কবিতা- এখন আমি একা

এখন আমি একা

-বিকাশ দাস 

 

 

তোমাকে দেখেছি সাত সকালে
যখন পুবের আকাশ ঘাম ছিলো তরল আলোয় ।
ছ্যাতলা ধরা পুকুর পারে
বাঁধানো সিড়িতে বসে চিকন চুলের গোছা খানি
উল্টে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিলে নিজস্ব কায়দায় ।
অনন্ত পিপাসায় পুকুরের শ্যাওলার মতো
আমিও দেখেছি তোমাকে বারবার
অকারণে দেখার একটা আলাদা স্বাদ যেমন ।
রুপোর তোড়ায় বাঁধা তোমার পায়ের পাতা
ডুবিয়ে ছিলো সবুজ জলে,
অলজ্জ জল তোমায় ছুঁয়ে ছুঁয়ে সুখ পেয়েছিলো
অধিকার আঁকড়ে রাখার মতো
আর বাকি মানুষের মতো সেদিন আমারও ঈর্ষা হয়েছিলো ।

রোজ তোমায় দেখে চোখ জুড়িয়েছি
চোখ জুড়ানোর আড়ালে আমার বুক পুড়েছিলো
অনেক দিন পর হদিশ পেয়েছিলাম ।
তোমার দু’পায়ের নিচে রাঙা পথের
আলতা ধুলো লেগে লেগে আকাশ হয়েছিলো
অবান্তর চঞ্চল তোমার নুপুরের ছন্দে
উলসে দিয়েছিলো আমার শরীর ।
ছোটো ছোটো রোদ বৃষ্টি খুব সাবধানে
বাঁধা শাড়ির আঁচল খুলে
জোড়া পদ্মের নির্জন সরোবরের খোলা ঘাটে
দেখেছিলাম আমার বাসাবাড়ি ।
সময়ের মতো আমিও চলেছিলাম দ্রুত ঢালা অন্ধকারের বুক নিংড়ে
তোমার চিবুকে উগরে থাকা বাতাস গন্ধ মাধুরী
ঠিকরে পড়েছিলো আমার শরীরের পোশাকে,
মধুলগ্ন সন্ধার চৌকাঠে থমকে এসে দাঁড়িয়েছিলো ।
তোমার মৌন ইশারায় চাঁদ ধুয়েছিলো,
তার দু’চোখ তোমার গা ভেজানো পুকুর জলে
হারিয়েছিলো নিজেকে সেই অতলান্তে ।
রূপ লোভাতুর পলকহীন আমার দু’চোখ
ডুবেছিলো পা নাচানো জল তরঙ্গে ।
এখন দেখতে পাচ্ছি
সূর্য সপ্তরাঙা বর্ণচ্ছটা নিঃশেষ করে ঘুমিয়ে পড়েছে
পৃথিবীর সবুজ পালঙ্কে ।
আর, আমি এখন একা ।

Loading

Leave A Comment