ডুলুং নদীর তীরে
-সুমিত মোদক
ডুলুং নদীর নাম শুনে থাকবে হয়তো !
শুনে থাকতে পারো জঙ্গলমহলের গল্প !
কিংবা , কনকদূর্গার ইতিবৃত্ত !
আমি শুনি মাদলের শব্দ শাল-মহুয়ার জঙ্গলে ,
রাতের পর রাত , দিনের পর দিন ….
আমি শুনি দলমা পাহাড় থেকে নেমে আসা হাতিদের পদধ্বনি ;
জগরু মুর্মুরের মাটির দাওয়ায় বসে
কাঁচা লঙ্কা , পেঁয়াজ , নুন দিয়ে পান্তা খেতে খেতে দেখেছি
পাথর ভাঙা জীবন , আদিবাসী জীবনাচার ;
যে মানুষ গুলো পাথর খাদানের পাথর ভাঙতে পারে ;
যে মানুষ গুলো মাদলের তালে তালে নাচতে পারে ;
যে মানুষ গুলো রুক্ষ মাটিতে ফসল ফলায় ;
জঙ্গলমহল সংরক্ষণ করে ,
সে মানুষ গুলো অন্তত আমাদের মতো
জটিল হতে পারে না ;
কষতে পারে না জটিল অঙ্ক ;
রাত আর দিন , দিন আর রাতের মতো
সহজ সরল আটপৌরে ধারাপাত ;
আমরা সব কিছু আমাদের মতো করে দেখি ;
আমাদের মতো করে ভাবি ;
আমরা কোন দিন অন্যের মতো করে ভাবতে পারি না ;
সে কারণেই জঙ্গলমহলে কেবল খুঁজে পাই
হাঁড়িয়া-মহুলের ঘ্রাণ , তির-ধনুকে পশু শিকার ,
আর হিংসার প্রতিধ্বনি ;
জগরুদের নিজস্ব এক সংস্কৃতি আছে ;
জঙ্গলের সংস্কৃতি . . .
জঙ্গল সংরক্ষণের সংস্কৃতি ;
যেটা হাজার হাজার বছরের পরম্পরায় ;
সেটা লালিত পালিত করে চলে পুরো জঙ্গলমহল ;
আমরা কেবল ভাঙতে শিখেছি ;
ভাঙছি নিজেদের জীবন-জীবনাচার ,সংস্কৃতি ,
আমাদের হাজার হাজার বছরের পরম্পরা ;
সেটাই নাকি আধুনিকতা !
সেটাই নাকি অগ্রগতি !
এগিয়ে চলার সোপান !
আমরাই তাই দেশ ভেঙেছি ,
ভেঙেছি পরিবার , বিবেক , মনুষত্ব , মানবতা . .
প্রথম সকালে ডুলুং নদীতে পা রাখলেই
ভিতর থেকে উচ্চারিত হয় —– ওম….
আমি , আমার স্ত্রী ও আমার মেয়েকে নিয়ে
এবারের পূজা কদিন ডুলুং নদীর তীরে
শাল-মহুয়ার জঙ্গলে
কনকদূর্গার মন্দিরে ;
এবারের পূজা কদিন জগরুদের গ্রামে ;
আমার একটাই লক্ষ্য
আমার মেয়েকে দেখানো , আমার নতুন প্রজন্মকে দেখানো এবং শেখানো —-
আদিবাসীরা আজও কিভাবে ধরে রেখেছে ,
বাঁচিয়ে রেখেছে জঙ্গলটাকে ,
ভারতবর্ষের হাজার হাজার বছরের পরম্পরায় ।
ক্ষমতায় এসে পণ্ডিতদের জন্য কুম্ভীরাশ্রু বের করা দেশপ্রেমিকরা জঙ্গল বেচে দিয়েছে।