অট্টহাসি
– রাখী চক্রবর্তী
– আমার ছেলেটা যে কোথায় গেল? দাদাবাবু দেখেছেন?
– না তো দেখিনি
– সকাল বেলায় কাজে আসার সময় ওকে মাঠে খেলতে দিয়ে আপনাদের বাড়িতে কাজ করতে এলাম। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল এখনও খোঁজ পেলাম না। আমি ভেবেছিলাম বোধহয় খেলে বাড়ি চলে গেছে। বাড়ি গিয়ে কত খুঁজলাম কোথাও পেলাম না।
আরতি বিমানদা’র বাড়িতে কাজ করে।আরতির একমাত্র ছেলে রবি। খুব ভালো ফুটবল খেলে।
বিমানদা’র একমাত্র সন্তান পিয়ালও খুব ভালো ফুটবল খেলত। একবছর আগে ফুটবল ম্যাচ খেলতে গিয়ে পায়ে এমন চোট পেয়েছে তার জন্য আজও বিছানায় শয্যাগত। তেরো বছরের কিশোরের স্বপ্ন আজ অস্তাচলে।ছেলের শোকে পাগলের মতো অবস্থা বিমানদা’র।রবি ও পিয়াল খুব ভালো বন্ধু। সমবয়সী ওরা। রবি ফুটবল খেলে বাড়ি যাবার সময় পিয়ালকে দেখে তবে বাড়ি যায়। এর অন্যথা আজও হয়নি।
আজ সকালে রবি পিয়ালকে দেখতে এসেছে তখন বিমানদা বলল, রবি আমার জলের ট্যাংকটা একটু পরিষ্কার করে দিবি।
– হ্যাঁ, দেব
– চল তাহলে ওপরে
বিমানদা রবিকে নিয়ে চারতলায় গেল।বিশাল বড় জলের ট্যাংক। রবি দেখেই ভয় পেয়ে গেল।
রবি বলল, কাকু অনেক জল আছে তো আর আমার ভীষণ ভয় লাগছে। আমি ট্যাংকের ভেতর ঢুকতে পারব না।
বিমানদা বলল, তুই একটু নেমে পরিষ্কার করবি তাতে ভয় কি?
রবি মনে সাহস নিয়ে ট্যাংকের ভেতর ঢুকলো। তখন বিমানদা ট্যাংকের ঢাকনা লক করে একতলায় এসে ট্যাংকের সুইচ অন করে দিল।
সন্ধ্যা হল রাত্রি হল আরতির চিন্তার শেষ নেই।বিমানদা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। হঠাৎ অট্টহাসিতে বিমানদার ঘুম ভেঙ্গে গেল।রাত্রি দু’টোর সময় বিমানদা বাথরুমে গেল।কল খুলতেই অট্টহাসিতে সারা ঘর ছেয়ে গেল। গোল… রবির গলা শুনেই কল বন্ধ করে দিল বিমানদা। আবার কল খুলল, তিন গোলে জিতলাম..
বিমানদা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে এসে অনিতা বৌদিকে সব বললো।অনিতা বৌদি বললো, রাতের বেলায় যতসব বুজরুকি। চলো দেখি।
বৌদি কল খুলল জল পড়ছে। কৈ কিছু বলছে না তো কেউ!
যেই বিমানদা কল খুললো আবার সেই অট্টহাসি। আমি আজকের খেলায় চারটে গোল দিয়েছি। বিমানদা আবার কল বন্ধ করে দিল। বুঝতে আর বাকি রইল না রবির সাথে বিমানদা কি নিষ্ঠুর কাজ করেছে। যাই হোক খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে অনিতা বৌদিকে নিয়ে চারতলায় গেল বিমানদা। কালকের সব ঘটনা বলল বৌদিকে। বৌদি তো ভাবতেই পারছে না এমন নোংরা কাজ বিমানদা করতে পারে।
জলের ট্যাংকের লকটা খুলল বিমানদা।খুলেই চমকে গেল কোথায় গেল রবির মৃতদেহ? আর ফুটবলটা কোথা থেকে এল।রবির হাতে তো ফুটবল ছিল না! ফুটবল তো সিঁড়িতে রাখা ছিল।
বিমানদা ভয়ে কাঁপতে শুরু করল। বৌদি বলল- এতো হিংসা করতে রবির ওপর! পিয়াল অসুস্থ বলে তুমি রবিকে বাঁচতে দিলে না। ছি ছি..
পিয়ালের শরীরটা আবার খারাপ হয়েছে।পাগলের প্রলাপ বকছে। গোল…গোল.. আমি জিতেছি। আর কি হাসি পিয়ালের।রবির মৃতদেহ কোথায় গেল বিমানদা সেই রহস্য উদ্ঘাটন করতে ব্যস্ত। ছেলের দিকে আর নজর নেই তার।
আরতি আর কাজে আসে না। এখন আরতি পাড়ার সব মাঠগুলোতে রবিকে খুঁজতে যায়। বিমানদা কল খুললেই রবির কণ্ঠস্বর শুনতে পায়। এই ঘটনার এক মাসের মধ্যে পিয়াল মারা যায়। বিমানদা এখন পাগলা গারদে আছে। বৌদি পুলিশকে সব ঘটনা বলেছে। কিন্তু পুলিশ আজও খুঁজে যাচ্ছে রবির মৃতদেহ ।