Site icon আলাপী মন

অণু গল্প- আবাদের মাটি

আবাদের মাটি
শক্তি পুরকাইত

 

 

খবরটা সুন্দরী কাকিমা’র কানে পৌঁছতে বেশীক্ষণ সময় লাগে নি। আবাদের মাটিতে আস্ত একটা কঙ্কাল পাওয়া গেছে। অমল কাকা ছ’মাস নিখোঁজ। কোথাও খোঁজ পাওয়া যায়নি। গ্রামের মানুষের ধারণা সুন্দরবনের ভেতরে কাঠ কাটতে গিয়ে হয় বাঘে খেয়েছে, নয় কুমীরে খেয়েছে। যারা এপার থেকে ওপারে যায় অনেকেই ফেরেনি। তাই এই গ্রামটা বিধবা গ্রাম বললেই চলে। গ্রামে পুরুষের তুলনায় বিধবারা বেশী। বাঘে খেলে অনেকে বলে মা বনবিবির কৃপা করেছে, তুলে নিয়েছে। কিন্তু তাদের পরিবারদের মুখে কে অন্ন তুলে দেবে? এই বিধবাদের যৌবনে চরম ভাঁটা পড়ে। নিজেরা কী ভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াবে এটাই একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সুন্দরী কাকিমা’র ক্ষেত্রে অনেকটাই এই রকম। খবরটা কানে পৌঁচ্ছতেই আবাদের কাছেই গিয়ে দাঁড়াতেই সবাই চুপ। গ্রামের এক’শ দিনের কাজ চলছিল। খবর পেয়ে স্থানীয় থানার পুলিশ এসেছে। সুন্দরী কাকিমা সবাইকে সরিয়ে দিয়ে কঙ্কালটার কাছে এসে দাঁড়ায়। মাটি খুঁড়তেই কঙ্কালটার সাথে পাওয়া যায় এক পাটি হাওয়াই চটি ও জামার টুকরো। সুন্দরী কাকিমা’র চিনতে ভুল হয়নি, কঙ্কালটা অমলকাকার নিশ্চিত। প্রায় একবছর ধরে চলছিল পারিবারিক একটা জমি নিয়ে খুড়তোতো ভাইদের সঙ্গে চরম বিবাদ। সেই বিবাদের জেরে হয়তো অমলকাকাকে খুন করে মাটিতে পুঁতে দিয়েছিল। এতদিন পর তা প্রকাশ্যে বেরিয়ে এল। পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল। আবাদের মাটিতে কোলে তুলে সুন্দরী কাকিমা কঙ্কালটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছ ! গ্রামের মানুষ নির্বাক দর্শকের মত সে দিকে তাকিয়ে রইল। সাদা কঙ্কালটি আসলে হারিয়ে যাওয়া একটা নিরীহ মানুষ, অমলকাকা।

Loading

Exit mobile version