ফেলে এসেছিস যারে
-পারমিতা চ্যাটার্জী
আজ অনেকদিন পর হঠাৎ মধুরা একটি মিষ্টি সুন্দর মেয়েকে দেখতে পেলো, নতুন গানের ক্লাসে ভর্তি হয়েছে নামটিও ভারি মিষ্টি হিয়া। নামটির মধ্যেও যেনো রাবীন্দ্রিক ছোঁয়া লেগে আছে।
খুব ভালো গানের গলার জন্য তাদের গানের গুরু তাকে রবীন্দ্র জয়ন্তীর জন্য বাছাই করে নিয়েছেন, আবার একক সংগীতও দিয়েছেন। মধুরার খুব ইচ্ছে হলো মেয়েটির গান শোনা । মেয়েটির সুন্দর মুখের মধ্যে অদ্ভুত এক দুঃখ মাখানো আছে। মধুরা ভাবলো যেমন করে হোক মেয়েটির সাথে ভাব জমাতে হবে ওর ভেতরে যে একটা গল্প লুকিয়ে আছে তা টেনে বার করে আনতে হবে।
মধুরার যখন বিয়ে হয় তখন সে বাসবের সাথে প্রেমে মগ্ন, বাসব তখন এম এ ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র, আর সে বি এ ফাইনাল সবে দিয়েছে। হঠাৎই শুনলো তাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে, মধুরা তীব্র বিদ্রোহী হয়ে উঠলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়েটাকে আটকাতে পারলোনা।
তার বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পর সে বাসবকে জানায় তার অসহায়তার কথা, বাসব একদম ভেঙে পড়ে বলে, আর একটা বছরও কি অপেক্ষা করা যায়না মধুরা!
মধরা বলেছিল, পারলে কি আমি করতাম না বাসব? আজও যে আমরা বড়ো অসহায় বাসব –
– পারবে আর কাউকে ভালোবাসতে?
– জানিনা বাসব, মেয়েরা সব পারে। সব পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা তাদের মধ্যে আছে ; আমার মা বলছিলেন আমাকে, যখন আমি কেঁদে ভাসাচ্ছিলাম তখন হ্যাঁ ঠিক তখনই স্মৃতির ঝাঁপি উজাড় করে দিলেন। আমায় বললেন – জানিস মা তোর মতন আমিও বিয়ের আগে একজনকে খুব ভালোবেসেছিলাম, কিন্তু বাবার রক্তচক্ষু আর মায়ের কান্নার দাম দিতে বিয়ে করলাম তোর বাবাকে। বিশ্বাস কর, তোর বাবার ভালোবাসার জোর এতটাই তীব্র ছিল যে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল আমার পুরানো প্রেম কে। আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, ” সত্যি ভুলতে পেরেছিলে! বলো না মা সত্যি কি তুমি ভুলতে পেরেছিলে!
মা আঁচলের কোণটা দিয়ে নিজের চোখ দুটো মুছে নিয়ে আমায় বললেন, হ্যাঁ রে পেরেছিলাম বইকি, তোর বাবাতো কোন দোষ করেনি, তাকে আঘাত করে দূরে সরিয়ে রাখলে তো ভালোবাসাকেই অপমান করা হয়, তাই তোর বাবার সহজ সরল ভালোবাসার বন্ধনে আমি ধরা না দিয়ে পারিনি, শুধু তাইনা তাঁকে ভালোবেসেই শ্রদ্ধার সাথেই কাছে টেনে নিয়েছিলাম। শুধু শ্রাবণের কোন বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় বা ফাগুনের কোন বসন্তের বাতাসে একান্তে ছাদে দাঁড়িয়ে রবি ঠাকুরের গান গাই, ” তুই ফেলে এসেছিস যারে মন মন রে আমার “। এটুকু আমার একান্ত গোপন একটা কোণ, থাকনা গোপনে, কারুর তো কিছু ক্ষতি তো হচ্ছেনা।
তুমি অবাক হয়ে আমার কথা শুনে ফোনটা নীরবে নামিয়ে রেখে দিলে, জানি হয়তো মেনে নিতে পারলেনা, কিন্তু বাসব কি করবো বলো, এটাই যে নিয়ম ভালোবাসলে দুঃখ পেতেই হয়।
কয়েকদিন রিহার্সাল চলতে চলতে হিয়ার সাথে বেশ ভাব জমে উঠেছে, একদিন সুযোগ মতন তাকে মধুরা বললো, ” আচ্ছা হিয়া একটা কথা বলবো কিছু মনে করবে না তো!
– না না বলো না, এ মা মনে করবো কেন!
– তোমার মুখের মধ্যে সবসময় একটা যেনো কষ্ট লুকিয়ে থাকে, হাসির মধ্যে যেন কান্না ধরা পরে যায়, আমাকে দিদি ভেবেকি কিছু বলা যেতে পারে, তাহলে হয়তো দুঃখের ভার কিছুটা লাঘব হতে পারে, যা একা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছ, তা যদি একটু অন্যের সাথে ভাগ করে নাও তবে ভার টা কিছুটা হলেও কমবে”।
ম্লান হেসে হিয়া উত্তর দিল – বলতে পারি, কিন্তু আমার দুঃখটা তো আমারই থেকে যাবে! তাও তোমাকে বলবো আমি, কারণ তুমি ঠিকই বলেছ একটু হলেও মনের ভারটা হয়তো কমবে।
এরপর একদিন রিহার্সালের পর দুজনে একটা কফি শপে বসে কথা আরম্ভ করলো। সেদিন হিয়াকে খুব ক্লান্ত আর আনমনা লাগছিল, গরম কফিতে চুমুক দিয়ে বললো – কিভাবে আরম্ভ করবো বুঝতে পারছিনা, –
– মধুরা ওকে সাহস দিয়ে বললো যে ভাবে আরম্ভ করলে তোমার সহজ মনে হয়, সেভাবেই বলো –
– হিয়া একটু দম নিয়ে আসতে আসতে বলতে আরম্ভ করলো, গান নিয়ে রবীন্দ্রভারতী থেকে মাস্টার্স দেওয়ায় পর আমার বিয়ে হয় প্রেসিডেন্সি কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক বাসব সান্যালের সাথে –
– চমকে উঠে মধুরা প্রশ্ন করলো কার সাথে!
– বাসব সান্যাল
– তারপর
– তারপর ফুলশয্যার দিন তিনি আমাকে বলেন,
” দেখো হিয়া বাবা মায়ের চাপাচাপিতে তোমাকে বিয়ে করে আমি তোমার প্রতি অত্যন্ত অবিচার করেছি স্বীকার করছি কিন্তু আমার কিছু করার ছিলোনা, আমি তোমার প্রতি সব কর্তব্য পালন করবো কিন্তু স্ত্রীর মর্যাদা বা ভালোবাসা দিতে পারবনা, আমার মনে আর একজন বসে আছে যাকে আমি চেষ্টা করেও ভুলতে পারিনি। এ জীবন মেনে নেওয়া কারোর পক্ষে সম্ভব নয় জানি, একটা বছর কাটাও তারপর তুমি যেদিন মুক্তি চাইবে আমি দিয়ে দেবো “।
– তুমি কি বললে -!
– আমি ফুলশয্যার রাতে এমন একটা কথা শোনার জন্য সত্যি প্রস্তুত ছিলাম না, প্রথমটা থতমত খেয়ে গেলাম তারপর আসতে আসতে বললাম, ” আমাদের সমাজে বিয়েটাও খেলা নয়, জীবনটাও খেলা নয়, এরকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, ” বলে আমার বালিশ আর চাদর নিয়ে মাটিতে শুয়ে পরলাম, তিনি আমায় বললেন – মাটিতে নয় প্লিজ তুমি খাটি এসে শুয়ে পর, তা নইলে আমার নিজেকে আরও ছোট মনে হবে “।
– তারপর!
– তারপর আর কি একবছরের জায়গায় দুবছর চলে গেলো, কিন্তু পরিস্থিতির কোন বদল হয়নি, শুধু –
– শুধু!
– মাটিতে শোওয়া থেকে খাট অবধি গেছে,, সেটাও উনার জোরাজোরির জন্যে কিন্তু দুজনের মাঝে একটা অদৃশ্য প্রাচীর থাকে সেটা ভাঙতে পারিনি –
– বাসব মানে তোমার স্বামী জানে যে তুমি এতো ভালো গান কর!
– না জানার প্রয়োজন হয়নি, আমার হাতের রান্না বা চা করে এনে দিলে প্রশংসা সূচক ভাবে তাকিয়ে বলে খুব ভালো হয়েছে, কোথাও সেজেগুজে বার হলে এই কিছুদিন হল বলতে শুরু করেছে, খুব সুন্দর লাগছে, সেদিন বলল, মাথায় একটা জুঁই ফুলের মালা দিলে আরও ভালো হত, এনে দেবো?
– তুমি কি বললে!
– আমি বললাম – না, আমি ফুলের মালা কেনার কথা আমিও ভেবেছিলাম, কিন্তু কেনা হয়নি, যাবার পথে কিনে লাগিয়ে নেবো, উনি দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন – আমি আসছি বলে বেরিয়ে এলাম।
– এই যে দু বছর কাটালে, তারমধ্যে একদিনও কাছে আসার চেষ্টা করেনি!
– না, তবে একসপ্তাহ আগে শুতে এসে আমার হাতটা ধরেছিলেন নিজের হাতে কিছুক্ষণের জন্য তারপর আসতে আসতে ছেড়ে দিলেন। আমি বুঝতে পারছি দিদি উনি নিজের সাথে ক্রমাগত যুদ্ধ করে চলেছেন কিন্তু পারছেননা, আর আমিও যে মানুষটাকে বড়ো ভালোবেসে ফেলেছি দিদি, মানুষটা যে বড়ো ভালো তাই আমিও বেরিয়ে এসে তাকে মুক্তি দিতে পারছিনা -।
মধুরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো – কিছু মনে কোর না, তোমার অনেক ব্যাক্তিগত কথা জিজ্ঞেস করে ফেললাম, দেখি আমি কিছু করতে পারি কি না!
– তুমি! তুমি কি করবে দিদি! তুমি তো তাকে চেনোই না –
– দেখি মনে হয় কিছু করতে পারবো। ঠিক আছে চল আজ ওঠা যাক, মেঘ করেছে বৃষ্টি নামলো বলে।
মধুরা বাড়ির পথ ধরলো, গাড়িতে যেতে যেতে ভাবলো, ” বাসব কি করে এতো অমানবিক হতে পারে! যা পাবার নয় তারজন্য যা পেয়েছে তাকে নিতে পারছেনা! কি করে একটা শিক্ষিত মানুষ এতোটা অবুঝ হতে পারে! নাঃ আজই বাসবকে ফোন করতে হবে, ওর পুরানো নাম্বার টা এখনও আছে নিশ্চয়ই! না থাকলে ওর কলেজে গিয়ে দেখা করবে।
ফোনে রিং হতেই তার চিন্তার তার ছিঁড়ে গেলো – প্রবাল ফোন করছে, তার স্বামী প্রবাল।
– হ্যাঁ প্রবাল বল –
– তুমি কি বাড়ি আসছ না দেরি আছে এখনও?
– না না এইতো এসে গেছি প্রায়,
– ঠিক আছে, চলে এসে তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে!
– ও তাইনাকি! এখনি আসছি —-।
মধুরা তাও যাওয়ার পথে লেক মার্কেটে নেমে প্রবাহের পছন্দের একগোছা হলুদ গোলাপ আর কিছু ভালো মিষ্টি কিনে বাড়িতে ঢুকলো।
হিয়াও আজ যখন বাড়িতে ঢুকলো তখন তার শাশুড়ি মা তাকে বললো – আজ এতো দেরি হলো যে! বাসব তোর জন্য অনেকক্ষণ ঘরে অপেক্ষা করছে, তুই যা আমি তোর জন্য একটু চা খাবার নিয়ে আসি –।
তার শাশুড়ি মা প্রতিভা দেবী মানুষটা খুবই আধুনিক মনের, ছেলে বউমার মাঝে যে একটা দেওয়াল আছে তা তিনি বুঝতে পারেন, ছেলের ওপর খুব অভিমান হয়, মেয়েটাকে এভাবে অবহেলা করে, এটা কি তার প্রাপ্য ছিলো! নিজের ওপর রাগ হয়, কেনো বিয়ে দিতে গেলাম, শুধু শুধু তাদের জন্য একটা মেয়েকে বেদনার ভার বহন করে চলতে হচ্ছে — তবে ইদানিং লক্ষ করছেন ছেলে যেনো একটু একটু বদলাচ্ছে — বদলালেই ভালো –।
প্রতিভা দেবীকে তাড়াতাড়ি ধরে ফেলে বলে – না মা আজ আমার গানের ক্লাসের এক দিদির সাথে একটু কফি খেতে গিয়েছিলাম, এই নাও তোমার পছন্দের কেক এনেছি –
– কোথায় দে,
– এই যে নাও -। প্রতিভা দেবী খুব ভালোবাসেন মেয়েটিকে – বাসবের বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি মাছ মাংস খেতেননা, ছেলেও বহুবার চেষ্টা করে বিফল হয়েছে, তার ননদরা বলেছিল, ” আদিখ্যেতা করিস না তো বাসব, হিঁদুর ঘরের বিধবা কি মাছ মাংস খেতে পারে না কি!
কিন্তু হিয়ার যুক্তির কাছে তিনি হার মানতে বাধ্য হয়েছিলেন, হিয়া বলেছিল, ” মা কি প্রমাণ হয় তুমি আমিষ খেলে আমায় বল তো? বাবাকে কতোটা ভালোবাসতে তা কি এই দিয়ে প্রমাণ করা যায়! আজ যদি তোমার কোন হাড়ের অসুখে তুমি শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে থাকো, তখন এরা কি তোমাকে সেবা করতে আসবে? শুধু মুখে সহানুভূতি দেখিয়ে বলে যাবে, ” আহা কি মানুষের কি অবস্থা হল “। হিয়ার বলার ধরনে প্রতিভা দেবী হেসে ফেলেন, বলেন- উফ্ তোকে নিয়ে আর পারিনা, দিস তবে কাল থেকে – সেই থেকে তার মাছ মাংস খাওয়া শুরু -। বাসবও খুব খুশি হয়েছিল সেদিন, তার চোখের মুগ্ধতা সেদিন প্রতিভা দেবীর দৃষ্টি এড়ায়নি ।
হিয়া ঘরে ঢুকতেই বাসব বলে উঠলো – কি হল এতো দেরি? আমি তো আর একটু হলে খুঁজতে বার হচ্ছিলাম,
হিয়া ম্লান হেসে উত্তর দিল – আমাকে খুঁজতে বার হবে, কেনো?
– কেনো আবার কি! বাড়িতে তো একটা খবর দিতে হয়, বাড়ির লোকগুলো চিন্তা করতে পারে, এই বোধটা থাকা উচিৎ –
– হিয়া চমকে বাসবের দিকে তাকালো, তার চোখে মুখে উদ্বেগর চিহ্ন তখনও ফুটে আছে –
হিয়া নিজেকে সামলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল – ভুল হয়ে গেছে, মাকে জানানো উচিৎ ছিলো –
– ও মা ছাড়া বাড়িতে আর কেউ থাকেনা বুঝি! আর কারুর চিন্তা হয়না বুঝি -?
– হয় বুঝি! জানতামনা তো!
– তুমি তো অনেক কিছুই জানোনা – ঠিক আছে ক্লান্ত হয়ে এসেছ এখন একটু চা টা খাও, পরে যত ইচ্ছে ঝগড়া কোর –
– ঝগড়া? ঝগড়া কেনো করবো? তোমার সাথে কি আমার ঝগড়া করার সম্পর্ক না কি?
এই বলে সে কলঘরের দিকে চলে গেলো।
বাসব নিশ্বাস ফেলে চুপ করে বসলো – পরীক্ষার খাতা এসে জমা হয়েছে, এখনও দেখে উঠতে পারেনি – মনটা খুব চঞ্চল লাগছে, কিছু ভালো লাগছেনা, এমন সময় হিয়া ঢুকলো চা আর কেক নিয়ে, সদ্যস্নাত হিয়াকে খুব সুন্দর লাগছে, বাসবের মনটা হঠাৎ ভরে উঠলো, একবার মনে হলো,হিয়া কি তাকে ভালোবেসেছে! তাই কি সে যেতে পারছেনা! আজ বাসবের মনে হল, হিয়া যদি এখন সত্যি চলে যাবার কথা বলে তাহলে তার খুব কষ্ট হবে, সে হয়তো বলবে, ” না হিয়া এখন আর তোমাকে ছাড়তে পারবনা, সেদিনের বাসব আর আজকের বাসবের মধ্যে অনেক বদল হয়ে গেছে, তুমি বুঝেও না বোঝার ভাণ করে দূরে সরে থাকো, হয়তো প্রচণ্ড অভিমানে,তোমার অভিমান আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে সব মুছে দেবো, আজ আর তোমাকে ছাড়তে পারবনা”। নিজের অজান্তে তার মনটাও হিয়ার কাছে চলে এসেছে, খুব ইচ্ছা করছিল কাছে গিয়ে ওর সুন্দর মুখটা নিজের দু’হাতের তালুতে তুলে নিতে, কাছে গিয়ে শুধু বললো, খুউব স্নিগ্ধ আর সুন্দর লাগছে তোমাকে। বাসবের কথায় হিয়া লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিয়ে শুধু বললো, চা টা ঠান্ডা হয়ে যাবে, বাসব আর কিছু না বলে ওর হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে নিল।
হঠাৎ কলেজ থেকে বেরিয়ে মধুরাকে দেখে বাসব চমকে গেলো! তুমি —-?
– হ্যাঁ আমি, তোমার সাথে কথা আছে অনেক, কফিহাউসে গিয়ে বসতে পারবে একবার?
– কিছু হয়েছে? তুমি ভালো আছো তো?
– হ্যাঁ বাসব আমি খুব ভালো আছি, আজ আমি তোমার আমার জন্য তোমার কাছে আসিনি –
– তবে!
– চলো বসি তারপর বলছি -।
ওরা দুজনে কফি হাউসে বসে পুরানো দিনের মতন কফি আর কবিরাজি কাটলেট ওর্ডার দিল।
খাবার আসলে পরে বাসব বললো – উফ্ কতদিন পর আবার কবিরাজি কাটলেট খাচ্ছি, তুমি চলে যাবার পর কফি হাউসে আর ঢুকিনি – ” পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায় ও সেই চোখের দেখা প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায় ” –
– কিন্তু পুরানো কে যে ভুলতে হয় বাসব, আমি কিন্তু আমার বর্তমান জীবন নিয়ে খুব সুখী, আমার স্বামী এতোটাই উদার আর প্রেমিক মানুষ যে ওকে ভালো না বেসে থাকা যায়না কিন্তু তাইবলে তোমাকে কি ভুলে গেছি! না একদম না, তুমি ঠিক মনের এককোণে আমার গোপন অন্তরে থেকে গেছো এক বন্ধু হয়ে, তুমি কেনো পারলেনা? অতীত কে আঁকড়ে ধরে বর্তমান কে অস্বীকার করে একটা নিষ্পাপ মেয়েকে কাঁদিয়ে যাচ্ছ? এ অধিকার কি তোমার আছে?
– তুমি মানে, তুমি এতো কথা জানলে কি করে!
– জানলাম কারণ আমার সাথেই হিয়া গান করে গুরু সুরঞ্জন রায়ের কাছে, তুমি জানো ওর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে উনি হিয়াকে এবারের ফাংশনে একা গানের সুযোগ দিয়েছেন, যা আমি এখনও পাইনি, কোনদিন খবর রাখো ওর এই প্রতিভার কথা?
বাসব অবাক হয়ে বললো তাই! আমি তো কোনদিন ওকে বাড়িতে গান গাইতে শুনিনি, মায়ের কাছে শুনেছিলাম ও গান শিখতে যায় এই পর্যন্ত ব্যাস আর কিছু তো জানিনা –
– জানার চেষ্টা কর নি তাই জানোনা, তুমি জানোনা ও তোমাকে কতোটা ভালোবাসে! ওর দুঃখ ভরা চোখ দুটো দেখে কেনো জানিনা আমার মনে হত ওর ভেতর অনেক জমা ব্যাথা আছে, প্রেম পর্যায়ের গান করার সময় এতো তন্ময় হয়ে গায় যে ওর দুচোখ দিয়ে জলের ধারা গড়িয়ে পরে।
আমি ওর সাথে ভাব করে ওর অনেক কাছের একজন হয়ে যাই, ও আমাকে দিদি বলে ডাকে, সেদিন ওকে কফি খাওয়ানোর নাম করে ডেকে নিয়ে গিয়ে অনেক ভুলিয়ে ওর মনের কথা জানি, ওর মুখে জানতে পারি তুমি ওর সেই হতভাগ্য স্বামী যে এমন ভালোবাসার মর্যাদা দিতেই পারেনি। খুব রাগ হল তোমার ওপর, তুমি যে এতোটাই মেরুদণ্ডহীন কোনদিন ভাবিনি।
বাসব নিঃশব্দে ওর সব কথা শুনে গেলো, শুধু বললো আমার খুব উপকার করলে, একেই বলে সত্যিকারের বন্ধু, যে ভাঙেনা বরং গড়তে সাহায্য করে, তুমি দেখো আমি সব ঠিক করে নেবো। যেদিন হিয়াকে আমি আমার কথা বলেছিলাম, সেদিনের আমি আর আজকের আমি এক নই মধু, আমিও ওকে ভালোবাসি খুব ভালোবাসি, কিন্তু বলতে চেয়েও অনেকবার বলতে পারিনি তবে আজ আমি বলবোই।
বাড়ির পথে যেতে যেতে মধুরার মনটা বেশ হালকা লাগছিল, সেদিন প্রবাল ডেকেছিল ওকে সারপ্রাইজ আছে বলে, গিয়ে দেখে একটা বড়ো সুন্দর কেকের ওপর অনেক মোম জ্বালিয়ে আর হলুদ সবুজ গোলাপের ফোয়ারায় এক মোহময় পরিবেশে ঘর সাজিয়েছে ও নিজে আর দুই ছেলেমেয়ে তিতিল আর তাতার মিলে, ঘরে ঢুকতেই কুচো দুটো ওকে জড়িয়ে ধরে চিত্কার করে উঠলো, ” হ্যাপি বার্থডে মাম্মা “। ও সত্যি তো আজ তো ওর জন্মদিন, রিহার্সালের চাপে নিজের জন্মদিন টা নিজেই ভুলে গিয়েছিল, কিন্তু যার মনে রাখার সে ঠিক মনে রেখেছে, বাচ্চাদের আদর করে প্রবালের দিকে তাকালো, প্রবাল সলজ্জ মুখে এগিয়ে এসে ওর গায়ে লাল সাদা কাজ করা সুন্দর ঢাকাই শাড়ি এনে গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলল– শুভ জন্মদিন। সেদিন এক ভিষণ আবেগে প্রবালকে জড়িয়ে ধরে মধুরা বলে উঠেছিল, ” তোমার মতন স্বামী যেনো মেয়েরা জন্ম জন্ম ধরে পায়,”। প্রবাল ওর মুখটা তুলে ধরে বলেছিল, চল কেকটা কাটি, বাচ্চারা তো অপেক্ষা করছে কখন থেকে কেক খাবে বলে।
সে কথাটা যেতে যেতে আজ মনে হলো, স্মৃতি আঁকড়ে যদি সে পড়ে থাকতো তবে প্রবালের প্রতি এক নিদারুণ অবিচার হতো, এখন সত্যি বলতে কি প্রবাল তার জীবনের প্রতি মুহূর্তের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে গেছে, সেখানে বাসব আছে ফেলে আসা এক স্মৃতির মাঝে, যে হঠাৎ জীবনে উঁকি দিয়ে আবার মিলিয়ে যায়। গুণ গুণ করে গান গাইতে গাইতে মধুরা বাড়ির দিকে যেতে লাগলো,” ” তুই ফেলে এসেছিস যারে মন মন রে আমার, “।
আর দুদিন পর ফাংশন, প্রতিভা দেবী হিয়াকে বললেন, হ্যাঁ রে আজ তোর রিহার্সাল নেই?
– না মা, কাল একেবারে স্টেজ রিহার্সাল
– ও তুই তাহলে নিজেই একটু প্র্যাকটিস কর, আমি কমলাকে বলছি তোকে একটু আদা দিয়ে চা করে দিয়ে যাবে, গলাটা ঠিক থাকবে।
প্রতিভা দেবী যাবার জন্য পা বাড়িয়েছেন হঠাৎ হিয়ার মা ডাকে চমকে ফিরে তাকালেন, দেখলেন হিয়া সজল চোখে তার দিকে চেয়ে আছে, কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, কি রে! কিছু বলবি!
– মা আমার জন্য তুমি খুব ভাবো না? যাবে তো আমার ফাংশনের দিন?
– নিশ্চয়ই যাবো মা, আমার মেয়েটা গান গাইবে আর আমি যাবো না! তা কি হয়?
হঠাৎ আবেগে শাশুড়ীমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে
আকুল কান্নায় ভেঙে পরে হিয়া।
হিয়ার পিঠে নীরবে স্নেহের হাত বুলিয়ে ওর চোখ মুছিয়ে দিলেন, তারপর বললেন দাঁড়া – আমি আসছি।
একটু পরে ঘরে ঢুকে রবীন্দ্রনাথের ছবি ওর টেবিলে রেখে তার সামনে একটা ছোট কাঁসার রেকাবে কিছু জুঁই ফুল রেখে দিলেন, তারপর হিয়ার মুখটা নিজের আঁচল দিয়ে ভালো করে মুছিয়ে একটু পাউডারের প্রলেপ দিয়ে একটা বড়ো লাল টিপ কপালে লাগিয়ে দিলেন। ওর এলোমেলো চুলগুলোকে গুছিয়ে একটা হাত খোঁপা বেঁধে দিয়ে বললেন, এবার গান কর, দেখ তোর মনটা অনেক ভালো লাগবে, হিয়া সজল চোখে শাশুড়ী মায়ের দিকে তাকালো, প্রতিভা দেবী কড়া সুরে বললেন, না আর একদম কান্না নায়, কাল স্টেজ রিহার্সাল না! গানে মন দে, আমি চা নিয়ে আসছি।
আজ হিয়ার মনটা সত্যি খুব খারাপ লাগছে, এই শ্রাবণেই তাদের বিয়ে হয়েছিল, এখন আবার সেই শ্রাবণ, বাইরে তাকিয়ে দেখলো শ্রাবণের আকাশ মেঘে মেঘে ভার, সে গান আরম্ভ করলো, ” আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে, কি এনেছিস! “।
মধুরা চলে যাবার পর বাসব একাই বসেছিল কফি হাউসে, আকাশের মুখ ভার এখুনি হয়তো বৃষ্টি নামবে, নামুক আজ অনেক বৃষ্টি নামুক, আজ হিয়ার কাছে যেতে সত্যি খুব ইচ্ছে করছে, মধুরার কাছ থেকে শোনার পর যে হিয়া তাকে বলেছে সে বাসবকে ভালোবেসে ফেলেছে, তাই বাসবকে ছেড়ে যেতে পারছেনা অথচ বাসব একটা আহাম্মক সে কিছুই বুঝতে পারেনা।
মনে মনে একটা ছবি আঁকতে লাগলো কি ভাবে আজ হিয়ার কাছে নিজেকে প্রকাশ করবে।
আর এক কাপ কফির অর্ডার দিয়ে নিজেকে একটু গুছিয়ে নিল।আগে কলেজে পড়ার সময় নিজে গান লিখে তাতে সুর দিয়ে গাওয়া খুব অভ্যাস ছিল, তার এই গান শুনেই মধুরা তার কাছে আসে, আজও হয়তো থেকে যাবে মনের এককোণে, হয়তো পুরোপুরি ভুলতে পারবেনা কিন্তু আজ সে হিয়াকে খুব ভালোবাসে এবং প্রতিদিন একটু একটু করে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা সে অন্তর দিয়ে অনুভব করে।
সেই পুরানো গান লেখার অভ্যাস নিয়ে হিয়াকে আজ শোনাবে বলে একটা গান লিখতে চেষ্টা করল, আর আশ্চর্য এতদিন আগের অভ্যাস একটা লাইন লিখতেই পরপর লাইন গুলো যেনো মনের দরজা খুলে হু হু করে ঢুকে পড়লো। কফি আর সিগারেট ধ্বংস করতে করতে গানের সুরটাও দিয়ে ফেললো। মনে মনে ঠিক করলো আজ হিয়াকে ডেকে পাশে বসিয়ে এই গানটা শুনিয়ে বলবে, গানটা শুধু তোমার জন্যেই লিখেছি শুধু তোমার জন্যে।
তোমার আমার স্বপ্নের বালুচরে
বারে বারে আমি তোমাকে ফিরেছি খুঁজে,
বুঝতে পারিনি জানলার কোণে
নীরবে কখন ছায়া ফেলে গেছ তুমি।
পেয়েও কেনো যে যেতে পারিনি কাছে
অপরাধী মন ছায়ায় ছিলো যে ঢাকা,
তাই পাইনি দেখতে তোমার চোখে আমার ভালোবাসা।
বিরহের ভারে হয়েছি ক্লান্ত তুমি আমি দুজনে
ভালোবাসি তোমায় তবুও পারিনি বলতে
অকারণ রাত কেটে গেছে বেদনায়,
তবুও পারিনি কাছে ডাকতে।
আজ হঠাৎ এমন বাদল সন্ধ্যায়
সব বাধা ঠেলে নিলাম তোমায়
আমার ভালোবাসা বন্ধনে,
সব অভিমান তোমার
আমি ভেঙে দেব আজ
এই শ্রাবণ সন্ধ্যায়
আজ এই শ্রাবণ সন্ধ্যায়,
তুমি আর ঠেলে দিয়োনা
আমায় দূরে,
সব পথ ভুলে আমি এসেছি
চলে,
শুধু তোমারই কাছে, শুধু তোমারই কাছে।।
গান লেখার পর সে তাড়াতাড়ি বাড়ির পথ ধরলো, যেতে যেতে তার প্রিয় ফুলের দোকান থেকে একগোছা লাল টুকটুকে গোলাপ কিনলো।
বাড়িতে ঢুকতেই হিয়ার গান ভেসে এলো কানে, ” আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে ” কি অপূর্ব গলা, সমস্ত প্রাণ নিংড়ে যেনো গানটা গাইছে হিয়া, বাসবের মনে পড়লো এরকমই এক শ্রাবণ সন্ধ্যায় হিয়া তার জীবনে এসেছিল, তাই কি আজ হিয়া এই গানটা গাইছে! সে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে চুপ করে গানটা শুনতে লাগলো। প্রতিভা দেবী চা নিয়ে আসতে গিয়ে দেখলেন বাসব তন্ময় হয়ে গান শুনছে তিনি আসতে আসতে সেখান থেকে চলে গেলেন, ঠাকুরের কাছে গিয়ে প্রার্থনা জানালেন, ” আজ যেনো এই মেয়েটার নীরব ভালোবাসাকে আমার অবুঝ ছেলেটা বুঝতে পারে “।
গান শেষ হবার পর দরজা ঠেলে বাসব আসতে আসতে দরজা খুলে ঢুকে দেখলো হিয়া হারমোনিয়াম ছেড়ে উঠে আসতে আসতে জানলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো, আকাশের জমা মেঘগুলো এখন বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে। সে পেছন থেকে গিয়ে হিয়াকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে ফেরালো, দেখলো হিয়ার দুচোখে জলের ধারা, সে নিজের হাত দিয়ে তার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বললো, আর কতদিন আমায় দূরে সরিয়ে রাখবে, আমি যে আরও পারছিনা হিয়া –
– আমি তো তোমাকে দূর সরিয়ে রাখতে চাইনি—
– বাসব হিয়ার ঠোঁটে নিজের আঙুল টা চেপে বলল, জানি সবই আমার মূঢ়তা, তবে সেদিন বাসবের যে মন ছিল আজ সেই বাসবের মনে অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে, সেদিনের বাসব আর আজকের বাসবের মধ্যে অনেক তফাৎ। আজ আমি তোমার জন্য একটা গান লিখে এনেছি শুনবে?
– হিয়া নীরবে ঘাড় নাড়লো।
বাসব আরম্ভ করলো তার আজকের লেখা গান গাইতে, ” তোমার আমার স্বপ্নের বালুচরে, বারে বারে আমি তোমাকে ফিরেছি খুঁজে, “
বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি, জানলা দিয়ে ছাঁট আসছে ওরা ভিজে যাচ্ছে দুজনে দুজনের ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে। প্রতিভা দেবী চা দিতে এসে ওদের দেখে আসতে আসতে ফিরে গেলেন, ঠাকুরের কাছে গিয়ে বললেন, ” তুমি শুনেছ ঠাকুর, আমার প্রার্থনা বিফল যায়নি, আজ আমার অবুঝ ছেলেটা, আমার মেয়েটাকে তার ভালোবাসার মর্যাদা ফিরিয়ে দিচ্ছে, এর চেয়ে আনন্দ আর কি হতে পারে ! এইভাবেই ওদের রেখো ঠাকুর এইভাবেই ওদের রেখো।
হ্যাঁ ঠাকুর প্রতিভা দেবীর কথা শুনেছেন, একবছরের মাথায় হিয়ার কোল আলো করে একটি সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে হেসে ওঠে। কালিপুজার দিন জন্মেছে বলে বাসব ওর নাম রাখে দীপালিকা। অন্নপ্রাশনের দিন হিয়ার কোলে দিয়াকে দিয়ে (দীপালিকার বাড়ির নাম) ছবি তুলবার সময় হিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বাসব বলে, যাই বল দিয়া কিন্তু আমার হিয়ার মতন ফুটফুটে সুন্দর হয়নি ” ও কিছুটা ওর বাবার মতন হয়েছে,
হিয়া হেসে বলে, বাবা বুঝি শুনতে চাইছে যে বাবা কত সুন্দর!
বাসব হেসে বলে, খুব কথা শিখেছ দেখছি আজকাল, দাঁড়াও হচ্ছে তোমার।
প্রতিভা দেবী নাতনী কোলে নিয়ে এক মুখ হেসে ছবি তোলেন, বলেন আমার মা লক্ষ্মী এসেছে।
মধুরা চোখে আনন্দ অশ্রু নিয়ে ওদের দেখছিল, আজ ওর সাথে প্রবাল আর তিতিল, তাতারও এসেছিল, হিয়া এগিয়ে গিয়ে মধুরার হাত ধরে টেনে এনে ওর কোলে বাচ্চা দিয়ে দুপাশে বাসব আর ও নিজে দাঁড়িয়ে ছবি তুললো। হিয়া মধুরাকে বললো, তোমার জন্যে সব হল দিদি –
– না রে বাসবের মনে ভালোবাসায় ভরে গিয়েছিল তোর জন্যে কিন্তু তোর ভেতরের কথাটা জানতে পারছিলনা বলে এগিয়ে আসতে পারছিলোনা শুধু কষ্ট পেয়ে যাচ্ছিল, আমি শুধু তোর মনের কথাটা ওকে জানিয়ে দিয়েছিলাম, ব্যাস আর কিছু নয়।
বাসব একটু আড়ালে মধুরাকে ডেকে বললো, এ কথাটা আজ আমি স্বীকার করলাম মধু যে সত্যিকারের বন্ধু ভাঙেনা বরং গড়তে শেখায়।
বাড়ি ফেরার সময় মধুরা জানলার দিকে চেয়ে নিজের মনেই আবার সেই রবীন্দ্রনাথের গানটা গুণগুণ করতে লাগলো, ” তুই ফেলে এসেছিস যারে, মন মন রে আমার, “।।