অণু গল্প

অণু গল্প- আমার দূর্গা মা

আমার দূর্গা মা
-অঞ্জনা গোড়িয়া

 

বাবলু এই গাঁয়ের ই দশ বছরের ছেলে। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। স্কুলের ড্রয়িং স্যারের কাছ থেকে সবে হাতে খড়ি আঁকার। বাড়িতে আঁকতে শেখানোর মতো ক্ষমতা বাবলুর বাবার নেই। তবু সে এই প্রথম আঁকতে বসেছে প্রতিযোগিতায়। পাড়ার শারদীয়া পূজায়। তাকে জিততেই হবে। বিজয়ী প্রতিযোগী দু’হাজার টাকা পুরস্কার পাবে। খুব দরকার টাকাটা। বাবা ভ্যান চালিয়ে কোনো মতে সংসার চালায়।
পুজায় নতুন পোশাক কিনে দেবার ক্ষমতা নেই। তাই এবছর বাবলু ঠিক করেছে যদি বিজয়ী হয়, ওই টাকায় পূজার পোশাক কিনে দেবে ভাই বোনের জন্য। মায়ের জন্য কিনবে আলতাপাড়ের শাড়ি আর আলতা সিঁদুর।

সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। হাতে রং তুলি। ড্রয়িংপেপারটা এখনো ফাঁকা। টাইম দেওয়া হয়েছে দেড় ঘন্টা। আধঘন্টা আর বাকি। অঙ্কন প্রতিযোগিতা চলছে জোর কদমে। চারিদিকে লোক ভর্তি। বিচারক বিভাগ- “ক” কে মাতৃমূর্তির ছবি আঁকতে বলেছেন। সামনেই মা দশভুজার মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি। সবাই মন দিয়ে একবার দেখছে আর আঁকছে। মায়ের ছবি, মা দুর্গার ছবি।

অংশ গ্রহণ করেছে প্রায় একশো জন। সুন্দর সুন্দর মাতৃমূর্তিতে ভরে গেছে সকলের ড্রয়িং পেপার। শুধু বাবলুর খাতাটি সাদা। বিচারক ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন সকলের অঙ্কন। বাবলুর কাছে গিয়ে অবাক হয়ে বলল, একি বাবলু! কি করছ তুমি? তুমি মায়ের ছবি আঁকতে পারছো না? বাবলুর চোখ দু’টো লাল হয়ে গেল। ঠোঁট জোড়া থরথর করে কাঁপছে। আবার বলল, আর মাত্র আধঘন্টা বাকি বাবলু। তাড়াতাড়ি করো। সবার জন্য পুরস্কার আছে। যে সবার সেরা মায়ের ছবি আঁকতে পারবে, তার জন্য আছে ২ হাজার টাকার পুরস্কার। কিছু আঁকো বাবলু। বাবলুর কোনো কথায় কানে গেল না। কোনো একজন পাশ থেকে জানিয়ে দিল, স্যার ও বোবা। এসব কথা ও বুঝবে না। বিচারক মশাই আর কিছু বললেন না।
সময় পার হয়ে আসছে। আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি। সকল প্রতিযোগী নিজেদের নাম ঠিকানা লিখে জমা দিতে প্রস্তুত হয়েছে। ফাইনাল ঘন্টা পড়ার ঠিক আগে বাবলু ধীর পায়ে এগিয়ে গেল ।
বাকিরা কৌতুক হয়ে তাকিয়ে ওর দিকে। কি এঁকেছে দেখার জন্য। বিচারক চমকে গেল বাবলুর আঁকা দেখে। অপরূপ জীবন্ত এ কার ছবি? সবাই মা দুর্গার ছবি এঁকেছে। বাবলু এঁকেছে জন্মদাত্রী মায়ের মায়াময়ী রূপ। মাটির উনানে খড়কুটোর জ্বালানিতে রাঁধতে রাঁধতে স্তন পান করাচ্ছে এক দুখিনী মা। হাঁড়িতে ফুটছে গরম জল। থালা নিয়ে বসে আছে আরও দু’টো শিশু। খিদের তাড়নায় ছটপট করছে।
ছবিটি হাতে তুলে দিল বিচারকের হাতে। এই তার দুর্গা মা। জগৎ জননী দুখিনী মা। প্রতিনিয়ত লড়াই করছে ক্ষুধা নামক দানবের সঙ্গে। তাই মায়ের মুখটাই ভেসে উঠেছে আঁকার সময়।

Loading

One Comment

Leave A Comment

You cannot copy content of this page