একটি অধ্যায় ও অবশেষ
–রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
অধ্যায়- অবশেষ- বিতর্ক।
অধ্যায়- ৩৭০ ধারা একটি বহু আলোচিত, আলোড়িত অধ্যায় বিগত কয়েক দশকের। এই ধারায়, বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী একটি স্বায়ত্বশাসিত রাজ্য। বিশেষ সুবিধা ভোগী একটি রাজ্য। ভারতের অন্তর্ভুক্তিতে থাকলেও পৃথক সংবিধান, পৃথক পতাকা, পৃথক আইন। পৃথক রাজনৈতিক সমীকরণের সামঝোতা।
অবশেষ- সেও তুমুল সমালোচিত। মাননীয় ঐতিহাসিক, আইনজ্ঞরা তো আছেন এর চুলচেরা বিশ্লেষণের জন্য। ওনাদের বিশ্লেষণ আমাদের তথ্য সমৃদ্ধ করবে। আর আছে বিস্তর রাজনৈতিক চাপান- উতোর। “ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো” সংখ্যায় অবশ্যই বেশী। সংবিধান বিরোধী পন্থা অবলম্বন, ওখানকার নাগরিকদের মতামতের প্রাধান্য, অধিকার খর্ব, নেতা থেকে নৈতিক ব্যক্তিত্ব সবাই কেমন একসুরে গাইলো শুধুমাত্র কি বিরোধীতা করার জন্য? নাহলে এই ধারার অন্তর্ভুক্তি কি সম্পূর্ণ সংবিধান মেনে করেছিলেন আমাদের পূর্বসূরী নেতারা? রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, ‘না’। অন্তর্ভুক্তি যদি প্রকৃত সংবিধান মেনে না হয়, তবে অবশেষে আপত্তি কোথায়? নাগরিক মতামত? অন্তর্ভুক্তির সময় ভারতবাসীর মতামত নেওয়া হয়েছিল? জনসাধারণের প্রদেয় করের অর্থ বিশেষ এবং বেশী করে দিতে কতোটা রাজী তারা? তবে অবশেষে কেন সুবিধা ভোগী রাজ্যের নাগরিক মতামত গুরুত্বপূর্ণ হবে? শুধুই বিরোধীতা করার জন্য? সেই যে বলে, “যার বিয়ে তার হুঁশ নেই- পাড়াপড়শীর ঘুম নেই”, আমাদের পড়শী রাষ্ট্রের ঠিক সেই দশা। ভারত তার নিজের আওতার ভেতরে কি করবে, তা নিয়ে ওনার বা ওনাদের এতো মতামত, এতো গাত্রদাহ, হুঙ্কার, হুমকি, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দরবার! কেন? কিসের জন্য? কোন ক্ষমতা বলে? পড়শী রাষ্ট্রের এই অহেতুক তান্ডবের মধ্যে আমাদের দেশের নেতা, বিরোধী- মনস্ক ব্যক্তিরা আগুন উসকে দেন তাঁদের মন্তব্যের দয়া-দাক্ষিণ্যে। পড়শী দেশের বিতাড়িত নির্যাতিতা নোবেল বিজয়ী খুব সতর্কতার সঙ্গে আবেদন করেন, শান্তি বজায় রাখতে। ঠিক তখনই আমাদের দেশের নোবেল জয়ী বর্ষীয়ান নাগরিক মন্তব্য করেন ‘অবশেষের’ বৈধতা নিয়ে, প্ররোচিত করেন উস্কানিমূলক মন্তব্যে। উনিও কি শান্তির বাণী দিতে পারতেন না? দেন নি- উদ্দেশ্য কি শুধু মাত্র বিরোধীতা? বিরোধীতার জনপ্রিয়তা? “বিভীষণ” এর বদনাম বোধহয় ঘুচবে না কোনোদিন ভারতের ইতিহাসে।
বিতর্ক- থাকবেই। ওটা যে বড়ো প্রিয়। কিছুর প্রয়োজন নেই, সময় হাতে থাকলেই হলো। সংবাদ মাধ্যম, সোস্যাল মাধ্যম তো এই ব্যাপারে সবসময় পৌরহিত্যে প্রস্তুত। জনপ্রিয়তা বোধহয় এদের মূল উদ্দেশ্য, সঠিক সংবাদ পরিবেশন থেকে অনেক দূরে বাস। তাই বিতর্কের জন্ম দিতে থাকুক ওরা ওদের রুজি রোজগারের জন্য। যাঁদের কাজ নেই, তাঁরাও তর্কে মাতুন। বেশ সময় কাটবে। তবুও একবার একটু ভেবে দেখবেন- কাশ্মীর বিশেষ সুবিধা নিয়ে কতোটা ভালো ছিল? ওখানকার সাধারণ নাগরিকদের উন্নতি প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ কোন খাতে ব্যয় হতো? যদি সত্যিই ভালো থাকতো তবে ওখানে সাধারণ জনজীবন কেন ছিল না? ওখানকার কিশোরদের কোন মন্ত্রে দীক্ষা নিতে বাধ্য করা হতো? আর সব থেকে বড় কথা পড়শী দেশের কেন এতো গাত্রদাহ? বিশেষ সুবিধার লোভনীয় ফল ওরা ঘুরপথে ব্যবহার করে আমাদের উদ্দেশ্যেই বিষবৃক্ষ রচনা করতো না তো? তবে তো ভারত- কাশ্মীরে ৩৭০, গড্ডালিকা প্রবাহ! হিতাহিত বিচার করার কোনো দায়িত্ব কি নেই? ভাবলে মন্দ হতো না- কারণ “কাশ্মীর” ভালো ছিল না, আমরা সবাই জানি সে কথা। তাই নতুন পথে হেঁটে দেখতে আপত্তি কোথায়? ভালো না হলে- না হয় আবার আন্দোলনে নামা যাবে। বিরোধীতা সে তো ‘পথের সাথী’ থাকলোই আন্দোলনের দোসর হয়ে। এখন ক্ষণিক বিরতি- ভেবে দেখার।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘আলাপী মন’ ওয়েব ম্যাগাজিনের দ্বিতীয় মুদ্রণ ও প্রথম শারদ সংকলন প্রকাশ অনুষ্ঠান অবনীন্দ্রনাথ সভাঘরে। সাহিত্যিকদের লেখনীতে সমৃদ্ধ হয়েছে ‘বোধন’। সাহিত্য আসরের আলোচনায় অনন্য রূপ নিয়েছিল শারদ অনুষ্ঠান। কৃতজ্ঞ ‘আলাপী মন’ সকলের কাছে।
শুভেচ্ছা, শুভকামনা সবার জন্য। আগামী শুভ হোক।