রম্য- ম্যাও

ম্যাও
-রীণা চ্যাটার্জী

গৃহস্থ বাড়িতে বেড়াল, আর মনের মধ্যে লোভ- দু’টো এক জিনিষ। কোনো তফাত নেই।
সকালে উঠে মাছের বাজারে যাও। চোখ খালি খুঁজবে কোথায় তাজা ইলিশ, কোথায় জ্যান্ত চিংড়ি, কোথায় টাটকা ভেটকি। মনের মতো পেলে তো আর কথাই নেই, একেবারে আড়াই লাফ। উবু হয়ে বসে পড়বে। দরদাম করবে। তারপর কিনবে। সাধ্যের মধ্যে কিনবে। লোভে পড়ে সাধ্যের বাইরে গিয়ে কিনবে। শুধুই কি মাছ? ও না হয় বাঙালীর বদনাম। ধবধবে সাদা- কপি, মাচার সবুজ পটল, হলুদ কুমড়ো, ফলফলে শাক, কচি কচি নিম, লগলগে ডাঁটা, তাজা কমলা, রসালো আম, কষা পেয়ারা, পাকা ফুটি, ঠাণ্ডায় আদা মেরে কড়া চা, গরমে লেবুর ঠাণ্ডা সরবত কিসে মন ম্যাও বলে না! এ তো হাত হয়ে মুখ দিয়ে পেট পূজো। পেট বড়ো বালাই। চাই.. চাই। বাজারের থলি হাতে নিয়ে বাড়ি ঢোকো, দরজায় বসে বেড়াল। লেজ গুটিয়ে পায়ে পায়ে ঘুরবে। মুখে ‘ম্যাও.. ম্যাও’ ডাক, গন্ধ শুঁকে বুঝে নেবে আজ অবশিষ্টের মহাভোজ। লোভে পায়ে পায়ে ঘোরা, মুখে ম্যাও ডাক- বিরাম নেই, অবিরাম।

মনেরও বিরাম নেই। পেটের আগুন নিভলেই
নজর এর উঠোনে, ওর জানলায়। কার নতুন বাড়ি উঠলো, মন ডাকলো ‘ম্যাও’। কারো বাড়িতে নতুন গাড়ি, মন ডাকলো ‘ম্যাও’। প্রতিবেশীর ছেলে ভালো চাকরি পেল, আমারটা কবে পাবে? মন এখানেও ‘ম্যাও’। আত্মীয়ের মেয়ের ঘটা করে বিয়ে! বিদেশের পাত্র? মন তখন অন্য সুরে ‘ম্যাও’ ডাকবে। মেনি বেড়ালের মিষ্টি ডাকের মতো লোভ আর তখন উঁকি- ঝুঁকি দেবে না। কার্নিশে বসা হুলো বেড়ালের মতো রাগে গড়গড়ে ডাক,’ম্যাওওওও’। মেনি-হুলো তখন সংসারে এক সাথে গড়গড় করবে। চাই, চাই আমারো চাই… এপাশ ওপাশ থেকে কাক চিল দেখবে। দেখুক- কুছ পরোয়া নেহি। দুশ্চিন্তা দূর না হওয়া পর্যন্ত শান্তিও নেই। তারপর যখন চাঁদ ধরা দেবে, সুর বদলে যাবে। শাড়ি থেকে সোনা, গাড়ি থেকে খানা সব জায়গায় সাধ্যের বাইরে, সাধ্যের ভিতরে মেনি- হুলো মিলে ‘ম্যাও’ ডাকবে। মনের ভাবখানা ‘সেদিন দেখিয়েছিলিস.. এবার দেখিয়ে দেব, দ্যাখ কেমন লাগে..’
বেড়াল যেমন কোণঠাসা হলে প্রভু, গৃহস্থ সব ভুলে যায়। প্রাণ বাঁচাতে গলার টুঁটি ধরতে চার পায়ে মরিয়া লাফ দেয়। ঠিক তেমনি সারাজীবন মনের দরজায় বসে থাকা বেড়ালটাও একসময় থাবা কষিয়ে তেড়ে আসে। শরীরের জোর কমে এলে মন তখন বাঁচতে চায়, মায়ায় জড়িয়ে। সে আর এক লোভ- বাঁচার লোভ। সংঘাত শুরু মেনি আর হুলোয়। সুগার ধরেছে, মিষ্টি দেখলেই মেনি মন বলবে ‘ম্যাও’। হুলোর পাশ থেকে সাবধানী সংকেত। প্রেসার ধরা পড়েছে! কষা মাংস, সুরাপাত্র, মায় ঘি, তেল কিছু দেখার উপায় নেই। গরগরে সাবধানী সংকেত। মন আর ইচ্ছে, আকাঙ্খা আর ভয়ের দ্বৈরথে কিছুদিন যুদ্ধ চলে। একসময় হার মেনে যায় মন, আকাঙ্খা, ইচ্ছে সব। জয়ী হয় শুধু ভয়। সেদিনও দোরে বেড়ালটা বসে থাকে, গৃহস্থের বেড়াল- শুধু ‘ম্যাও’ ডাকে না।

Loading

6 thoughts on “রম্য- ম্যাও

  1. অপূর্ব হয়েছে… 😍😍👌👌💋👏👏

Leave A Comment