অণু গল্প

অণু গল্প- মালতী

মালতী

-অমল দাস

 

 

মালতীকে ছোট বয়সেই রমেশে এনেছিল। সেই থেকেই মালতী রমেশের চোখের মণি।তার সংসারে বৌ শ্যামলা আর বছর পাঁচের মেয়ে সম্প্রীতি।মালতী যখন এসেছে, তখন সম্প্রীতি ঘরে আসেনি।আলোর রশ্মি মালতীই এনেছিল।স্বামী-স্ত্রী দু’জনার সহচর্যে আদরে আহ্লাদে বেশ বেড়ে উঠেছে। শ্যামলা নিজের গর্ভজাতকে জন্ম দিলে দু’জন একই সাথে পালিত হতে থাকলো। একটা সময় দু-বছর পরপর খরা হওয়ার দরুন কৃষি ভালো হয়নি। খুব আর্থিক সংকটে দিন কাটাতে হয়। সেই বছর দু-একবার মালতীকে বেচে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল রমেশ। পারেনি। যখনি মালতীর গলার দড়ি খুলে ক্রেতার হাতে দেওয়া হত, তখনই সে হাম্বা হাম্বা করে কান্না জুড়ে দিত। আর দু-চোখ জলে ভেসে যেত। রমেশ-শ্যামলা শেষমেশ অনটন মেনে নিয়েছিল। হেরে গিয়েছিল মালতীর আর্তনাদের কাছে।

কিন্তু ঈশ্বরের কি নির্মম খেলা! তা না হলে রমেশের ফুটফুটে মেয়ে সম্প্রীতি কি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়? চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার। গরিবের সে সম্বল কই। রাতে মালতীকে গোয়ালে খাবার দিতে দিতে চোখের জলে ফেলেছিল রমেশ। কিন্তু মালতীর নজর এড়াতে পারেনি। সে তার প্রভুর অন্তরের ব্যথা অনুভব করতে পেরেছিল। শুধু দুবার নিজের জিভ দিয়ে রমেশের চোখ মুছে দিয়েছিল নীরবে। রমেশের অসহায়তার কথা শুনে এক ক্রেতা সকালেই এসে হাজির। রমেশ আজ মালতীর দড়ি খুলতে গেলো না। ক্রেতার দেওয়া তিরিশ হাজার টাকা নিয়ে বসে রইল দাওয়ায়। শ্যামলাও নিশ্চুপ মেয়ের শয্যার পাশে। যখন একটু জ্ঞানে এলো, তখন রমেশ কাঁদতে কাঁদতে ছুটে যায় গোয়ালে– ‘তোমরা ওকে নিওনা! আমার যা হয় হবে। ওকে তোমরা নিওনা…’

না! আজ আর তার কান্না শোনার কেউ নেই গোয়ালে।মালতী অনেক আগেই নতুন মালিকের সাথে চলে গেছে। শুধু আজ আর বিদায় কালে চোখের জলে হাম্বা স্বরে ডাকে নি…       

Loading

2 Comments

Leave A Comment

You cannot copy content of this page