কাটমানি
-নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত
দ্বিপ্রাহরিক রান্নায় ব্যস্ত টুম্পা দাসের হঠাৎ মনে পড়লো ঘরে গুঁঁড়ো হলুদ বাড়ন্ত। তার বছর ছয়েকের মেয়ে হৃষিতা ছাড়া সেই মুহূর্তে বাড়িতে কেউ নেই।টুম্পা আটপৌরে পোশাকে বাড়ির বাইরে যায় না।অর্পণ সাহার মুদিখানা খুব কাছেই, হৃষিতাদের খেলার মাঠের লাগোয়া।টুম্পা তাই হৃষিতার শরণ নিল।ডাকলো: হৃষি, একটু আয় তো মা! হৃষিতা আসতেই বললো, তোর অর্পণ কাকুর দোকান থেকে এক প্যাকেট হলুদ গুঁড়ো এনে দিতে পারবি?
:কেন পারবো না? আমি কি ছোটোটি আছি নাকি?
সে যে আর ছোটোটি নেই তার পাকা পাকা কথায় হরদম তার প্রমাণ মেলে।টুম্পা তাকে দশ টাকার একটা নোট দিয়ে বললো : এই দশটাকার নোটটা অর্পণ কাকুকে দিয়ে বলবি এক প্যাকেট গুঁড়ো হলুদ দাও।কাকু দুটাকা ফেরৎ দেবে।
: জানি, জানি।অত বলতে হবেনা।আমি কি রিংকির মতো বাচ্চা নাকি? ওর কথা শুনে টুম্পা হাসে।
সে যে বাচ্চা নয় তা প্রমাণের জন্য সে বড়দের কথা গোগ্রাসে গেলে।সময় সুযোগ পেলে উগরে দেয়।ওর মা-বাবা যখন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে তখন সে তাদের কথাগুলো যেন কান দিয়ে, ত্বক দিয়ে, সর্বসত্ত্বা দিয়ে শুষে নেবার চেষ্টা করে।
টুম্পা বলে, ঠিক আছে যা।ফেরৎ দুটাকা আবার মাঠে ফেলে আসিস নে যেন।
টাকা নিয়ে হৃষিতা এক ছুট।টুম্পা গেটের কাছে মেয়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে।হৃষিতার ফিরতে সময় বেশি লাগে না।হলুদের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে টুম্পা বলে: দুটাকা ফেরৎ দেয় নি?
: দিয়েছে তো?
:কোথায়? তোর হাতে তো দেখছি নে!হারিয়েছিস তো?
:না, হারাইনি।সত্যি বলছি।আমি কি একেবারে বাচ্চা নাকি?
: তা হলে! কী হল টাকাটা?
:ওটা তো কাট মানি মা। এই যে। বলে কোমরে গোঁজা একটা চকোলেট বের করে দেখায়।
টুম্পা তো তাজ্জব।