Site icon আলাপী মন

অণু গল্প – মাছি

অনুগল্প -মাছি
-শক্তি পুরকাইত

 

ঘোষালদের বাড়ি আবার একটা শোকের ছায়া এসে পড়লো। গোটা বাড়ি কান্নায় ভেঙে পড়েছে। ঘোষাল বুড়োর একমাত্র ছেলের ডেড বডিটা সবে এসে নামিয়ে দিয়ে গেল শববাহী কাঁচের গাড়ি। উঠোনে শোয়ানো সদ্য মর্গ থেকে আসা ছেলে সুদীপ ঘোষালের মৃতদেহ। এতদিনের আত্ম অহংকার সব ভেঙে চুরমার করে দিল তার। ছেলেকে নিয়ে এত গর্ব করা বোধহয় ভগবানও সহ্য করতে পারেনি। পোষ্ট মর্টেমের পর গোটা মুখটা শতছিন্ন। প্ল্যাস্টিক কাগজে মোড়া ডেড বডিটা। প্রতিবেশীদেরও চোখে জল বাগ মানতে পারেনি। সবাই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে! মানিক চাঁদ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুদীপ ঘোষাল অল্প দিনে রাজনীতিতে এত দক্ষ হয়ে উঠবে কেউ জানতে পারেনি। তার মত সুবক্তা কলেজে খুবই কম আছে। দুই দলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে হাতাহাতি থেকে বোমা ছোঁড়াছুঁড়ি। পিছন থেকে একটা লাঠি এসে পড়ল সোজা সুদীপের মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে যায়। দু’চোখে অন্ধকার নেমে আসে। সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে। সুদীপকে পড়ে থাকতে দেখে কলেজের অন্যান্য বন্ধুরা ধরে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়। মুখে জল দেয়। যতবার চোখ খুলতে চায় বন্ধ হয়ে আসে.. জ্ঞান আর ফেরে না। বন্ধুরা সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। ততক্ষণে কলেজ একেবারে শান্ত। পুলিশ এসেছিল। তেমন কাউকে ধরতে পারে নি। ডাক্তার সুদীপকে মৃত বলে জানিয়ে দিয়েছে। তার মৃত্যুতে কলেজের বন্ধুরাও কান্নায় ভেঙে পড়েছে। সুদীপের মৃত্যু প্রমাণ করে দিল রাজনীতি শুধু দেশকে শেষ করে দেয় না, অনেক মায়ের কোলও খালি হয়। এ ঠাকুরের কাছে মানত করে, ও ঠাকুরের কাছে মানত করে শেষে যদিও সন্তান দিল তাও কেড়ে নিল। ভগবানের কী নিষ্ঠুর পরিহাস! সাদা কাপড়টা মুখ থেকে সরাতেই ঘোষাল বুড়ো  ‘ও বাবা তুই চলে গেলি’ বলে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। তখনও গাল থেকে গড়িয়ে পড়া গাঢ় রক্তের উপর বসে সমস্ত সম্পত্তির হিসেব- নিকেষ করছে কয়েকটা মাছি আর কিছু নয়। 

Exit mobile version