বোন
– শক্তি পুরকাইত
জানলার আড়াল থেকে সেদিন শ্রুতি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছিল হাতে তালি দেওয়া। পাশের বাড়ির হরিপদ মন্ডলের ছেলেকে নাচাতে এসে সেই প্রথম দেখল ঢোল বাজিয়ে কেমন করে নাচতে হয়। গান গাইতে হয়। সে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল মাসিদের রং ঢং দেখবে বলে। চোখে চোখ পড়তে ওর খবর নিয়ে যায়, ‘মেয়েটা কাদের বাড়ির!’ সে এক ছুটে ঘরে গিয়ে দরজায় খিল দিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে সারাটা রাত কেঁদেছিল। ইস্কুলে গেলে বন্ধুরাও রাগায় ‘মদ্দালি মেয়ে বলে ডাকে’। সেই থেকে ইস্কুলে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ। লজ্জায় আর ইস্কুলে গেল না। পাড়ায় বাইরে বের হলে লোকে বলে ‘মুখ দেখাস না, কাজটা শুভ হবে না..’ এখন সে হাতে তালি দিতে পারে। ঢোল বাজিয়ে নাচতে পারে। গান গাইতে পারে। কোন কিছু অসুবিধা হয় না, তার। এই কয়েক মাসে কমলামাসি, গোপামাসিদের কাছে রপ্ত করে নিয়েছে। জানলার কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী সব ভাবছিল, সে কোনদিনও মা হতে পারবে না। স্বামীর সংসার করতে পারবে না। আজ ভাইফোঁটা ঘরে ঘরে বাজছে শাঁখ। বোনেরা, তাদের দাদাদের ফোঁটা দিচ্ছে ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা’ বোন হয়ে সে কোনোদিনের জন্য দাদাকে আর ফোঁটা দিতে যেতে পারবে না। কমলামাসির কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে সম্বিত ফেরে শ্রুতির। সে সঙ্গে সঙ্গে চোখ মুছে নেয়। কমলামাসি বলে ওঠে, ‘মাগি, লোকে কী বলবে জানিস না, হিজরে হতে গেলে মাঝের মধ্যে একটু- আধটু কাপড়ও তুলতে হয়’ অরিন্দমের বোন সারাটা জীবন হিজরে হয়ে সমাজে বেঁচে থাকবে। কমলামাসি, গোপামাসিদের সঙ্গে গ্রামের পর গ্রাম পেরিয়ে হেঁকে বলে যাবে, ‘ও দিদি তোমাদের ছেলে হল না, মেয়ে হল গো …’ !