Site icon আলাপী মন

গল্প- ভালোবাসার আশ্রয়

ভালোবাসার আশ্রয় 

-অঞ্জনা গোড়িয়া

 

 

ভালোবাসা ভালোবাসা ভালোবাসা। ভালোবাসা নাকি ছলনা? আর সহ্য হয়না এই কথাটা শুনতে অহনার ।ছোট থেকেই এই শব্দ টাকেই বেশী ঘৃনা করে । কেন জানে না। শুনলেই মনে হয় যত সব ন্যাকামো আর ছলনা । কি হয় ভালোবাসলে? কেন ভালোবাসে?কি হয় এই শব্দটার মানে? অনেক আদর? অনেক স্নেহ? নাকি প্রাণভরা আনন্দ খুশি? কোন টা? কোনোটায় তো পেল না অহনা।
যেদিন জন্মে ছিল, মা টা গেল মরে, বাবার প্রচুর অর্থ। একটু মন খারাপ ছিল বটে,কদিন আর? শুনেছে ছমাস যেতে না যেতেই নতুন বিয়ে । নাকি অহনা কে মানুষ করার জন্য। হা হা হা হেসে ওঠে অহনা আপন মনে। এসব কথা শুনলেই এখন অহনার গা ঘিন ঘিন করে,প্রচন্ড রাগ হয় । মানুষ করা না ছাই,নিজের সুখের জন্য। কামনা বাসনা চরিতার্থ করার জন্য। নইলে কবে ভালোবেসে বলেছে দুটো মিষ্টি কথা?সব সময় শাষন।এখানে যেও না।ওটা করো না। দুটো আদর মাখা কথা তো কোনো দিন বলে নি।
সব সময় বলে,আমাদের একটা পেষ্টিজ আছে সমাজে । যার তার সাথে মিশবে না। বাইরে বেশি ঘোরাঘুরি করবে না।আর কত কি বলে। আদর করে কাছে ডাকে না কোনো দিন। বাবা অফিসের কাজে আর নতুন মা পার্টি সোস্যাল ওয়ার্ক নিয়েই ব্যস্ত। এসব দেখে দেখে অহনার আর ভালো লাগে না বাড়িতে থাকতে । মনে হত কোন এক ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে হাত ধরে ছুটে বেড়িয়ে আসতে । তা ও পারবে না।বাবার সম্মান আছে যে।, তবু মনের অজান্তেই কখন যে ভালোবেসে ফেলেছিল। সে নিজেই জানে না।
একটা সাদামাটা মাথা মোটা,বইপাগল কে মন দিল অহনা।সে যতই বোঝায় এসব হয় না।সে গরীব। ভালোবাসতে নেই বড়লোকের মেয়ে কে ।অহনার যে একেই লেগেছে ভালো। বাবা মায়ের ব্যস্ত জীবন থেকে মুক্তি পেতে ।

একদিন ঝড় জলের রাতে বাড়ি ফিরছিল অহনা একা,নিজের গাড়িতেই।তবু রেহাই পেল না।কয়েক জন মিলে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে চলে গেল জঙ্গলের দিকে । ড্রাইভার অচৈতন্য। পারল না কিছুতেই নিজেকে বাঁচাতে । কয়েকজন নরপশু, সুন্দর দেহ টাকে ছিঁড়ে আছড়ে শোষণ করল। চুড়িদারের চেনটা ছিঁড়ে দিল।দাঁত আর নখের আছড়ে মুখটা রক্তমাখা। সমস্ত শরীর টাকে একে একে ঝাঁঝরা করে দিল ।সব শেষ,ফেলে রেখেই পালালো ওরা । ড্রাইভার দা কোন ভাবে জ্ঞান ফিরে ও কে বাড়ি আনল। না কোন প্রতিবাদ হল না। বাবার তিরস্কার মায়ের গঞ্জনা সইতে হলো। বাড়িতেই অত্যন্ত গোপনে চিকিৎসা হলো ।
ওরা চায় না পরিবারের সম্মান নষ্ট হোক। অহনা সুষ্হ হতেই চেয়েছিল প্রতিবাদ করতে।কিন্তু মুখ বন্ধ করে রাখল।বলা হলো এবাড়িতে তাহলে আর জায়গা হবে না ।
নীরবে হাসল অহনা। সে তো কবেই মরে গেছে।নিজের মায়ের সাথে। আর কি হবে বেঁচে? সুস্থ হলো। কলেজে যাওয়া শুরু হলো।সবাই মুখ চাওয়া চায়ি। ফিসফিস করতো ওকে নিয়ে। করুনার দৃষ্টিতে অথবা কেউ ঠাট্টা করে মুখ লুকিয়ে হাসছে । অহনার বুঝতে অসুবিধা হলো না আজ সে অন্য,সবার চেয়ে ।
সেই সাদাসিধে ছেলেটাই আজ প্রথম নিজে কথা বলল।কেমন আছো? শরীর ঠিক আছে । অহনা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। সব যন্ত্রনা খুলে বলতে চেষ্টা করল।মুখ ফেটে বেড়িয়ে আসছে ওর কষ্টের চিহ্ন গুলি।
কিন্তু পারল না। কিছু বলতে,আজ সে নষ্ট মেয়ে।তাঁর শরীরটা কে নিয়ে খেলা করেছে কয়েক জন মিলে ।
কি বলবে অয়ন কে? আজ অয়ন ই কাছে টেনে নিল।শান্ত স্বরে বলল,আমি আছি,ভয় নেই। কি শান্তি মনে,একনিমেষে মনে হলো অহনার। আজই ও কে নিয়ে পালিয়ে যায় দুরে কোথাও । যেখানে কেউ পাবে না খুঁজে।কিন্তু না পর মুহুর্তে অহনার মনে হলো, ও যে একটা ছেলে।আর পাঁচ জনের মতো।
ওর মনে ও আছে নিশ্চয় অনেক প্রশ্ন।কত টা বিশুদ্ধ আছে অহনা?কত টা ধর্ষিত হয়েছে সে? যদি মিলন মাঝে বাধা আসে।মনে সংকোচ আসে,ঘৃণা বোধ জন্মায় , সমস্ত ভালোবাসা তো শেষ হয়ে যাবে । ভালোবাসা না দেহ নিয়ে খেলা । না না, আর নয়। অহনা কে শক্ত হতেই হবে।কোন ভালোবাসা নয়। কামনা বাসনার গলা টিপে হত্যা করেছে সে । আজ সে একা। তবু শান্তি মনে। ভালোবাসার ন্যাকামো হতে মুক্ত। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এল। আর ফিরল না। থানায় গেল। ধর্ষকদের নামে ডায়েরি করল। সে লড়বে। এই প্রভাবশালী দের বিরুদ্ধে। আর তো কিছু হবার নেই। শেষ দেখে তবে শান্ত হবে অহনা।
এখন সে ভালোবাসে অনাথ শিশুদের।একটা অনাথ আশ্রমের সঙ্গে যুক্ত।সেই সঙ্গে ধর্ষিতা নারীদের পাশে থেকে কাজ করছে । অনাথ আশ্রমের সেবিকা ।খুব ভালো আছে এখানে। এটাই তার অনেক অনেক ভালোবাসার একটা সুন্দর আশ্রয় ।

Exit mobile version