অণুগল্প- কালিপূজার রাত

কালিপূজার রাত
– পারমিতা চ্যাটার্জী

 

শব্দের আাওয়াজটা যে মাঝে মাঝে শব্দভেদী অস্ত্রে পরিণত হচ্ছে তার জ্বলন্ত প্রমাণ শ্রীময়ী আজ থেকে দশ বছর আগে পেয়েছিল। তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়, তার একমাত্র সন্তান- রাতুলকে। রাতুল ছোট্ট থেকে এই বাজির শব্দ সহ্য করতে পারতো না। কালীপুজার দিন সে ঘরের দরজা জানলা বন্ধ করে একটা ঘরে খাটের ওপর বসে ঠকঠক করে কাঁপত। আর শ্রীময়ীও তাকে প্রাণপণ বুকে আঁকড়ে থাকত।সেবার কালিপূজার দিন ঠিক এমনই এক শব্দভেদী বাণের ভয়ংকর শব্দে রাতুলের হার্টফেল হয়ে যায়। তার তিন দিন আগেই তারা স্বামী স্ত্রী রাতুলকে নিয়ে সবে বাড়ি ফিরে এসেছে। সাঙ্ঘাতিক ম্যালিগন্যান্ট ম্যলেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় দশ দিন নার্সিংহোমে ছিল। ডাক্তার ঠিক মতে ধরতে না পারায় রোগ অনেকটা বেশিমাত্রায় ছড়িয়ে গিয়েছিল। ব্রেইন অ্যাটাক করে ফেলেছিল। হার্টও খুব দূর্বল ছিল। আস্তে আস্তে সুস্থই হয়ে উঠছিল।

আচমকা কালিপূজার দিল সকালে ঘটনাটা ঘটে গেল। তার বাড়ির নীচেই কয়েকটা ছেলে, কালি পটকা ফাটাচ্ছে। রাতুল চমকে চমকে উঠছিল। কারণ তার এই শব্দের ব্যাপারে আতঙ্ক দশ বছর বয়েসেও যায়নি।শ্রী বারান্দায় গিয়ে বলে এলো ছেলেগুলোকে, বাবা তোমরা একটু দূরে গিয়ে ফাটাও..আমার বাড়িতে খুবই অসুখ পেশেন্ট আছে। সবে নার্সিহোম থেকে নিয়ে এসেছি।
ছেলেগুলো অবজ্ঞার ভঙ্গিতে তাকালো তার দিকে। সে ভালো করে দরজা বন্ধ করে রাতুলের দুধ আনতে রান্নাঘরে গেল। আর ওর স্বামী সুগত একটু বেরিয়েছিল। সেইসময় তার বাড়ির নীচেই দোদোমা নামে এক ভয়ংকর শব্দের বাজি আবার চকোলেট ব্যোম একসাথে ছেলেগুলো ফাটায়। তার মারাত্মক শব্দের আওয়াজে গোটা বাড়িটাই যেন কেঁপে ওঠে। কেঁপে ওঠে শ্রীময়ীর প্রাণ, দৌড়ে চলে আসে রাতুলের ঘরে- দেখে রাতুল চোখ দু’টো বড়ো করে খুলে কেমন করে যেন শুয়ে আছে। তার ডাকে কোনো সাড়া দিচ্ছেনা। শ্রীময়ী পাগলের মতো চিৎকার করছে, ‘রাতুল…রাতুল’ বলে, না রাতুল আর সাড়া দেয়নি। কোনোদিনই সাড়া দিল না সে মায়ের কাতর ডাকে।ডাক্তার এসে জানালেন দুর্বল হার্ট নিতে পারেনি এই শব্দ..সঙ্গে সঙ্গে হার্টফেল হয়ে গেছে। আজ থেকে দশবছর আগে ঠিক এই দিনে তার কোল খালি হয়ে গিয়েছিল। আজও তারা স্বামী স্ত্রী দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে থাকে। এক অজানা ভয় এখনও তাদের তাড়া করে ফেরে।

Loading

2 thoughts on “অণুগল্প- কালিপূজার রাত

Leave A Comment