কালি
– শক্তি পুরকাইত
কালো পিস্তলটা কপালের এক কোনে এমন ভাবে ধরেছে কোন উত্তর করতে পারেনি, স্বাধীনতা সংগ্রামী অখিল জানা। দেশ স্বাধীনের পর আজও এই ভাবে বেঁচে থাকতে হবে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। এ বছর তা নিজের চোখে দেখল। অনেকবার শাসিয়েও গেছে ‘শালা বুড়ো যদি ও পথে পা বাড়াস, তোর মৃত্যু নিশ্চিত’ এ কথাগুলো বলে চলে গেছে পাড়ার নেতা। এই জন্যে কী ব্রিটিশদের হাতে এত মার খেতে হয়েছে, এত জেল খাটতে হয়েছে! সে লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকে। স্বাধীনতা সংগ্রামীর পেনশন থেকে যেটুকু টাকা পায় নিজের সংসারটা কোনরকমে চলে। আজীবন সে অবিবাহিত অর্থাৎ বিয়ে করে নি। গ্রামের কোনো মানুষের বিপদ পড়লে সে এগিয়ে গিয়ে সবার আগে দাঁড়ায়। তাকে চেনে না, এমন কেউ নেই। সে একরকম গ্রামের ভগবান বললে চলে। সবাই তার কথা মানে। আগের মত শরীরে জোরও নেই। শরীরের জোর না থাকলেও প্রতিবাদ করতে ছাড়ে না। প্রতিবছর সে ভোটের লাইনে দাঁড়ায়। কিন্তু এ বছর তার সে আধিকারও নেই। সদানন্দ প্রাইমারী ইস্কুলে ভোটের লাইন পড়েছে। সে জানলা খুলে দেখে সবাই ভোট দিতে চলেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামী অখিল জানার মত অনেকে যেতে পারবে না। এ কোন দেশ! সে জানতে চায়? বার বার নিজের আঙুলের দিকে তাকায়। এ বছর প্রথম তার আঙুলে কালি লাগে নি। যে কালিতে দাঁড়িয়ে আছে একটা দেশ, একটা মানচিত্র।