অনুভব ব্যক্তিগত
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
সদ্য সমাপ্ত শারদীয়ার ঐকান্তিক শুভেছা, প্রাণভরা ভালোবাসা, শুভকামনা জানাই ‘আলাপী মন’এর পক্ষ থেকে।
শারদীয়ার এক অনন্য উন্মাদনা থাকে বাঙালীর মনে, শারদ সংখ্যা। বইপ্রেমীদের, পাঠকদের মনের রসদ জোগান দিতে প্রকাশক, সাহিত্যিকরা ব্যস্ত রাত জাগেন অনেকদিন আগে থেকে। প্রকাশক ও সাহিত্যিক। সাহিত্য জগতের দুই প্রধান সত্ত্বা। সাহিত্যিকের কলম, প্রকাশকের প্রকাশনা- দুইয়ের মেলবন্ধনে সাহিত্যজগত এগিয়ে চলে সমান্তরালে।
একজন আপন মেধা, সৃজনশীলতার ডালি ভরিয়ে রাখে তো অপরজন ডালির ফুল সাজিয়ে অর্ঘ্য নিবেদন করে সাহিত্যের করকমলে। সৌহার্দ্য, সৌজন্যে পরিপূর্ণ মধুরতার সম্পর্ক। সাহিত্যিকের লেখা- প্রকাশকের বিপণী। ঊৎকষর্তার দায় থাকে এক পক্ষের তো অপর পক্ষের দায়িত্ব থাকে লেখার গুণমান বিচার করে, তাকে যথাযথ সম্মান দিয়ে প্রচ্ছদ বন্ধনে পাঠকের কাছে তুলে ধরা। সাহিত্যিক ও পাঠকের মাঝে সেতু রচনার কারিগর প্রকাশক। তথাকথিত অনেক নামীদামী প্রকাশকের মাঝে ছোট ছোট প্রকাশকরাও তাঁদের সাধ্যমত প্রচেষ্টায়– মনে আনন্দ, উদ্দীপনার সাথে প্রচ্ছদের বন্ধনে নিয়ে আসেন সাহিত্য সম্ভার। নতুন লেখক, নতুন প্রকাশক- এইখানে লেখকের মেধার প্রাপ্তি হয়তো একটি সৌজন্য সংখ্যা। “হয়তো” কথাটি এইজন্যই উল্লেখ করছি কারণ বর্তমানে সামাজিক মাধ্যামে প্রচারিত বেশ কিছু বিজ্ঞাপন। সেখানে লেখকদের কাছ থেকে লেখা সংগ্রহ করা হয়। শর্ত থাকে, নির্দিষ্ট অর্থমূল্যের বিনিময়ে একটি বা একাধিক লেখা অথবা পত্রিকার নির্দিষ্ট কয়েকটি সংখ্যা বাধ্যতামূলকভাবে কিনে নেওয়া। ঘুরিয়ে নাসিকা প্রদর্শন! মুদ্রণের ব্যয়ভার লেখকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া। প্রকাশক বা সম্পাদকের দায়িত্ব কি শুধুই মুদ্রণে প্রকাশ? যা কিনা আগে বা পরে প্রকাশক/ সম্পাদকের পরিকল্পনা অনুযায়ী লেখকদের নিজেদেরকেই কিনে নিতে হবে! নূন্যতম একটি সৌজন্য সংখ্যা কি লেখকের সাম্মানিক প্রাপ্তি হতে পারে না?
কিছুদিন আগেই আর একটি বিজ্ঞাপন নজরে এলো। সৌজন্য সংখ্যা না পেলে যদি লেখকরা লেখা দিতে না চান তাহলে “ছোটো ছোটো” প্রকাশকরা কি করবেন? ছোটো ছোটো পত্রিকার কি হবে? ভবিষ্যত কি? ভবিষ্যত ভাবার দায়িত্ব কার? প্রকাশক/ সম্পাদক,নাকি লেখকের? যাঁর লেখা তাঁর কাছেই বেচবেন, এমন প্রকাশকের কতটা প্রয়োজনীয়তা আছে? প্রকাশকরা অবশ্যই ব্যবসা করবেন। কিন্তু “যার শিল, তারই নোড়া, তারই ভাঙি দাঁতের গোড়া!” না করে অন্যভাবেও তো তহবিল গঠন করা যেতে পারে। নাহলে লেখকের প্রাপ্তি? সেটাও একটু ভাবুন মহামান্যরা। কারণ শুধুমাত্র পদাধিকারী হলেই হয়ে যায় না, কিছু নৈতিক দায়িত্বও তো থাকে।
অনুভব সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত, সেটুকুই আজকের কলমে।