Site icon আলাপী মন

কল্প-বিজ্ঞান- সাদা গহ্বরের পথ ধরে

সাদা গহ্বরের পথ ধরে

-ইন্দ্রনীল মজুমদার   

রাতে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেল। কলিং বেলের আওয়াজে দরজা খুলতেই চমকে উঠি। এ কে রে! এ যে আমি! আচ্ছা, আমার সামনে কি আয়না বসানো? নাহ্ এটা আমার প্রতিচ্ছবি নয়। জ্যান্ত মানুষ। জিজ্ঞেস করলো- এটা কোন গ্রহ? সূর্য কোথায়?

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, “মরণ। নেশা করছো নাকি? ঠিক আছ তো? এটা যে পৃথিবী তাও জানো না? আহাম্মক কোথাকার!”

-না। আমি ঠিক আছি। আমার নাম নীলাঞ্জন রায়।

এবারে আরও চমকে উঠলাম। আরে এ যে আমারই নাম!

তারপর আমার জমজ বলল, “আমি অন্য গ্রহের মানুষ। গ্রহটার নামও পৃথিবী। সেটিও সৌর জগতের বাসিন্দা। সেখানেও সূর্য আছে।

– তা বাপু তুমি কি কর?

– যে আজ্ঞে পড়াশোনা। এবার কলেজ পাশ করলাম।

– আরে আমিও তো তাই। আচ্ছা ওখানে গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর সমস্যা আছে?

– হ্যাঁ। তবে আমাদের পৃথিবী থেকে অনেক উন্নত।গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি আছে।

-তোমাদের পৃথিবী কোথায়?

-ওটা অন্য এক বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে। তোমরা ভাবো যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বা ইউনিভার্স(Universe) বুঝি একটাই। আদপে তা কিন্তু নয়। অসংখ্য ইউনিভার্স আছে যাকে বলে ‘মাল্টিভার্স’। আবার অসংখ্য ইউনিভার্স নিয়ে গঠিত ‘ক্লাস্টার অফ ইউনিভার্স’। এই ক্লাস্টার অফ ইউনিভার্সগুলিকে নিয়ে গঠিত ‘সুপার ক্লাস্টার’। সব ইউনিভার্সই প্রত্যেকটা ইউনিভার্সের সমন্তরাল যাকে বলে ‘প্যারালাল অফ ইউনিভার্স’।

– বুঝলাম। তা তুমি এখানে এলে কিভাবে?

– মহাকাশে নাইট ওয়াক করছিলাম খাওয়া দাওয়ার পর স্পেসশিপে চড়ে। তা ভুলবশতঃ ঢুকে পড়লাম ব্লাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বরে।

– সর্বনাশ! তা ওখানে তো আলোও বেঁচে বেরোতে পারে না তা তুমি কি করে বেঁচে বেড়িয়ে এলে?

– হ্যাঁ তাই মনে হয়েছিল। তবে কি না সাদা গহ্বরের পথ ধরে চলে এলাম।

– মানে?

– মনে হল যেন বিশাল লম্বা হয়ে গেলাম তারপরে ছারখার হয়ে ঢুকে গেলাম কৃষ্ণ গহ্বরের মুখে। তারপর মনে হলো কোন একটা টানেলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি তারপর মনে হল মারা-ই গেছি এবং তারপর হঠাৎ মনে হল বেঁচে গিয়েছি এবং ব্ল্যাক হোল থেকে বেড়িয়ে গেছি। যখন বের হলাম তখন দেখি আমি ও আমার সাথে আলোও বের হচ্ছে। আমি আবার জোড়া লেগে আগের অবস্থায় ফিরে এলাম। বলতে গেলে এক অন্য জীবন পেলাম। কি জানি প্রকৃতির কোন নিয়ম খাটলো? আসলে কি জানো, ওয়ার্ম হোল নামে এক ধরনের টানেল আছে যা ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর আর হোয়াইট হোল বা সাদা গহ্বরকে কানেক্ট করে। তা ওয়ার্মহোল দিয়ে হোয়াইট হোলে চলে এলাম। হোয়াইট হোলে আলো নির্গত হয় এবং অন্য ব্রহ্মাণ্ডে পৌঁছানো যায়। তা বলাই চলে সাদা গহ্বরের পথ ধরে চলে এলাম এই ব্রহ্মাণ্ডে।

– বুঝলাম।
তারপর ছেলেটি চলে গেল। যাবার পর মুহূর্তে দেখলাম ‘মেন ইন ব্লাক’-এর এজেন্ট K এবং এজেন্ট J হাজির। এজেন্ট J নীলাঞ্জনের ফটো নিয়ে ইংরেজিতে বললেন, “Have you seen this guy?”

-Yes.

এরপর এজেন্ট K আমার দিকে একটা ছোট মেশিন বের করে। মেশিনে স্যুইচ টিপলেন এবং আলো ঝলকালো। উনি নিরাশ স্বরেই বললেন, “Oh my God! It’s not him.”

Exit mobile version