নবজাত
– বিশ্বদীপ মুখার্জী
কাজের মাসিকে বদলেছি কিছু মাস হলো। নতুন কাজের মাসি বেশি কথা বলে না। সব সময় মুখে অদ্ভুত বিষণ্ণতার ছাপ। কারণটা জানতে পারলাম মাসির মুখেই। কারণ জেনে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম আমি। মাসির ধর্ষিতা মেয়ে নাকি মা হয়েছে। জন্ম দিয়েছে এক কন্যা শিশুকে। তারপর থেকেই শুরু হয় গ্রামের লোকেদের উৎপাত। সেই শিশুটিকে নাকি বিক্রি করে দিতে হবে। খদ্দেরও নাকি আছে। দাম রাখা হয়েছে কুড়ি হাজার। সেই শিশুটি পাপ। গ্রামে থাকলে গ্রামের অকল্যাণ হবে। তাই তাকে সেই গ্রাম থেকে চিরবিদায় দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। যদি শিশুটিকে গ্রাম থেকে বিদায় না করা হয়, তাহলে সমস্ত পরিবারকে সেই গ্রাম ত্যাগ করতে হবে। পরিবার বলতে মাসি, তার স্বামী এবং তার ধর্ষিতা মেয়ে। তাহলে সেই ছোট্ট শিশুটির ভবিষ্যৎ কী হবে? কোনও নিষিদ্ধ পল্লী? বড় হয়ে নিজের শরীর বেচে পেটের ভাত জোগাড় করতে হবে তাকে? তারপর হয়তো তার অজানা বাপ কোনও দিন নিজের মেয়ের শরীরের সাথে খেলা করবে? সারা শরীর ঘিনঘিন করে উঠল আমার। মাসি চলে যাওয়ার পর সারা রাত চিন্তা করলাম। পরের দিন মাসির হাতে টাকার মোটা অংক গুঁজে দিয়ে বললাম – ‘তুমি গ্রাম ছেড়ে দাও। সেই শিশুর ভবিষ্যৎ তোমাদের হাতে। তার ভবিষ্যৎ রক্ষার দায়িত্ব তোমাদের।’
সমাপ্ত।