প্রেম-অপ্রেম
– অজয় চৌবে
কি হলো গোমড়া মুখ করে কি ভাবছো? অর্ক প্রশ্ন করলো ঝিমলীকে। ঝিমলী বললো-আচ্ছা সরকারী চাকুরী জুটলে ঠাঁটবাট আচার আচরণ কেন পাল্টে যায়?অর্ক বুঝতে পারলো গোমড়া মুখ করে থাকার আসল কারণ। তবুও জানতে চাইলো- কেন? কি হয়েছে? ঝিমলী বললো-সুবীর যখন থেকে পুলিশের চাকরীটা পেয়েছে তখন থেকেই আমার সাথে আগের মতো আর গুরুত্ব দিয়ে কথা বলছে না।সবসময় আমাকে না চেনার মতো ভান করছে। অর্ক মুচকি হেসে বললো -সম্ভবত পিছন দরজা দিয়ে চাকরীটা অর্জন করেছে।ঝিমলী বললো- কেন? অর্ক বললো- যদি নিজের যোগ্যতায় পরিশ্রম করে চাকরীটা অর্জন করতো তবে হয়তো তাঁর ঠাঁটবাট আচার আচরণের অদ্ভুত পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যেতো না। ঝিমলী বললো- সুবীর আর আমার সম্পর্কের বয়স প্রায় তিন বছর হয়ে গেলো। আমি যতোবার তাঁকে বলেছি- এবার আমাদের বিয়ে করা উচিৎ ততোবার বলেছে- না, আগে একটা সরকারী চাকরী অর্জন করি তারপর বিয়ে নিয়ে চিন্তাভাবনা করবো। অর্ক বললো- এবার কি করবে?সুবীর তো তোমাকে আর কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। ঝিমলী অর্কর হাতটা ধরে বললো- তোমাকে পাশে চাই। অর্ক বললো- আমি তো পাশেই আছি। বলো কি রকম সাহয্যে চাই তোমার? ঝিমলী বললো- আমি একবার সুবীরের বাড়ি যাবো। তোমাকেও আমার সাথে যেতে হবে। অর্ক বললো- যাবো। বলো কবে যাবে? ঝিমলী বললো- আজ তো মঙ্গলবার। সামনের রবিবার দিন চলো। অর্ক বললো- ঠিক আছে। তারপর রবিবার দিন ঝিমলী আর অর্ক সুবীরের বাড়ি পৌঁছে দেখলো- বাড়ির সদর দরজায় তালা ঝুলছে।অর্ক ঝাঁ চকচকে দোতলা বাড়ীটার পানে চেয়ে ঝিমলীকে বললো- সুবীরের বাবা কি করেন? ঝিমলী বললো- বাবা রেলের টিকিট পরীক্ষক আর মা কলেজের ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপিকা। অর্কর মুখে মুচকি হাসি। ঝিমলী বললো- হাসছো কেন? অর্ক বললো- এমনি। সুবীর নিশ্চয় প্রায়ই তাঁদের রাজকীয় জীবনযাপনের গল্প তোমার সাথে করতো? ঝিমলী বললো- হ্যাঁ।
– সুবীরের সাথে তোমার প্রথম পরিচয়টা হলো কিভাবে? ঝিমলী বললো- ফেসবুক থেকে। আমাদের তিনবছরের সম্পর্কের মধ্যে প্রথম একবছর একে অপরের সাথে মুখোমুখি দেখা হয়নি। তারপর বছর দু’য়েক আগে আমরা দুর্গাপূজোর বিজয়া দশমীর দিন প্রথম দেখা করি। তারপর মাঝে মাঝে প্রায়ই আমরা দেখা করতাম। অর্ক বললো- জানি। সম্ভবত তোমরা দু’বার দীঘা থেকেও ঘুরে এসেছো? ঝিমলী বললো- হ্যাঁ।
অর্ক বললো- আচ্ছা! আমার সাথে তোমার প্রথম পরিচয়টা মনে আছে?
ঝিমলী বললো- হুমম মনে আছে। কলেজে প্রথম বছর নবীনবরণ অনুষ্টানের দিন। অর্ক বললো- হুমম। ঝিমলী আরেকবার সুবীরের মোবাইলে রিং করার চেস্টা করলো কিন্তু ব্যস্ততা ছাড়া আর কোনো শব্দ শুনতে পাওয়া গেলো না। অর্ক বললো- ফালতু চেষ্টা করছো। সুবীর তোমার নম্বরটা ব্লক করে দিয়েছে। দাও আমি একবার চেষ্টা করে দেখি আমার মোবাইল থেকে। ঝিমলী অর্ককে সুবীরের নম্বরটা দিয়ে বললো- দাও আমাকে তোমার মোবাইলটা দাও। ঝিমলী অর্কর মোবাইল থেকে সুবীরকে রিং করতেই অপার প্রান্ত থেকে একটা মেয়েলী আওয়াজ ভেসে এলো- কে বলছেন? ঝিমলীর গলার আওয়াজটা বুঁজে আসছিলো। অর্ক ঝটপট মোবাইলটা নিজের হাতে নিয়ে বললো- সুবীর বলছো? অপারপ্রান্ত থেকে মেয়েটি বললো- না সুবীর এখন রুমে নেই। অর্ক বললো- আপনি কে বলছেন? মেয়েটি জানতে চাইলো- কেন বলুন তো? অর্ক বললো- সম্পর্কের নামটা জানা ভীষণ জরুরী তাই জানতে চাইছি।
মেয়েটি বললো- আপনি কে বলছেন সেটা আগে বলুন? অর্ক বললো- সুবীরের বন্ধু।আমার নাম অর্ক মুখার্জী। মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললো- আচ্ছা! আপনি কি সুবীরের একেবারেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু? অর্ক বললো- হ্যাঁ। কিন্তু কেনো বলুন তো?
মেয়েটি বললো- তবে সুবীর আপনাকে আমাদের বিয়েতে নেমন্তন্ন করেনি কেন?
অর্ক নিশ্চুপ। ঝিমলী মনমরা হয়ে একটা গাছে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মোবাইলের অপার প্রান্ত থেকে মেয়েটি ক্রমাগত hello hello hello করে চলেছে।অর্ক আর কোনো কথা না বলেই মোবাইলটা সুইচ অফ করে দিলো। তারপর ঝিমলীকে বললো- একটা বাজে খবর আছে। সুবীর বিয়ে করেছে। ঝিমলী নিশ্চুপ, হতভম্ব। অর্ক বললো- জানতাম সুবীর তোমার সাথে প্রতারণা করবে। কিন্তু কখনও কোনোদিন তোমাকে সে কথা বলার সাহস পাইনি।কারণ তুমি সুবীরের প্রেমে অন্ধ হয়ে ছিলে। তোমার মা বাবাও যদি সুবীরের সাথে মেলামেশা করতে বারণ করতো তবুও সেসময় তাঁদের আদেশ তুমি মান্য করতে না। ঝিমলী বললো- চুপ করো। সত্যি বলছি আমার খুব ভুল হয়েছে। এইমুহূর্তে নিজেকে ভীষণ বোকা বোকা মনে হচ্ছে। এবার থেকে ফেসবুকে আর কখনও কোনোদিনও কোনো অচেনা ছেলের সাথে আর কথা বলবো না।
অর্ক মুচকি হেসে বললো-ৎঅদ্ভুত সিন্ধান্ত তোমার। আচ্ছা! সব ছেলেরাই কি সুবীরের মতো একই মানসিকতার হয়?
ঝিমলী বললো- জানি। তবুও আমি এবার থেকে আর কোনো অপরিচিত ছেলের সাথে কথা বলবো না। তারপর বেশ কিছুটা সময় নীরবতা পালনের পর ঝিমলী হঠাৎ অর্ককে প্রশ্ন করলো- আচ্ছা ! তোমার সাথে আমার সম্পর্কটা ঠিক কি ধরনের বলো তো?
অর্কর মুখে কোনো শব্দ নেই। মনে মনে বিড়বিড় করে নিজেকে নিজেই বললো- থাক না গোপন প্রেম নির্বাক বোবা হয়েই চিরদিন।
যে সম্পর্কটা বন্ধুত্বর সুন্দর মহান তকমা পেয়েছে সেই সম্পর্কটাকে প্রেমিকের তকমা দিয়ে সঙ্কুচিত করতে যে চাই না কিছুতেই। ঝিমলী বললো- কি হলো? আমি কিছু একটা প্রশ্ন করেছি জবাব দাও। অর্ক ঝিমলীর চোখে চোখ রেখে মুচকি হেসে বললো- আমাদের সম্পর্কটা হলো একেবারেই নির্ভেজাল খাঁটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ঝিমলী বললো- ঠিক। সেটাই যেন চিরদিন অটুট থাকে। অর্ক ঝিমলীর চোখে চোখ রেখে বললো- কথা দিলাম থাকবে।
(সমাপ্ত)