মানুষ
-সঞ্চিতা. রায়
“আমার মেয়ে ভাল হয়ে যাবে তো! ”
“আমি একজন চিকিৎসক, আমার কাজ রোগীকে সুস্থ করা। আমি তো চেষ্টা করবই, কিন্তু তার আগে বলুন আপনার ফর্সা মেয়েকে আমার মত শ্যামবর্ণার হাতে চিকিৎসা করাবেন কিনা?” ডাক্তার শুভা সেন মুখ তুললেন। এই এলাকায় তিনি ধন্বন্তরী চিকিৎসক। সবাই মনে করেন তাঁর কাছে গেলেই রোগী সুস্থ হয়ে যায়। কার্যক্ষেত্রেও অনেক ডাক্তার যে রোগীকে জবাব দিয়ে দেন, ডাক্তার শুভা সেন তাঁর চিকিৎসায় এই রুগীদের নতুন জীবন দেন। রজতাভ গুপ্ত চমকে উঠলেন। এ কাকে দেখছেন, ছোট বেলায় শুধুমাত্র কালো বলে যার সঙ্গে মিশতে চাইত না রজতাভ ওরফে রজত। মাধ্যমিক পর্যন্ত একই স্কুলে পড়ত রজতাভ ও শুভা। পরে শুভার বাবা বদলী হওয়ায় শুভারা অন্য জায়গায় চলে যায়। দশম শ্রেণীতে সরস্বতীপুজোর প্রসাদ বিতরণের দায়িত্বে ছিল শুভাদের গ্রুপ। শুভা রজতাভকে প্রসাদ দিতে এলে রজতাভ বলেছিল “কালঝ মেয়েদের কাছ থেকে আমি প্রসাদ বা খাবার নিই না..” শুভা খুব কষ্ট পায় মনে মনে। এক ব্যাচে পড়লেও রজত শুভাকে সবসময় এড়িয়ে যেত। পরবর্তীতে শুভা অন্য শহরে আসে, নিজেকে ক্রমাগত পড়াশোনায় উন্নত করে। জয়েন্টে চান্স পেয়ে কলকাতার সবচেয়ে নামী কলেজ থেকে ডাক্তারি পড়ে। চিকিৎসাবিদ্যায় আরো উচ্চ ডিগ্রী লাভ করে। নামী চিকিৎসক হিসাবে খ্যাতি পায়। আর রজত বি.কম পাশ করে বাবার ব্যবসায় যোগ দেয়। আজ তার মেয়ের কঠিন অসুখে সব ডাক্তার যখন নিরাশ তখনই সে শুভা সেনের নাম শোনে, ও আসে। জানতো না কে এই শুভা সেন।
“কি উত্তর দিলেন না যে, আপনার ফর্সা মেয়েকে আমার মত শ্যামবর্ণার হাতের ছোঁয়া পাওয়াতে বা ওষুধ খাওয়াতে আপত্তি আছে কিনা আগে ভেবে দেখুন, অসুবিধা হলে শহরের কোনো ফর্সা ডাক্তার খুঁজে নিন।”
“আমি ভুল করেছি, তুই আমার ছোটবেলার বন্ধু আমার মেয়েটাকে বাঁচা..”
“ভুল করছেন, আমি আপনার বন্ধু নই, কারণ মানুষকে যারা রূপ রঙ দিয়ে বিচার করে আমি আবার তাদেরকে বন্ধু বলে মনে করি না। আর হ্যাঁ, সহপাঠী ছিলাম বটে বন্ধু ছিলাম না। তবে এই শিশুটিকে আমি বাঁচাব, কারণ আমি চিকিৎসক, আমি মানুষকে মানুষ হিসাবে ভাবতে জানি, যতই আপনার মত মানুষরূপী অমানুষের মেয়ে হোক না কেন?”
রজতাভ হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে রইলো। হ্যাঁ, ডাক্তার শুভা সেনের চিকিৎসায় শিশুটি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।