে। শ্রাবণের মেঘঘন আকাশ চেয়ে দেখছে পরকীয়া। শিউলি যেন অন্যায় করেছে। সে রনজয়কে বোঝাতে চেষ্টা করে, এ পাপ! ঝিঁ ঝিঁ ডাকা অন্ধকারে সুকেশের কন্ঠস্বর ভেসে আসে। শি – উ – লি! কন্ঠস্বর কানে আসতেই সে ধড়ফড় করে উঠে পড়ে। শাড়ি ঠিক করে নেয়। ভয় জড়ানো চোখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নৌকায় দুলে ওঠা লন্ঠনের দিকে। যেন দু’টো শরীরের ভাষা হয়ে দাঁড়িয়ে লন্ঠনটা।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page