ধারাবাহিক- অজানা অভিশাপ (পর্ব-৩)

অজানা অভিশাপ (পর্ব-৩)
-সুপর্ণা নাথ

 

 

তিয়াসের পাশে বসে ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, যেন কত ক্লান্ত ও। ডাকতে ইচ্ছে হলো না কিন্তু, এভাবে খাওয়া দাওয়া না করলেও যে ….
আলতো করে কপালে হাত দিলাম, কি ঠান্ডা কপালটা !! ঘরটা এমন অন্ধকূপ করে রেখেছে তার উপর শীতের শুরু, একটু রোদ ঘরে না আসলে ভালো লাগে নাকি! একটু আলো হওয়া ঘরে না ঢুকলে ঘরে কেমন যেন একটা গুমো গন্ধ লাগে। সন্তর্পণে পর্দার উপর থেকে বেড শিটটা সরিয়ে পর্দা খুলে দিলাম, পড়ন্ত বিকেলে সোনালী আলো পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা খেয়ে যেন হুড়মুড় করে ঢুকে এলো ঘরে। মুহূর্তে ঘর আলোকিত, কাঁচের দরজাটাও একটু খুলে দিলাম হালকা রোদ মাখা বাতাস কিছু বুনো ফুলের গন্ধ দিয়ে মুহূর্তে ঘরটাকে ভরিয়ে দিলো।
পেছন ফিরে দেখি তিয়াসের ঘুম ভেঙেছে। ফলের প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে একটা চিরুনি নিয়ে ওর চুলটা আঁচড়ে দেয়ার জন্য বসলাম। কিন্তু ওর চোখে মুখে ভীষণ অস্বস্তি। যেন আমার ঘরে আসা টা ওর ভালো লাগেনি, কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। আমি গলার স্বর আরো খানিক নরম করে বললাম,
– অর্কর সাথে কি হয়েছে রে?
– কি হবে? কিছু না।
– তাহলে কথা বলিস না কেন? ও চিন্তা করছে যে।
– আমাদের পার্সোনাল স্পেসে ঢোকার তোমার দরকার নেই তো। আমরাই সর্ট আউট করে নেব।
এত রুক্ষ জবাবের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।
আর মা, আমাকে না বলে ব্যালকনির দরজা, পর্দা খুলেছো কেন?
– কত হওয়া আর আলো আসছে দেখ।
– কোনো দরকার নেই। আমার ঘরটা আমার মতই থাকতে দাও।
আমার খারাপ লাগাটা প্রকাশ করলাম না।
– আচ্ছা তুই যে ওই বাড়িতে কাকে দেখতে পেতিস, এখনো দেখা যায়?
– কে আছে? কাউকে দেখা যায় না আর কোনোদিন যায়নি।
– কি! তুইই তো কতবার বলেছিলি!
– মজা করেছিলাম, মিথ্যে কথা।
– কি? (খুব অবাক হই আমি)
– হম জাস্ট গল্প বানাচ্ছিলাম।
– তাই? (আমার অবিশ্বাসটা গলার স্বরে আসতে দিলাম না)

আমি কথায় কথায় ওর কেনা বাইনোকুলারটা নিয়ে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে যাই, চোখে বাইনোকুলারটা লাগিয়ে বাড়িটার দিকে দেখার চেষ্টা করি। মুহুর্তের মধ্যে একটা ভীষণ জোর হ্যাঁচকা দিয়ে তিয়াস আমার হাত টেনে ধরে, বাইনোকুলারটা হাত থেকে ছিটকে পড়ে যায় দরজার বাইরে করিডোরে! আমি তো হতভম্ব!
দেখি তিয়াসের মুখে প্রচন্ড রাগ আর বিরক্তি
– মা, তুমি বারণ বোঝনা? প্রাইভেসি বোঝো না? বলছি আমার ভালো লাগছে না তবু …তবু তুমি …
আমার উত্তর দেয়ার ভাষা নেই, ওর চোখ দু’টো বড্ড অচেনা লাগছে। এটা আমার তিয়াস!

চেঁচামেচি শুনে মারিয়ানা উঠে এসেছিল, আমাকে বেরোতে দেখে, আমার হাত দু’টো চেপে ধরে বলল,
– ম্যাডাম, চিন্তা করো না। দিদির মনে হয় হওয়া লেগেছে, বলেছিলাম না Casa de monte অভিশপ্ত। রাত দিন ওদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে…. তুমি চিন্তা করোনা , আমার গ্র্যানি অনেক দাবাই জানে কালই এনে দেব। সব ঠিক হয়ে যাবে।
ওর সব কথা ঠিক ঠাক কানে ঢুকলো না, শুধু বললাম- হুম।

সন্ধ্যে থেকে খুব ঝড় জল শুরু হয়েছে, অরি এখনো আসেনি। কি যেন এক অশনি সংকেতের বার্তা দিচ্ছে প্রকৃতি। কারেন্ট নেই সাথে ফোনের লাইনেও প্রবলেম করছে এই খারাপ ওয়েদারের জন্য। অদ্রিয়ানোকে ফোন করার চেষ্টা করছিলাম, মারিয়ানা বললো ও পাশের শহরে গেছে ওর রিলেটিভের বাড়ী আজ ফিরবে না।
তিয়াস এর ঘরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই আমার। তবুও উপরে একা আছে তাই একটা মোম নিয়ে দিতে গেলাম। দরজা অল্প ফাঁক করে বললো, মাথা ধরেছে তাই ওষুধ খেয়ে শুয়ে আছে ওর আলো ভালো লাগছে না। আর বলল বিকেলে যে ফলগুলো নিয়ে গেছিলাম ওগুলো খেয়ে নেবে, রাতে যেন ডিনারের জন্য ওকে না ডাকা হয়। ও একটু ঘুমোতে চায়, মাইগ্রেনের ওষুধ খেয়ে।
অগত্যা আমি আর মারিয়ানা কয়েকটা মোম বাতি জ্বেলে বসে রইলাম।

বাইরে প্রকৃতির ঝড় আমার মনের ভেতরে যেন ঢুকে পড়েছে, তোলপাড় হচ্ছে ভেতরটা। কিছু একটা ভুল, কিছু একটা বেঠিক হচ্ছে কিন্তু সেটা কি বুঝতে পারছি না। তিয়াস বদলে যাচ্ছে, কিন্তু কেন? ওর আর অর্কর কিছু? কিন্তু ও বরাবরই আমাদের কাছে খুব ওপেন কিছু লুকাতো না। নাকি সমস্যা আরো অন্য কোথাও! অফিসের কিছু কি? কিন্তু তাহলে এই কয় দিন এত আনন্দ করে ছিলো কি করে! নাকি … ওই বাড়ির বিষয় কিছু? এত আগ্রহ ছিল আর আজ সব আগ্রহ ভীষণ রকম অনীহায় পরিণত; কারণটা কি? ঘড়িতে প্রায় সাড়ে দশটা, গাড়ির শব্দে আমার চিন্তার জাল কেটে গেলো। অরি এলো নিশ্চয়ই? মারিয়ানা দরজা খুলে একটা ছাতা নিয়ে বেরিয়ে গেলো। আমাকে একা রেখে আজ ও বাড়ি যেতে চায়নি, আমি একটা পাঁচ সেলের তেজলো টর্চ নিয়ে দরজার কাছে এগিয়ে গেলাম, ঝড় একটু কমেছে কিন্তু বৃষ্টি ভালোই জোরে হচ্ছে, টর্চের আলোতে অরির জমায় কিছু কাদা আর রক্তের দাগ দেখলাম; আমি ভয়ে চেঁচিয়ে উঠি,
– অরি কি হয়েছে তোমার, জমায় কাদা জল রক্ত কেন? কোনো এক্সিডেন্ট ….
ও আমার ব্যাকুলতা বুঝে আমাকে তাড়াতাড়ি শান্ত করে বলে,
— আমি একদম ফিট আছি। সব বলছি একটু স্নান করে আসি আর ডিনারটা সার্ভ করো, খুব খিদে পেয়েছে। আমি একটু আস্বস্ত হলাম।

মারিয়ানার হাতে দারওয়ানজির খাবারটা পাঠিয়ে দিলাম আমি দরজার কাছে একটা আলো নিয়ে দাঁড়ালাম। ও একটা টর্চ আর ছাতা নিয়ে আউট হাউসের দিকে গেলো, এটা বাড়ির একটু পেছন দিকে, আলো সরাসরি মারিয়ানার উপর না পড়লেও ওর যাওয়ার রাস্তা আর আশপাশটা আলোকিত করছে। এমনিতেই মেয়েটা অন্ধকারে ভয় পায়। আলোর অস্তিত্বটা ওকে ভরসা দেবে, ও একা নেই। খাবারটা দিয়ে ফিরে আসার সময় হঠাৎ যেন থমকে যায়, পরের মুহূর্তেই উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে পালিয়ে আসে আমাকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে দমাস করে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে হাঁফাতে থাকে। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। আমি বললাম,
– ভয়ের কি আছে আমি ছিলাম তো? পাগলী মেয়ে।
– ম্যাডাম, শতাব্দী প্রাচীন অভিশাপ আবার ফিরে এসেছে। জানিনা এর শেষ কোথায়? খুব সাবধানে থাকতে হবে।
– কি বলছো, কিছুই বুঝতে পারছি না।
– অশুভ ছায়া আবার ফিরে এসেছে। আমি আউট হাউস থেকে ফেয়ার পথে দেখলাম কেউ একজন খুব দ্রুত গতিতে মাত্র দু’টো লাফে পুরো কম্পাউন্ডটা টপকে বেরিয়ে গেলো! কোনো মানুষ বা পশুর পক্ষে এটা সম্ভব নয়।

আমি আরো কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই অরিন্দম স্নান সেরে খাবার টেবিলে এসে বসে।তাই কথা সেখানেই বন্ধ হয়ে যায়। খেতে বসে অরিকে জিজ্ঞেস করি এবার বলো কি হয়েছিল …
– আর বলো না, আজ অফিসে সারাদিনই কানাঘুষো শুনছিলাম কি নাকি এক পুরোনো আতঙ্ক আবার ফিরে এসেছে। বিশেষত যারা এখানে বংশ পরম্পরায় বাস করে তারাই বলছিল। বহু বছর প্রায় দু’শো বছর আগে এই জনপদ নাকি শেষ হতে বসেছিল কোনো এক অশুভ ছায়ার প্রকোপে। অনেক ঝামেলার পর প্রিস্টদের সাহায্যে তখন সবাই মুক্তি পায়। কিন্তু প্রকৃত বিষয়টা ঠিক জানি না। কেন না যারা বলছে তারা সবাই কিংবদন্তির গল্প শুনেছে। আর জানোই তো কিংবদন্তির গল্পে সত্যির উপর কত রং চড়ে!
– হম, মারিয়ানাও বলছিল। তারপর?
– বলছি, কিন্তু মাম্মা? খেয়েছে ও?
– না ওর মাইগ্রেনের যন্ত্রণা হচ্ছে তাই শুয়ে পড়েছে।
– ওহ্, আচ্ছা যা বলছিলাম, হঠাৎ আমার এক কলিগের বাড়ি থেকে খবর আসে তার বাড়িতে কি একটা মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি হয়েছে এই ওয়েদারের জন্য গাড়ি ঘোড়াও কম চলছে, আমিই তাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিলাম। পাহাড়ি রাস্তায় হাজারটা বাঁক তার উপর বৃষ্টি। তাই ধীরে ধীরেই ড্রাইভ করছিলাম ফেরার পথে, হঠাৎ একটা বাঁক ঘুরতেই হেডলাইটের আলোটা কারো উপর পড়া মাত্রই সে যেন এক লাফে খাদে মিলিয়ে গেলো, কোনো মানুষ বা জন্তু অমন ভাবে আর অতো জলদি লাফাতে পারেনা। খুব চমকে গেছিলাম, ঘোরটা কাটতেই গাড়ির আলোতে দেখি একটা মানুষ উন্ডেড হয়ে পড়ে আছে তাড়াতাড়ি কাছে গিয়ে দেখি তার বাম পায়ের থাই- এর কাছটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে যেন এক খাবলা মাংস কেউ ছিঁড়ে নিয়েছে। তাকে নিয়ে হাসপাতালে এডমিট করে তারপর এলাম। ওই যে প্রাণীটা লাফিয়ে পালিয়ে গেছিলো, মানুষটা তারই শিকার ছিল হয়তো
– কি বলছো!
মারিয়ানা খাবার টেবিলের পাশের ছিল, নিজের মনেই বিড়বিড় করলো,
– অশুভ ছায়া, আবার ফিরে এসেছে!

– মা….মা , মাগো..
– তিয়াস , কোথায় তুই মা? চারদিকে এত অন্ধকার আমি তোকে দেখতে পাচ্ছি না যে ..
– এই তো এই জানালার দিকে দেখো মা।
– কোন জানালা? পাচ্ছিনা দেখতে তো!
– দূরবীনটা নিয়ে দেখো, জঙ্গলের বাড়ির জানলায় দেখো
আমি চমকে উঠলাম, তুই ওখানে?
দূরবীনটা নিয়ে চোখে লাগাই … ওই …ওই তো তিয়াস ওই Casa de monte এর জানলায়! কিন্তু এক বিশাল ছায়া হঠাৎ ওর পেছনে এসে এক ঝটকায় ওকে টেনে নিয়ে গেলো…
আমি তিয়াস বলে আর্তনাদ করে উঠি।
ঘুমটা ভেঙে যায়, সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে, উফফ কি বীভৎস স্বপ্ন ছিল! আমার চিৎকারে অরিও জেগে গেছে, আমাকে শান্ত করে বললো,
– আমি দেখে আসছি তিয়াসের ঘরে গিয়ে।
কিছু পরে এসে বললো,
– নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে, আমি আর ডাকিনি।
অরি শুয়ে পড়লো, আমি বাকি রাত ঘুমোতে পারলাম না। অদ্ভুত স্বপ্ন? কেন এমন দেখলাম?
কি অশুভ ছায়া?
পড়শী দের তিনটে Husky, দারোয়ানজির গ্রামের পশু আর অরির দেখা উন্ডেড মানুষটা …. সবার শিকার কি এক? এরই কাজ নাকি পুরোটাই কো ইনসিডেন্ট?
কে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে?
এসব ভাবতে ভাবতে ভোরের দিকে চোখ লেগে গেছিলো।

সকালে উঠতে দেরি হলো। ঘুম ভাঙলোই অদ্রিয়ানো আর মারিয়ানার গলার স্বরে, আবার দু’টোতে ঝগড়া করছে। ফ্রেশ হয়ে নীচে এলাম। মারিয়ানা ব্রেকফাস্ট দিয়ে বললো,
-sir বেরিয়ে গ্যাছেন, আপনার রাতে ঘুম হয়নি তাই ডাকতে মানা করেছিলেন, আর দিদির ঘরে খাবার দিয়ে এসেছি উনি আসবেন না বললেন।
অদ্রিয়ানো বললো,
– ভারী চিন্তার ব্যাপার ম্যাডাম, কোনো এক জংলি জানোয়ার লোক্যালিটিতে এসে পড়েছে, মানুষ আর অন্য পশুদের উপর হামলা করেছে।
– কি ব্যাপার ঠিক করে বলো তো?
– আমি পাশের শহরে গেছিলাম, আমার এক কাকা থাকে, ওনার ডেয়ারি ফার্ম আছে। তো হঠাৎ এক সকালে দেখেন ফার্ম এর উপরের টালির চাল ভাঙা সারা ফার্ম লন্ড ভন্ড অন্তত তিন- চারটে গরুর র ছিন্ন ভিন্ন রক্তে মাখা দেহাংশ চারদিকে ছড়িয়ে।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় যে, রাতে এত বড় এট্যাক হওয়া সত্ত্বেও কোনো গরুর ডাক বা দৌড়াদৌড়ির শব্দ পাওয়া যায়নি! সবাই খুব ভয় পেয়ে আছে। জন্তুটা না ধরা পড়লে ….
মারিয়ানা মাঝ পথে থামিয়ে বললো,
– জন্তু না, অশুভ ছায়া।
অদ্রিয়ানো আবার ওর সাথে তর্ক শুরু করলো। তবে মারিয়ানার চোখের ভাষায় অদ্ভুত এক দৃঢ়তা দেখলাম আজ। আমাকে আজ এই বিষয়টা জানতেই হবে। কে এই অশুভ ছায়া কি তার গল্প? মারিয়ানা আর অদ্রিয়ানোকে জিজ্ঞেস করলাম এখানের পুরোনো কিংবদন্তি আর ইতিহাস কার থেকে জানা যাবে?
মারিয়ানা বলল তার দিদু অনেক কিছু জানে।
অদ্রিয়ানো ওর কথা উড়িয়ে দিয়ে বললো,
– এখানে চার্চের পুরোনো পোপ, এখন তিনি বয়সের ভারে ন্যুব্জ, প্রায় নব্বই বছর বয়স, তবে মাথা এখনো পরিষ্কার। উনি আপনার উত্তর জানলেও জানতে পারেন। আমি ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি।
ঠিক করলাম আমি যাব…যাবোই।

কিন্তু তিয়াস? দিন দিন মেয়েটা এভাবে বদলে যাচ্ছে কেন? আমার মন কু ডাকছে। আজ ওর সাথে আমাকে কথা বলতেই হবে যে করেই হোক।
হঠাৎ পেছন থেকে তিয়াসের গলা;
– মা খেতে দাও, খুব খিদে পেয়েছে।
যাক, নিজে খেতে চাইছে, তাহলে বোধহয় ….
– আয় বস।
ও খাচ্ছিল নিজের মনে, অদ্রিয়ানো আর মারিয়ানার সাথে টুকটাক কথাও বলছিল, আমি অপলক ওকে দেখছিলাম। সব কিছুই স্বাভাবিক, আমার চিন্তা কমে যাওয়ার কথা, কিন্তু …. কি যেন একটা অদেখা কারণ মনে সন্দেহের কাঁটা ফোটাচ্ছে।
ওর চোখ দু’টো বড্ড ম্লান আর ঠোঁট যেন শুকনো রুক্ষ ফাটা ফাটা, বিবর্ণ নিষ্প্রাণ!
ওর সাথে চোখাচোখি হতেই নজর ঘোরালাম। কিন্তু ও বোধহয় বুঝেছে বিষয়টা। তাই বললো,
– মারিয়ানা একটা চিরুনি আর তেল এনে দাও না, মা আমার মাথাটা একটু ম্যাসাজ করে দিক।
স্বাভাবিক হচ্ছে ও … কিন্তু আমার কেন মনে হচ্ছে যে ও শুধুমাত্র স্বাভাবিক হওয়ার অভিনয় করছে!

তেল লাগাতে গিয়ে দেখলাম, চুলটা ভীষণ নির্জীব আর রুক্ষ যেন কতকাল কোনো যত্ন পায়নি, যেন ধুলো মাখা আর বিশ্রী একটা গন্ধ আসছে। চুলে হাত দিয়েই চমকে উঠলাম, একটু টান লাগতেই এক গোছা চুল উঠে আমার হাতে চলে এলো! কিন্তু ওর কোনো ভাবান্তর নেই! এভাবে কারো চুল উঠতে পারে না। অতি সন্তর্পণে চুলটা আঁচড়ে বেঁধে দেয়ার সময় যা দেখলাম তাতে আমার শিরদাঁড়া দিয়ে বরফ গলা জল নেমে গেলো আর ঠিক সেই সময় মারিয়ানা উপর থেকে প্রায় ছুট্টে নীচে নেমে আসে হাতে একটা বিছানার চাদর। চোখের আতঙ্কের ভাষা বলছে ও আমাকে কিছু বলতে চায় … আমি আন্দাজ করতে পারছি কথাটা কি বিষয়। কিন্তু মনে প্রানে চাইছি আমার ধারণা যেন ভুল হয়।

চলবে…….

Loading

Leave A Comment