প্রেমের ফাঁদ
-সুজিত চট্টোপাধ্যায়
প্রেমের ফাঁদ পাতা ভূবনে। চোখে চোখ পরলো, মন থেকে মনে অদৃশ্য বিদ্যুৎ খেলে গেল , ব্যাস হয়ে গেল। তুমি আমার আমি তোমার। দুনিয়া যাক রসাতলে, তোমারি সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ।
আয় তবে প্রেম করি , হাতে হাতে ধরি ধরি , ময়দানে ঘুরি ঘুরি , ফুচকা খাবি আয়। আর কে পায়। মন আঁকুপাঁকু করছে। ওগো , কোথায় ছিলে গো এদ্দিন। তোমাকেই যে খুঁজেছি এতদিন। গদগদ প্রেম। কোথায় লাগে বৃন্দাবন। সুন্দর বন প্রেম।
বাপের কত আশা । ছেলে আমার ডাক্তার হবে , ইঞ্জিনিয়ার হলেও মন্দ নয়। যদিও চাকরির বাজার তেমন সুবিধের নয়। তাতে কি সমাজে আওয়াজ দেওয়া যাবে , আমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। সঙ্গে দু’চারটে গালগল্প মেরে দিলে , দিব্বি স্টাটাস বজায় থাকবে। হাতে তো বাঙ্গালোরের তাস আছেই। সুতরাং টানকে মতিলাল….
প্রেমের কি জাদু কে জানে। দুদিন কাটতে না কাটতেই , প্রেমিকা কে বউ ভাবা শুরু হয়ে গেল।
বউ মানেই , সেই পুরনো বদ্ধমূল ধারণা, আমার সম্পত্তি। আমার অধিকার। সেই বিশ্বাসে ভর করে শুরু হয়ে গেল আগলানো। ভীড় মেট্রো থেকে মেলা , অন্যের ছোঁয়া বাঁচিয়ে নিয়ে চলেছে এ যুগের মজনু। লায়লাও কম যায়না। বেশ মজা আছে ব্যাপারটায়। বন্ধু মহলে এই নিয়ে হাস্যরসের খোসগল্প। একদিন সবশেষ। ব্রেক আপ। আশ্চর্য। কেন যে ভালবাসা এলো , আর কেনই বা ফুস করে উবে গেল , কোনও ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারবে না। কামদেবও ফেল মেরে যাবে ।
হালফ্যাশন ব্রেক আপ স্টাইল। যার যত বেশি ব্রেক আপ , সে তত বেশি স্মার্ট। সোজা বাংলায় , ধরা ছাড়া কেস। নখ থেকে নেলপলিশ তুলে ফেলার মতো। আজ লাল , কাল সবুজ , পরশু অন্য কিছু। রিমুভার ঘসে দাও, ব্যাস সাফ।
এইসব ব্যাপারে বন্ধুদের সহযোগিতা দেখবার মতো। কি দরদ… কাঁদছিস কেন বোকার মতো। তুই কি ফেলনা নাকি… একদম পাত্তা দিবি না। যদি ফিরে আসে , তোর পায়ে ধরে , তবুও না…ওকে চিনিস না….একনম্বরের সেয়ানা। তানিয়ার সঙ্গে কি করে ছিল মনে নেই,,,, তোকে তখনই পইপই করে মানা করেছিলাম…. শুনলি না, এবার বোঝ… আরে ওর স্বভাবই ওই রকম, আজ এই ডালে কাল সেই ডালে,,, আমার কাছেও ভিড়তে এসেছিল… পাত্তাই দিইনি…
এইটা এক্কেবারে ডাহা মিথ্যে কথা। খুবই পাত্তা দিয়েছিল। ঘোরাঘুরি খাওয়াদাওয়া অন্ধকার সিনেমা হল , প্রিন্সেপ ঘাট ফুচকা আইসক্রিম বিরিয়ানি কিছুই বাদ যায়নি। ভালোই চলছিলো। রাতজাগা চ্যাটিং , আহ , কি আমুদে সেই সব দিন। হঠাৎ কোত্থেকে ওই তানিয়া এসে জুটলো। কে জানে কি আছে ওর মধ্যে। কি মায়া জানে , ঈশ্বর জানে কিনা সন্দেহ আছে। নিলো ফুসলিয়ে।
বাইক কার্তিক। আগেকার দিনে , মানে, সাদাকালো সিনেমার যুগে ছিল সাইকেল প্রেম। কার্তিক সাইকেল ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। পাশে পাশে চলেছে পারু। পুকুর পাড়ের প্রেম। সেদিন গেছে। এখন বাইক প্রেম। কার্তিক এলেন বাইক হাঁকিয়ে।পিছনে নাচের ভঙ্গিতে উঠে বসলেন , এযুগের লায়লা। লাস্যময়ী জিন্স টপ ম্যাচিং , বাহারী রঙিন ঢেউ খেলা চুল , চোখ নাক ঠোঁট সর্বত্র বিভিন্ন রঙের ছোঁয়া। আপাদমস্তক আর্টিফিশিয়াল। সার্কাসের জোকার। মুখোশের আড়ালে কে বাস করছে , কে জানে ! ভট ভট ভট , বাইক ভেসে গেল অজানা প্রেমের স্রোতে ।
বাপের কত আশা। দিনরাত পরিশ্রম করছে। সন্তান কে মানুষের মতো মানুষ করতে হবে। সন্তানের জীবন যেন তার মতো যন্ত্রণাদায়ক নরক না হয়।তাদের কোনও অভাব যেন না থাকে। চাহিদা যেন অপূর্ণ না থাকে।
এত স্নেহ ভালোবাসা ঈশ্বর কেন যে বাবা মায়ের মধ্যে সঞ্চারিত করেন , তা শুধু তিনিই বলতে পারবেন। এতটা না দিলেই বোধকরি ভালো করতেন। কেননা , বহু ক্ষেত্রেই এই দূর্বলতার খেসারত তাদের দিতে হয়। কষ্ট পেতে হয় , আক্ষেপ করতে হয় , অসহায় ভাবে।
চলো ডারলিং , আজ লঙ ড্রাইভ…
কোথায়…
বকখালি , নতুন ব্রিজ ওপেন হয়ে গেছে। নো ঝক্কি ঝামেলা , স্ট্রেট ঢুকে যাও…
নানা মাথা খারাপ… বাড়িতে বলা নেই , কিছু না, ইয়ার্কি নাকি…
ধুস,, ছাড়ো তো… ফিরে গিয়ে জানিয়ে দেবে, ব্যাস, আবার কি…
বাড়িতে ঢুকতে দেবে না… দুরদুর করে তাড়িয়ে দেবে…
দিক,,,আমি তো আছি… আমার বাড়িতে চলে আসবে… কদিন পরে তো আসতেই… নাহয় দুদিন আগেই আসবে…
সত্যি- সত্যি বলছ…
একেই বুঝি বলে , প্রেম অন্ধ। কোথায় চলেছি , কেন চলেছি, কিছুই জানিনা। শুধু চলেছি আর চলেছি। ভালবাসা আর ভাললাগার পার্থক্য বুঝিনা , বিশ্বাস আর অন্ধবিশ্বাস তফাৎ করিনা। অভিভাবকদের পরামর্শ বিষ। বন্ধুই সব। তারাই উপযুক্ত বুদ্ধি দাতা। অথচ, বন্ধু আর পরিচিতর ফারাক বুঝি না , কিংবা বুঝতে চাই না। উড়ুক্কু মন কেবলই ডানা মেলতে চায়। উড়ে যেতে চায় দূর অজানায়।
ফেরা কি যায় আর সেই অজানা আকাশ থেকে। থাকা কি যায় অক্ষত! নাকি লণ্ডভণ্ড ঝড় , ছিন্নভিন্ন শরীর মন, বর্তমান ভবিষ্যৎ। একি ছিনিমিনি খেলা জীবনের সঙ্গে। তবুও , পতঙ্গের স্বভাব। আগুনে ঝাঁপিয়ে মরাই তার নিয়তি।
বাইক প্রেম দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে সাগর কিনারে , যেখানে শুধুই বালি আর বালি। বালি পেড়িয়ে নোনা জল।
মধ্যরাত। বকখালির হোটেলের কামরায় , কার্তিক আর পারু। সুরা আর সিগারেটের গন্ধ ম ম করছে। শরীরের উত্তেজনা তখন দুজনেরই শিথিল হয়ে গেছে। কার্তিক হঠাৎ ব্যাস্ত হয়ে খাট থেকে নেমে , হ্যাঙারে ঝোলানো শার্টের বুক পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে তাকিয়ে রইল।
পারু কিছু বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো…
কি গো ওটা…
প্রেসক্রিপশন…
কার…
মায়ের, বাবা দিয়েছিল ওষুধ গুলো আনতে । শালা একদম ভুলে মেরে দিয়েছি…
এইরে, কিহবে…
কি হবে… যা হবার হবে… এসো বারান্দায় গিয়ে বসে দুজনে দু পেগ মারি… এসো ডারলিং ।
কাছেই সমুদ্রে জোয়ার এলো। আবার তট ভাসবে।
আলাপী মন এর সকল সদস্য এবং বন্ধুদের জানাই আমার আন্তরিক ভালবাসা শুভেচ্ছা।