তালাক
– শক্তি পুরকাইত
সেই কবে ঘুম ঘোরে আব্দুল, বউ আনজুকে মুখের উপর বলে ফেলেছিল তালাক, তালাক, তালাক …! সে বুঝতে পারেনি রাগের মাথায় এমনটা হবে। বেশ কয়েকদিন সময়টা ভাল যাচ্ছিল না। পারিবারিক একটা অশান্তির মধ্যে ছিল। ‘তালাক’ শব্দটা ওভাবে মুখ ফসকে বেরিয়ে যাবে কে জানতো! সকাল হতে বউ আনজু, ছেলে তানজিরকে নিয়ে সোজা বাপের বাড়ি উঠেছিল। কতবার আব্দুল, আনজুকে আনতে গিয়েছিল সে আসে নি। বরং মুখের উপর বলেছিল ‘তালাক দেবার সময় হুঁশ ছিল না!’ অনেকবার গ্রামে ওদের নিয়ে সালিশি সভা বসেছিল। কিন্তু ফল হল না। আনজু আর ওই সংসারে ফিরতে চায় না। যে মানুষটার মাথায় হাত বুলিয়ে না দিলে ঘুমাতো না। ভাত মাখিয়ে গালে না দিলে খেত না। সে মানুষটা এমন দূরে সরে যাবে আনজু ভাবতে পারেনি। মাঝে মাঝে খবর আসে সে ঠিকঠাক বাড়ি ফেরে না। ফিরলেও মদ খেয়ে টলতে টলতে বাড়ি আসে। সে কোর্টে তার বিরুদ্ধে কেস করেছে। গ্রামের কেউ আনজুর পাশে এসে দাঁড়ল না। সে শরিয়ত বিরোধী কাজ করেছে। আজ সরকারের তিন তালাক বিল পাশ হওয়ায় সবার মুখে হাসি। সে আনন্দের মধ্যেও শুনতে পেল বেদনার সুর। ‘তালাক’ শুধু একটি মেয়ের জীবন নষ্ট করে না। একটি ফুলের মত সংসারও নষ্ট হয়। আনজু, ছেলে তানজিরকে কোলে নিয়ে কোর্টের সামনে এসে দাঁড়াল। ছল ছল চোখে আব্দুলের পথের দিকে চেয়ে থাকল সে।