নিতান্তই অর্বাচীন..
-রীণা চ্যাটার্জী
সুধী,
কিছু কিছু কথা বলা সোজা, না কি কথা শোনা সোজা! মনে এই একটা প্রশ্ন ঝড় তুলেছে বেশ কয়েক দিন ধরে।
এক একটা কথা যেন এক একটা বোমা। মুখ থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই ফাটবে। হয় হাসিয়ে মারবে, না হয় কাঁদিয়ে ছাড়বে। হতবাক করে দেওয়া তো খুব সোজা, ওতে কথা লাগে না, ভাবভঙ্গী দেখলেই মাথা ঘুরে যায়, আর কাজ করে না। সবাই বিজ্ঞ, সব জেনে কথা বলছে, যাকে বলে বেদবাক্য- ভুল হতেই পারে না।
হ্যাঁ, ঠিকই, আমাদের দেশের বিখ্যাত, ‘সু’যোগ্য, ‘স্ব”নামধন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কথাই বলতে চাইছি। আসলে ক্ষমতার হাতে মাইক্রোফোন এলে বোধহয় কি বলতে চাইছে ভেবে দেখার প্রয়োজন পড়ে না। মঞ্চ আর মাইক্রোফোনের যুগলবন্দীতে ক্ষমতা যা খুশী বলতে পারে। তাই কেউ ইতিহাস বিকৃতির ভার নিয়েছেন, কেউ বা নতুন করে ভূগোল শেখাচ্ছেন, তো কেউ সাহিত্যের উদোর পিন্ডি কার ঘাড়ে চাপাচ্ছেন সেটা নিজেই জানেন না, কিন্তু চাপিয়ে ছাড়ছেন। আর ধর্মীয় কান্ডারীরা ধর্মের চাল আর রাজনীতির ডালে সমাজে দুষ্পাচ্য খিচুড়ি বানাচ্ছেন। জনতা খাচ্ছে, বদহজমও হচ্ছে। হতে বাধ্য, পরিপাক নাহলে যা হয়। আড়ালে উদগীরণ করছে। আবার খাচ্ছে, খেতে বাধ্য- সুবোধ অনুগামীরা খেতে বাধ্য করছে, নাহলে কিন্তু ঘোর সংশয়.. হাতে লাঠি, লাল চোখ, ঘরের চালে আগুন আরো আরো অনেক কিছু।
ধর্ম, শাস্ত্র, সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন ছাড়াও এঁরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বক্তব্য রাখতেও যে সমান পারদর্শী তার প্রমাণ বারবার দিয়েছেন। কেউ বলেছেন বিশ্ব উষ্ণায়ন ভ্রান্ত ধারণা, তো কেউ সদ্যোজাত মানব শিশুর নূন্যতম স্বাভাবিক ওজনের পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন সহস্রের গণিতে। আবার কেউ বা বয়সজনিত, রোগ জর্জরিত নেতার মৃত্যুতে বিরোধী দলের ‘বান মারার’ ক্ষমতা তুলে ধরে চিকিৎসা শাস্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ‘কালা জাদু’র মহিমা সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন অবলীলায়। হায় রে, স্বর্গীয় নেতা-নেত্রীর মৃত্যুতে শোক পালন করবো? না জীবিতের কথা শুনে কপাল চাপড়াবো!
আবার অতি সম্প্রতি গো-‘মাতা’য় এদেশ-বিদেশের চৌকাঠ লাগিয়ে সম্পর্কের মা- মাসি বানিয়ে, গো দুগ্ধের গুণমান নির্ধারণ করে, গো- মাতার শরীরে স্বর্ণ উৎপাদনকারী অঙ্গটিও আবিষ্কার করে ফেলেছেন। সোনা যখন আবিস্কৃত প্রায় (কারণ এর সপক্ষে বিজ্ঞাপনী বিজ্ঞানীরা ও অনুরাগী মাধ্যমগুলো যথেষ্ট যুক্তি প্রমাণ আনতে তৎপর। যেভাবেই থাক, আছে তো রে বাবা। নেতার বক্তব্য বলে কথা, যুক্তি থাকতেই হবে) এবার বোধহয় নিক্তি মেপে গো-দুগ্ধ বিক্রয় হবে। বেদম বেহায়া মনে আবার প্রশ্ন জাগে, তাতেও কি যথারীতি ‘সোনা সঞ্চিত গো দুগ্ধ’ নিঃস্ব করে নিঃসরণ করে নেওয়া হবে, আলালের ঘরে দুলালের ফেলে ছড়িয়ে খাবার জন্য, কিংবা পাথরের দেবতার অভিষেকের পর নর্দমায় গড়িয়ে দেওয়ার জন্য? না কি মাননীয় নেতার বক্তব্যের খাতিরে সোনার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার জন্য সঞ্চয় করা হবে ভবিষ্যতের ঘরে? যদি সঞ্চয় নীতি শুরু হয়, তাহলে বেচারা বাছুরগুলো অত্যন্ত মাতৃদুগ্ধের কিঞ্চিত আস্বাদ পেলেও পেতে পারে। তাহলে আর শুকনো গলায় খড়-বিচুলির ভরসায় থাকতে হয় না। তবে মানুষ কি এতোটা অধিকার ছেড়ে দিতে রাজী হবে? গো- দুগ্ধের ওপর যে মানব সন্তানের অধিকার বাছুরের মাতৃদুগ্ধের অধিকারের থেকে বেশী।
এখানে আর একটা বিষয় না বলেও পারছি না। পাথর, আর ধাতু প্রতিমাকে দূষণ প্রতিরোধে মুখবন্ধনী পরানো হচ্ছে। বেশ কয়েকটি পার্বনের পার্বনী- অতিদূষণ। মুখবন্ধনী পরানো- ওটা যে কোন বিষয়ের ছাই-ভস্ম ঠিক বুঝতে পারি নি।
মাননীয় ‘হুতোম পেঁচা’ যদি আজ জীবিত থাকতেন, সারাজীবনের একান্ন টিকি’র সঞ্চয় উনি মনে হয় এক এক দিনেই সম্পূর্ণ করে ফেলতেন। শেষে হয়তো আর রাখার জায়গা পেতেন না। ওহোঃ এনাদের তো আবার স্বার্থ ছাড়া টিকি’ও খুঁজে পাওয়া যায় না। যাই হোক কিছু একটা কাটার জন্য সে ঠিক খুঁজে নেওয়া যেত- মোট কথা সংগ্ৰহ বাড়তো খুব শীঘ্রই, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর প্রতিটি সংগ্ৰহের নীচে একটি কথার উল্লেখ থাকতো- “নিতান্তই অর্বাচীন..”
মনে হতেই পারে সাহিত্যের পাতায় রাজনৈতিক কথা কেন? আত্মপক্ষ সমর্থনে একটি কথাই বলতে পারি, বর্তমানে যা রাজনৈতিক ভবিষ্যতে সেটাই সামাজিক। বর্তমানের নথি ভবিষ্যতের জন্য রেখে যাওয়ার দায় থেকেই যায়।
মনছোঁয়া কিছু কলমের কথা- ‘সরণ’ ‘কালিপূজার রাত’, ‘নেফিলিম’, ‘স্তব্ধ দহন’, ‘সাবস্টিউট’, ‘তিনকন্যা’, ‘ছন্দপতন’, ‘সে দিনের কথা’, ‘পরিণতি’, তাছাড়াও মনের কোণে রেশ রেখে দেওয়া আরো বেশ কিছু লেখা। কৃতজ্ঞ আলাপী মন সকল স্বজন সাথী সাহিত্য বন্ধুর কাছে, তাঁদের কলমের কাছে।
হেমন্ত আসে না বহুকাল, দোরগোড়ায় মুখ দেখিয়ে চলে যায়। তবুও মনে আশা এবার হয়তো আসবে। আশার হাতে হাত রেখে হৈমন্তী শুভেচ্ছা সবার জন্য।