গল্প- গুডটাচ ব্যাডটাচ

গুডটাচ ব্যাডটাচ
-সুজাতা দাস

একটা ভয় আজ কদিন ধরে চেপে বসেছে ঊর্মিকে।ঊর্মিমালা বসু নামটা রাশভারি হলেও, ঊর্মি কিন্তু একটু সোজা সরলতায় ভরা এক মেয়ে।নিজের খেয়ালে নিজের মতো করে থাকতেই সে ভালোবাসে।
হৈ হট্টগোল চিৎকার চেঁচামেচি সে পছন্দ করেনা একে বারেই।তাই খুঁজে খুঁজে নির্জন অথচ নিজে সবাইকে দেখতে পাবে এমন জায়গা খুঁজে বার করে অফটাইম কাটাতো সে। 
কিন্তু সেদিন সে টিফিন টাইমে খেলার মাঠের দিকে না গিয়ে দোতালার দিকের ছোটো ছাদটার দিকে যাচ্ছিল টিফিনের কৌটো আর জলের ফ্লাক্স নিয়ে।ঐ ছাদে যেতে হলে তিনতলার বারান্দা দিয়ে ঘুরে সিড়ি দিয়ে নামতে হয় কয়েক ধাপ।বারান্দার আছে ক্লাস নাইন আর টেনের দিদিদের ক্লাস।
ঐ ছাদটা খুব পছন্দ করে ঊর্মি, মাঝেমাঝে এসে বসে এখানে টিফিন বেলায়।সেদিন যখন ঐ বারান্দা দিয়ে হাঁটছিল ঊর্মি,  তখন সে দুজন মানুষের কথোপকথন শুনতে পেল একটা ঘরের ভেতর থেকে।
একটু একটু করে সে এগিয়ে গেল ঐ ঘরের দিকে।আর অবাক হয়ে দেখলো স্কুলের ড্রয়িং স্যার এক দিদির গায়ে হাত দিচ্ছে আর দিদিটা দুই হাত দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রথমে না বুঝলেও আস্তে আস্তে বুঝতে পারলো সে এটা খারাপ কিছু।কারণ ততদিনে স্কুলে গুডটাচ আর ব্যাডটাচ এর প্রশিক্ষণ পেয়ে গেছে সে।হঠাৎ আস্তে আস্তে সে পিছনে সরে গিয়ে সিঁড়ির ধারে এসে চিৎকার করে পড়ে যাবার অভিনয় করলো।তার চিৎকার শুনে সবাই ছুটে আসতে থাকলো বারান্দায়।
ড্রইং স্যার ও বেরিয়ে এলো ঐ ঘর থেকে ।সবাই ধরাধরি করে ঊর্মি কে টিচার রুমে যখন নিয়ে আসছিল তখন সে দেখলো সেই দিদিটি নিচে নেমে যাচ্ছে সকলের অলক্ষ্যে।এখন সে বোঝে বড় হওয়ার মানে, বোঝে কোনটা ভালো স্পর্শ আর কোনটা খারাপ স্পর্শ।এটা তাদের স্কুলেই শিখিয়েছেন লাবণ্য মিস, কারণ  কয়েক দিন বাদে সে দশ বছরে পড়বে। সে আর বেবি নয় এখন ভাবলো মনে মনে ঊর্মি। সেদিন স্কুল থেকে ফিরে অনেক চেষ্টা করেছিল মাকে সব বলার। কিন্তু একটা ভয় কাজ করেছিল তার মধ্যে কারণ মা হয়তো তাকেই বকবেন এই পাকামির জন্য। কিন্তু মেয়ের অন্যমনস্কতা শিবানীর চোখ এড়ায়নি।
সে বন্ধুর মতো মিশে পুরো ব্যাপারটা জেনে নিল ঊর্মির থেকে।অবাক হয়ে শুনছিলেন সব মেয়ের মুখ থেকে আর ভাবছিলেন এখনও দশ বছর হয়নি ঊর্মির কিন্তু তার উপস্থিতি বুদ্ধির কারণে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হতে হতে বাঁচলো। না মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে নিজেকে বাঁচানোর সাথে সাথে অন্যের জন্যও ভাবলো মনে মনে শিবানী।অমিতকে বলল সে রাতে সব কথা।শিবানী নিজে হেডমিস্ট্রেসের সাথে দেখা করে সবকিছু জানালেন।মেয়েটির সাথে দেখা করলেন নিঃশ্চুপে যাতে কেউ কিছু ঘুণাক্ষরেও টের না পায়।একমাস বাদে আলোলিকা ব্যানার্জি এলেন নতুন ড্রয়িং টিচার হয়ে ঊর্মিদের স্কুলে। তার অনেক আগেই ড্রয়িং টিচার হিমাংশু বিশ্বাস পেয়ে গেছেন ট্রানস্ফার লেটার সুন্দর বনের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। 
আর ঊর্মি ভর্তি হলো ক্যারাটে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে।।

Loading

Leave A Comment