প্রেমিক পুরুষ
– সুমিত মোদক
সোনাঝুরির হাট ভেঙে গেছে অনেক আগেই;
এখন জ্যোৎস্নার আলো গাছগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে
ছড়িয়ে পড়ছে রাঙ্গামাটিতে;
রাঙামাটি চিকচিক করে ওঠে;
চিকচিক করে ওঠে আমার ভিতর ও বাহির;
অনেকক্ষণ আগে সাঁওতাল রমণীরা ফিরে গেছে;
ফিরে গেছে সাঁওতাল পুরুষেরাও;
অথচ, তাদের মাদলের শব্দ, নূপুরের ছন্দ
এখনও বাতাসে বাতাসে,
গাছের পাতায় পাতায় সেই মাদকতায়;
জ্যোৎস্নার আলো মাখতে মাখতে কখন যে
সোনাঝুরির হাট হয়ে গেছি নিজেও জানি না!
জানি না, কখন যে রাঙামাটির ধুলো হয়ে
ছুঁয়ে থাকি বীরভূমের উদাস বাউল!
শান্তিনিকেতনের সপ্তপর্নী!
আমার সকল স্নায়ু, সকল কোষ, রক্ত প্রবাহ
একতারায় সুর তোলে;
এক সময় পায়ের শব্দে ঘোর কাটে ;
এই মাঝ রাতে কে বা আসতে পারে এখানে!
পিছন ফিরে তাকাতে
দেখি, রাধারানী দেবীর হাত ধরে হেঁটে আসছে
আমার প্রিয় ভাস্কর, হৃদয়ের জন
রামকিঙ্কর বেইজ!
কৌতূহল সামলাতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলাম…
– এতো রাতে এ ভাবে?
– আমিও যে তোমার মতো খুঁজছি;
খুঁজছি আমাকে, আমার আমি কে
এই জ্যোৎস্না রাতে, এই সোনাঝুরির হাটে;
কদিন ধরে একটা ভাবনা মাথার মধ্যে তালগোল পাকাচ্ছে;
কদিন ধরেই ঘুমাতেও পাচ্ছি না ঠিকঠাক;
একটা ভাবনা, একটা ভাস্কর, একটা অপার সুখ, যক্ষ-যক্ষী যুগল মূর্তি ….
কথা গুলো বলতে বলতে, বলতে বলতে
তার রাধারানীর হাত ধরে সামনের দিকে হেঁটে চলল, সামনে, জ্যোৎস্নার দিকে,
আলোর উৎস সন্ধানে;
আমি তাকিয়ে থাকি তার হেঁটে যাওয়ার পথের দিকে;
দেখি, কি ভাবে শিল্পস্বত্ত্বা,
কি ভাবে প্রেমিক পুরুষ হেঁটে চলে নিজের মতো
অনন্তকালে ;
আমি যে এই জ্যোৎস্না রাতে বার বার ফিরে পেতে চাই
আমার আমিকে, আমার ভালবাসার সোনাঝুরির হাট,
আমার হৃদয়ের ভাস্কর, জীবন্ত যক্ষকে।