পরাণ মাঝির গল্প
-সুমিত মোদক
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দিক পরিবর্তন করে
নদী ;
আর নদীর সঙ্গে !
মানবজাতি ;
নদী , মানুষকে দিয়েছে এগিয়ে চলার মন্ত্র ;
নদী , মানুষকে দিয়েছে জীবনের উৎস সন্ধ্যান ,
চড়াচরভূমি ;
পরাণ মাঝি আকন্ঠ পান করে ধেনো ;
কিন্তু , নদীতে গেলে ধেনো ছোঁয় না ;
কারণ , নদী তার কাছে মা ;
আর , মায়ের কাছে কি নেশা করা যায় !
তবে , সে নদীর বুকেও নেশা করে ,
ভীষণ নেশা ,
নেশা তার ভাটিয়ালি ;
পারণ মাঝি খাঁড়ি পথে সাবলীল ভাবে
ঢুকিয়ে দেয় নৌকা ;
তার পর সঙ্গীদের সঙ্গে নেমে পড়ে কাঁকড়া ধরতে ;
এটাই তার বারমাস্যা ;
সে কারণে সে নদী বোঝে ,
খাঁড়ি বোঝে ,
বোঝে বাদাবনের কাদাজল ;
সেবার সে কোনরকমে বাঘের মুখ থেকে ফিরে এলো ;
ঘা শুকতে লেগে গেল কয়েক বছর ;
আজও সে নদীতে যায় ,
খাঁড়িতে নামে ,
কাঁকড়া ধরে ,
সুন্দরবনের কাঁকড়া ;
বিদেশে প্রচুর দাম ,
কিন্তু সে , সে দাম পায় না ;
পারণ মাঝি ওসব নিয়ে ভাবে না ;
ভাবে এ হেতাল , গড়ান জঙ্গল নিয়ে ,
মণি , মাতলা , বিদ্যাধরি নদী নিয়ে ,
খাঁড়ি নিয়ে ;
আর ভাবে বাঁধের এপারের বাসভূমি নিয়ে ;
যে দিন থেকে রেডিওতে শুনেছে
একদিন না একদিন সুন্দরবন জলের নীচে ডুবে যাবে !
সেদিন থেকে সে ভাবছে তার মতো করে ;
তার সেই ছোট নৌকায় করে ভেসে পড়বে
বাড়ির সকলকে নিয়ে
অন্য কোনো দ্বীপের উদ্দেশ্য ;
পরাণ মাঝি কথা গুলো একদিন আমাকে বলেছিল
সরলতার সঙ্গে ;
সেদিন থেকে আমিও ভাবছি ….
ভাবছি , পরাণ মাঝির তো নৌকা আছে ;
আমারতো সেটাও নেই ;
পরাণ মাঝিরা বাঁচার স্বপ্ন দেখে ;
পরাণ মাঝিরা বেঁচে থাকে চিরকাল ।।