Site icon আলাপী মন

শেষ কোথায়…?

শেষ কোথায়…?
-রীণা চ্যাটার্জী

সুধী,

ভীষণ অচেনা, অস্থির সময়ের মুখোমুখি আমরা- ভারতবাসীরা। বলা, শোনা সবকিছুই এখন বোধের অতীত। ভালো- মন্দ মুখোমুখি যূযুধান এই মুহূর্তে। ভবিষ্যতের গর্ভে লুকিয়ে আছে উত্তর। কিন্তু বর্তমান? সে যে অস্তিত্বের সঙ্কটে ধুঁকছে! পরিত্রাণের পথ খুঁজছে, প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে উত্তরের আশায় ভবিষ্যত প্রজন্ম অসহায় দৃষ্টি নিয়ে বর্তমানের দিকে তাকিয়ে। আমরা কি উত্তর দেব? নিজেরাই তো জানি না। আমরা ধ্বংস লীলায় মেতে রেখে যেতে পারবো না মনে হয় ওদের জন্য কিছুই। ওরা কারা? ওরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, ওরা আমাদেরই উত্তরসূরী। শিশুর বাসযোগ্য ভূমি, শ্বাস নেবার নির্মল বাতাস, শিক্ষা, জীবিকা, মানবিকতা সব কিছু নিলামে তুলে দিয়েছি স্বার্থপরের মতো এক একটা ভুল সিদ্ধান্তের দিকে হাত বাড়িয়ে, আর অবোধ সমর্থনে। রাজনীতি দেখেছি- কদর্য, বিকৃত রাজনীতি। বিদ্বজ্জন দেখেছি- যাঁরা বিক্রিত বিদ্বজ্জন, সংখ্যায় বেড়েই চলেছেন। ধর্ম এখন- ধারণ না করে, মরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অসহিষ্ণুতা- রোজ নতুন নতুন অভিজ্ঞতার জন্ম দিচ্ছে। অধিকার- জানা নেই ক্ষমতার হাত রাতের আঁধারে কতোটা ছিনিয়ে নেবে! সকালে উঠে দেখবো আর নেই আমার/ আমাদের অধিকার, ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিশ্বাস, ভরসা- এখন প্রায় লুপ্তপ্রায় একটি শব্দ। অভিধানে অর্থ খুঁজতে হবে অদূর ভবিষ্যতে। অত্যাচার? বড়ো পরিচিত শব্দ এখন। নিঃশ্বাস- প্রশ্বাসে মিশে জানিয়ে যায় “আছি” তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, কোথায় পালাবে? নিস্তার নেই।
সব দোষ কিন্তু আমাদের, কারণ আমরা সবসময় নিজেদের বাঁচিয়ে, অন্যের দিকে আঙুল তুলেছি নির্দ্বিধায়। ঘুলঘুলি দিয়ে লুকিয়ে দেখেছি, “আমার গায়ে হাত লাগে নি তো.. ” কিন্তু কতোদিন আরো কতোদিন এইভাবে? তবুও সাহসী হতে পারি না, ভয়ে- শঙ্কায়। স্রোতের আবহে ভেসে স্যোসাল মিডিয়ায় সমর্থনে সামিল হয়ে যাই, বিক্ষোভের দুই বুলি দিয়ে প্রতিবাদ জানাই। গণহত্যা, বা হত্যাকাণ্ডের সমর্থন জানাই- শেষ অবধি ভেবে দেখি না সত্য আসলে কি? দেখার সময় কোথায়? আবার একটি গণধর্ষণের মৌন মিছিলের মোমবাতি আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। অপরাধ তো আর একটা নয়- শত, সহস্র, সবেতেই থাকতে হবে বিদ্রোহে, বিক্ষোভে, আন্দোলনে, সমর্থনে- প্রতিবাদে। আবার ভুলে যেতেও হবে। কারণ? সংবিধান, আইন, বিচার ব্যবস্থার উপর অসহায় আত্মসমর্পণ। দু’ চোখ বাঁধা মাননীয় আইন দেবীর দাঁড়ি- পাল্লা অজান্তেই হেলে আছে। কবে যে চোখ খুলবেন!
আরো এক প্রকার গণশত্রু আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলি সব সময় নানান হাতে গরম খবর নিয়ে তৈরী,”শিরোনামে”, “ফটাফট”, “সবার আগে”, “এক ঝলকে”- ওদের দায়িত্ব শেষ, টি.আর.পি. হাই, রোজগারের ঝুলি পূর্ণ। আবার আগুন জ্বললেই চলে আসবে- ততক্ষণ পুরোনো খবর, “চোখ রাখুন আরো একবার..” সাথে বিজ্ঞাপন। নিত্য চোখমুখের একই অভিব্যক্তি নিয়ে শিক্ষা থেকে বীক্ষা, আগুন থেকে খুন, বর্ষণ থেকে ধর্ষণ, গুণ থেকে ভাগ, খেলা আর মেলা, সত্যির ওপর রঙ ছড়িয়ে, মিথ্যের প্রলেপ দিয়ে শুনিয়ে যাবে- “সঙ্গে থাকুন দেখতে থাকুন” অশান্ত আবহের জন্য এরা কিন্তু দায়ী কম নয় কোনো অংশেই।
আসলে আমরা কেউ বুঝতে পারি না, আমাদের আসল কর্তব্য কি? দেশ জ্বলছে, পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে, আগামী প্রজন্মের ঠাঁই কোথায় জানি না- আমাদের দায়িত্বশীল রাষ্ট্রনায়কদের ওইসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। ভবিষ্যতের জন্য না ভেবে তৈরী করে যাচ্ছেন বিভেদনীতি, অশান্তির আবহ। শেষ কোথায়? শেষ নেই..

কবির কথা মনে পড়ে যায়, “এতগুলো শতাব্দী পেরিয়ে গেল, মানুষ না তবু ছেলেমানুষ রয়ে গেল..” তখন উনি ছেলেমানুষী ভেবেছিলেন, কিন্তু আজ আমাদের মাঝে থাকলে হয়তো সংশোধন করে বলতেন- এতগুলো শতাব্দী পেরিয়ে গেল, মানুষ অত্যাচারী আর অত্যাচারিত- দু’দলে ভাগ হয়ে গেল, কিছুতেই মানুষ হতে পারলো না..
এটাই খুব সত্যি কথা, “ধর্মগুলো সব রূপকথা…..তারা গর্জন বিলাসী, অনুভব করতে পারে না ঐক্যতান..” ভার নেমে আসে মনে, দু’চোখে অন্ধকারের মাঝেও আশার আলো জ্বালিয়ে রাখি- জয় হবে একদিন মানবতার, মনুষ্যত্বের।
গর্জন উঠছে কলমে মানবতার দরজায় আঘাত হানতে, সফল হোক এই আশা থাকলো।
মন ছোঁয়া কিছু কলমের কথা- “মালতী”, “জীবিতের নামাবলী”, “নাগরিকত্ব”, “বাস্তবতা”, “মৌনতার ভাষা”, “অপরাধী”, “সারপ্রাইজ”, “ঠিকানা”, “সময় সরণী”, “কাশ্মীরি ভাই”, “অশুভ যাত্রা” ও আরো বেশ কিছু কলম।
সকল পাঠক, স্বজন সাথী সাহিত্যিকদের কৃতজ্ঞতা, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা আলাপী মনের পক্ষ থেকে।

Exit mobile version