চিঠি

চিঠি- স্ত্রীর চিঠি

স্ত্রীর চিঠি
– শচীদুলাল পাল

 

প্রিয়তম শরৎ
অনেকদিন হলো তোমার চিঠি পাইনি।বছর ঘুরে আবার আশ্বিন এলো।দুর্গাপূজাও এসে গেলো। সেই যে গেলে কোন দেশে চাকরি করতে। বছর ঘুরে গেল, তুমি এলে না।আবার এক বছর বাদে তুমি আসবে।আশায় রয়েছি।রাতে ঘুম আসছেনা, রাত জেগে চিঠি লিখছি।এখন ভরা শরৎ। মেঘে ঢাকা আকাশ।রিমঝিম বৃষ্টি হচ্ছে।উঠানে শিউলির ডালে কুঁড়িতে ভরে গেছে। কাশ ফুলে ফুলে চারিদিক সাদা।মালতি লতায় জল পড়ে অবিরাম। চারিদিকে ব্যাঙের ডাক।পুঁই লতাটা কত বড় হয়ে গাছ বেয়ে উঠছে।
টগর গাছে কত ফুল ফুটে আছে।সকালে উঠে দেখতেই তোমার কথা মনে পড়ে।সামনে একফালি খেতে সবুজের সমারোহ। কত করেলা ঢেড়শ কচু শশা হয়েছে।লতায় পাতায় ভরে গেছে। পেয়ারা গাছটা থেকে কত পাকা পেয়ারা মাটিতে পড়ে।জল টইটম্বুর ডোবাটায় অসংখ্য মাছগুলি মনের আনন্দে সারাদিন ঘুরে বেড়ায়। হাঁস গুলি জল কেলি তে মত্ত জোড়ায় জোড়ায়।দূরে ধানের খেতে রৌদ্র ছায়া।
মাঝে মাঝে দেখি   নীল আকাশেসাদা মেঘ রাশি রাশি।শরতের সৌন্দর্য প্রকৃতি রূপময়। গাছপালার পত্রপল্লবে গুচ্ছ গুচ্ছ অন্ধকার ফিকে হয়ে আসতেই পাখপাখালির দল মহাকলরবে ডানা মেলে উড়ে যায় নীল আকাশে।আকাশের উজ্জ্বল নীলিমার প্রান্ত ছুঁয়ে মালার মত উড়ে যায় পাখির ঝাঁক। বিলের জলে শালুক শাপলা আলোকিত প্রস্ফুটিত।
পুকুরপাড়ে আমগাছের ডালে মাছরাঙা ধ্যান করে।স্বচ্ছ জলে পুঁটি,চান্দা বা খলসে মাছের রূপালি শরীর ভেসে উঠলে সে ছোঁ মেরে তুলে নেবে তার লম্বা ঠোঁটে।নদীর চরে চখাচখি ,পানকৌড়ি, বালিহাঁস বা খঞ্জনা পাখির ডাক।কলসি কাঁখে মেঠো পথে হেঁটে চলে গাঁয়ের বধূ।
তোমার আসার আশায় আছি। রিয়া তোমার কথা সব সময় বলে। বাবা কবে আসবে। ওকে অনেক স্বান্তনা দি।কিন্তু আমি আর পারছিনা। গভীর রাতে কত  ঘুম ভেঙে গেছে। মনে হয়েছে তুমি এসেছো।আমার পাশেই আছো।বিরহ জ্বালায় জ্বলে মরি।ভরা ভাদ্রের মতো চোখে জলে ভরে যায়। তবু তোমার দেখা নাই। মনে অনেক আশঙ্কা।একদিন পুকুরে স্নান সেরে ফিরছি পাড়ার একটা বউ বলেই দিল “

তোর সোয়ামী কবে আসবেক।দেখগা অন্য মেয়া নিয়ে ফুর্তি করছে। তুর কুথা কি আর মনে আছে।”
আমি মনকে বুঝাই, না না এমন কি করে হবে।আমি ত তোমাকে কত ভালবাসি। তুমি এমনি করতেই পারোনা।
মাঝে মাঝে যখন বৃষ্টি পড়েনা।আকাশ পরিস্কার থাকে তখন শরতের চাঁদের আলোয় ঘর ভরে যায়।আমিও আনমনা হয়ে যায়। ভরা ভাদরের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। তোমার আমার মিলনের কথা বেশি করে মনে পড়ে। সামনে পূজা। এবার আমার জন্য দামি শাড়ি নিয়ে এসো তিনটা। রিয়ার জন্য, বাড়ির সবার জন্য দামি দামি জামা কাপড় এনো। আমরা এবার শহরে যাব ঠাকুর দেখতে। পুজা প্যান্ডেলে ঘুরব। অনেক আশা নিয়ে রইলাম। তুমি না থাকলে আমার সাজতে ভালো লাগেনা।তুমি যেদিন আসবে সেদিন থেকে শাড়িগুলো বের করে পরবো। অনেক সাজব।এমনভাবে তোমাকে বেঁধে রাখব তুমি আর আমাকে ছাড়া অন্য কারোর কথা ভাবতেই পারবেনা।রাত প্রায় শেষ হলো। দূরে কোথাও পাখীদের কিচির মিচির। রাত শেষে ভোর হচ্ছে। আমার ও রাত শেষ হবে। তুমি আসবে। আবার আঁধার শেষে আমার জীবনেও সূর্য উঠবে।
ইতি
তোমার স্ত্রী
টগর

Loading

One Comment

Leave A Comment

You cannot copy content of this page