অণু গল্প- পুতুলের বেদনা

পুতুলের বেদনা
-অঞ্জনা গোড়িয়া

 

সেই কোন ছেলেবেলা থেকে গোষ্টমেলায় যেতাম। বাবার হাত শক্ত করে ধরে থাকতাম। যদি হারিয়ে যাই হাত ছিটকে। ছোট বেলা থেকেই ভীষণ ভয় আমার। সেই ভয় আজও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। মেলায় গিয়ে কত কি দেখতাম। পুতুল নাচ, যাত্রা আরও কত কি! সব চেয়ে ভালো লাগতো, পুতুল নাচ দেখতে। কি সুন্দর সুন্দর পুতুল নাচ গান অভিনয় করে দেখাতো।
মনে মনে কত প্রশ্ন তখন। বাবাকে একবার জিজ্ঞেস করে ছিলাম, বাবা এরা কি কথা বলতে পারে? হাঁটতে পারে ইচ্ছে মতো? আর নাচতে পারে সত্যি। আমার একটা এমন পুতুল কিনে দেবে গো? খেলবো।
বাবা বলেছিল,দূর বোকা। এরা পুতুল। কিচ্ছু করতে পারে না একা একা। পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকে এদের চালক। যাকে বলে ডায়রেক্টর। যারা ইচ্ছেমতো সুতো ধরে নাচাবে। কথা বলাবে সবই। এরা ওই আকাশের ঘুড়ির মতো।
অনেক দূর আকাশে যেমন উড়তে পারে ঘুড়ি। কিন্তু লাটাই থাকে চালকের হাতে। ইচ্ছে মতো নিচে নামাতে ওঠাতে পারে। কিন্তু যদি একবার সুতো ছিঁড়ে যায় পাক খেয়ে মাটিতে আঁছড়ে পড়বে। ওঠার ক্ষমতাও নেই। এখানেই জীবনের ইতি। পুতুলগুলোর অবস্থাও তাই।সুতো কেটে দিলে মাটিতে আঁছড়ে পড়বে। প্রতিবাদ করার ক্ষমতা নেই।
বাবা একটা সুন্দর গল্প বলে ছিল।
কোনো এক পুতুল একটু বড় হতেই প্রতিবাদে গর্জে উঠল। এভাবে হাতের পুতুল হয়ে সারাজীবন থাকতে পারবে না।
পুতুলটা মনটাকে শক্ত করে মালিককে বলল, আমাদের মুক্ত করো। সুতোর বাঁধন ছিন্ন করে দাও। নিজে নাচ দেখাব।
মালিক বলল, তুই দেখাবি নাচ? দেখ পারিস কিনা? বড্ড বোকা তুই।
বলেই সুতো টাকে বাঁধন আলগা করে খুলে দিল। অমনি মুখ থুবড়ে পড়ল মাটিতে। ওঠার ক্ষমতা ছিল না। বারবার ঈশ্বরের কাছে নিবেদন করল, কেন এমন প্রাণহীন অপদার্থ করে পাঠালে পৃথিবীতে? ইচ্ছে মতো কেন কিছু পারি না। পুতুলের বেদনা কারোর কানে পৌঁছালো না। আজও তাকে নাচ দেখিয়ে যেতে হয়। অভিনয় করে যেতে হয় অসংখ্য মানবতার সামনে।
আজ আবার দেখলাম আবার পুতুল নাচ। গোষ্ট মেলায়। সেই পুতুলটা, যার ছিল একটা স্বপ্ন। একটা করার ইচ্ছে । আমার দিকে তাকিয়ে আছে করুণ ভাবে। আর ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিল, তুমিও আমার মতো। পায়ে শিকল পরা পুতুল ।

Loading

Leave A Comment