অণুগল্প- দরজা

দরজা
– শক্তি পুরকাইত

 

 

‘বাড়ি ফেরার সময় ছেলেটার জন্য দুধটা এনো?’ পাশের ঘর থেকে কমলিকার কর্কশ কন্ঠস্বর শুনতে শুনতে দয়াময়ের কান একেবারে ঝালাপালা। আগের মত যৌবনও নেই তার। পাশে শুলে কোন হুঁশ থাকে না।দয়াময় আদর করে গায়ে হাত দিলে বিরক্ত হয়ে ওঠে। যৌবন কী সব সময় মানুষের থাকে। এক সময় ভাঁটাও নামে। দয়াময় লোহা কোম্পানীতে কাজ করতে করতে কখন অল্প বয়সে বুড়ো হয়ে গেছে, সে নিজেও জানে না। দয়াময়ের যৌবনের প্রতি লালসা থাকলেও কমলিকার একেবারে নেই। যতদিন যাচ্ছে সে যেন পোড়া কাঠ হয়ে যাচ্ছে। তাই কমলিকার যে কোন কথায় বিরক্ত হয়ে ওঠে সে। দয়াময় আজকাল এ পাড়াতে ও ঢোকে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েগুলোকে দেখে মন টানে। এ মাসের মাইনে পেয়ে ভুলে গেছে যে তার বাড়িতে একটা সংসার আছে। মত্ত হয়ে ওঠে শরীরের প্রতি। ব্লাউজের হুক খুলতে গিয়ে দয়াময়ের দু’চোখে ভেসে ওঠে কমলিকার মুখ। ছেলেটার জন্যে দুধ নিয়ে গেলে তবে সে খেতে পাবে। ‘বাবা’ ডাক শুনতে পায় সে। নারী শরীর ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। সে যেন একটা ভুল করে চলেছে। যে ভুলের কোন ক্ষমা নেই। বাড়িতে তার অপেক্ষা করছে একজনই মানুষ কমলিকা। সে বাড়ি ফিরলে দরজা খুলে দেবে। সে দাঁড়িয়ে দেখবে শুকিয়ে যাওয়া কমলিকার মুখ। দয়াময়ের দু’চোখ ছল ছল করে ওঠে। সে মনে মনে বলে ওঠে,’কমলিকা দরজা খুলে দাঁড়া, আমি আসছি’ কমলিকা ছাড়া এ দরজা কেউ খুলে দেবে না, তার। একটা দরজার জন্য সে চিরটাকাল অপেক্ষায় থাকবে।

Loading

Leave A Comment