দি এম্পটি আর্থ (তৃতীয় অংশ)
-বিশ্বদীপ মুখার্জী
…………….
পর্ব – ১১
……………….
প্লুটো তাকে ফ্ল্যাট নম্বর বলেছে। সেখানে গিয়ে অর্চিষ্মান দেখলো ফ্ল্যাট বন্ধ। চৌকিদারকে জিজ্ঞাসা করতে সে বলল – ‘মেঘমিত্রা ম্যাডামেরই ফ্ল্যাট এটা। তিনি মাঝে মাঝে আসেন। যখনই তিনি আসেন নিজের সাথে কোনও না কোনও অল্প বয়সী ছেলেকে নিয়ে আসেন। সব থেকে অদ্ভুত ব্যাপার হলো ছেলে বদলের মাঝের সময়টা তিনি গায়েব থাকেন।’
‘কী করেন তিনি?’ জিজ্ঞাসা করলো অর্চিষ্মান।
‘জানি না স্যার। কী কাজ করেন সেটা বলতে পারবো না।’
‘তোমার কি কোনও আন্দাজ আছে যে এখন পর্যন্ত কটা ছেলেকে সে এই ফ্ল্যাটে নিয়ে এসেছে?’
খানিক চিন্তা করে চৌকিদার বলল – ‘ঠিক মত বলতে পারবো না স্যার। তাও কম করে দশ – বারোটা ছেলেকে তো সে নিয়েই এসেছে।’
নিজের ফ্ল্যাটে ফেরার পথে অর্চিষ্মান ফোন করলো সপ্তর্ষিকে। বলল – ‘তোর বন্ধু শায়কের নিজের শিক্ষিকার প্রেমে পড়ার ঘটনাটা প্রায় বাইশ বছর পুরনো না?’
‘হ্যাঁ, তা হবে।’
‘তখনকার একটা ঘটনা মনে কর সপ্তর্ষি। বেশ কিছু দিন ধরে ঘটনাটার জের ছিল। নিউজ চ্যানেল, নিউজ পেপার তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল।’
‘কী ঘটনা বলতো।’
‘অদ্ভুত। তুই ভুলে গেলি? ভুলে অবশ্য আমিও গিয়েছিলাম। আজ হঠাৎ করে মনে পড়লো। দেশ জুড়ে বেশ কিছু মহিলাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তারা নাকি অল্প বয়সী ছেলেদের নিজের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে সেক্স করতো, আর না তো তাদের ধর্ষণ করতো। বহু মাত্রায় অল্প বয়সী ছেলেদের ধর্ষণ। ভাবতে পারিস? পুলিশ তাদের মুখ থেকে কিছুই বের করতে পারেনি। তাদের কাছে নাকি পটাশিয়াম সায়ানাইড ছিল। মনে পড়েছে?’
‘হ্যাঁ, পরিস্কার মনে পড়েছে।’ বলল সপ্তর্ষি।
‘আমার যত দূর মনে হয় তোর শায়কের প্রেমিকাও তাদেরই দলের।’
‘কিন্তু তাদের কিছু তো উদ্দেশ্য হবে?’ সপ্তর্ষি প্রশ্ন করলো।
‘উদ্দেশ্যই তো জানা যায়নি ভাই। উদ্দেশ্য জানা গেলে অনেক তথ্যই সামনে এসে যেতো। কিন্তু কিছুটা উদ্দেশ্য আমি হয়তো বুঝতে পেরেছি।’
‘কী?’
‘এখন নয়। আগামী কাল বলবো। একটা ছোট্ট পরীক্ষা করা এখনও বাকি আছে।’
‘তোমার কি মাথাটা একেবারেই খারাপ হয়ে গেছে অর্চিষ্মান?’
রাতে শুতে যাওয়ার আগে অর্চিষ্মান নিজের প্ল্যানটা বলেছিল অনন্যাকে। শুনে খানিক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে অর্চিষ্মানের দিকে তাকিয়ে রইল অনন্যা।
‘আমার প্রমাণ চাই অনন্যা। আমি চোখ বন্ধ করে হাওয়াতে ঢিল ছুঁড়তে নারাজ। যে সন্দেহটা আমি করছি সেটা যদি সঠিক হয়, তাহলে এটা ভেবে নাও যে এই কেসের অনেকটা কাছে আমি পৌঁছে গেছি। শুধু কিছু প্রশ্ন করতে চাই ডাঃ চৌধুরীকে।’
‘তুমি যার উপর আঙ্গুল তুলছ সে কিন্তু সমাজের এক বিশিষ্ট ব্যক্তি। এটা মনে রেখো।’ অনন্যা বলল।
‘অনন্যা, তুমি ভুল করছো। আমি কারোর উপর আঙ্গুল তুলছি না। বিনা প্রমাণে কারোর উপর আঙ্গুল তোলা আমার স্বভাব বিরুদ্ধে। যেহেতু কোনও এক সময় ডাঃ চৌধুরীর সাথে ডাঃ ব্যানার্জীর খুব ভালো সম্পর্ক ছিল, তাই ডাঃ ব্যানার্জীর নিরুদ্দেশ সম্পর্কে তিনি কিছু আলোকপাত করতে পারেন।’
‘বহু বছর হয়ে গেছে ডাঃ অনুপম ব্যানার্জীর নিরুদ্দেশ হওয়া। বারো বছর পর্যন্ত যদি কোনও নিরুদ্দেশ ব্যক্তির সন্ধান না পাওয়া যায় তাহলে তাকে মৃত বলে মেনে নেওয়া হয়। শুধু ডাঃ ব্যানার্জী নয়, তার স্ত্রী এবং সন্তানকেও মৃত বলে মেনে নেওয়া হয়েছে। তাদের ফাইল বহুদিন আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।’
অর্চিষ্মান বলল – ‘সেটা আমি জানি সুইট হার্ট। কিন্তু তুমি হয়তো এটা ভুলে যাচ্ছ যে এন এস ডব্ল্যূ’র কাছে এই ক্ষমতাটা আছে যে সন্দেহবশত তারা বন্ধ ফাইলকেও রি ওপেন করতে পারে। আমি তাই করবো। ডাঃ অনুপম ব্যানার্জীর বন্ধ ফাইলকে রি ওপেন করবো। আপাতত আগামী কালের কাজটা সেরে নিই।’
‘আগামী কাল যেটা তুমি করতে যাচ্ছ সেটা কি ঠিক করছো? প্লুটোর বয়সই বা কত? তার সাথে এমন করো না।’ অনন্যা বলল।
‘আমি তো তার কোনও ক্ষতি করছি না অনন্যা। এটা শুধু একটা পরীক্ষা মাত্র। সে জানতেও পারবে না। প্রথমে তাকে এক সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে নিয়ে যাবো। সাইক্রিয়াটিস্ট তাকে দু- চারটে প্রশ্ন করে তাকে অজ্ঞান করবে। তার অচেতন অবস্থাতেই তার পরীক্ষা হবে।’
‘পরীক্ষা করাটা কি খুব দরকার?’ অনন্যা প্রশ্ন করলো।
‘তোমাকে বললাম না অনন্যা, এই পরীক্ষার ফল যেটা আমি ভেবেছি যদি তাই হয়, তাহলে আমি এক শক্ত প্রমাণ পেয়ে যাবো। এই প্রমাণটাই আমার দরকার।’
পর্ব – ১৩
……………….
ছোট থেকেই প্লুটোর কাজ করার ইচ্ছে এন এস ডব্ল্যূ তে। তারা নাকি অদ্ভুত অদ্ভুত তদন্ত করে, অনেক রহস্যউদঘাটন করে। তাদের কাজটা অ্যাডভেঞ্চারে ভরা। প্লুটোর অ্যাডভেঞ্চার বেশ ভালো লাগে, তাই ভালো লাগে এন এস ডব্ল্যূও। হঠাৎ অর্চিষ্মান তাকে এন এস ডব্ল্যূ’র অফিসে ডেকে পাঠিয়েছে শুনে বেশ আশ্চর্য হয়েছিল সে। যেহেতু অফিসটা এন এস ডব্ল্যূ’র, তাই আর দু’বার চিন্তা করলো না সে। এন এস ডব্ল্যূ’র বহুতল বিল্ডিংএর নিচেই অর্চিষ্মান অপেক্ষা করছিল প্লুটোর।
‘আমাকে হঠাৎ এখানে ডেকে পাঠালে?’ অর্চিষ্মানকে দেখেই প্লুটো জিজ্ঞাসা করলো।
‘তোমার এখানে কাজ করার ইচ্ছে আছে। তাই না? তাই ভাবলাম একবার তোমায় ঘুরিয়ে দিই। তোমার মনটাও ভালো হয়ে যাবে।’
কথা শেষ করে অর্চিষ্মান ভিতরে নিয়ে গেল প্লুটোকে। এন এস ডব্ল্যূ’র অফিস তাকে ঘোরালো, পরিচয় করালো কিছু অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাথে। বেশ খুশি মনে সেগুলোকে দেখলো প্লুটো। নিজের দুঃখ যেন ভুলেই গেল সে। সুযোগ দেখে অর্চিষ্মান প্লুটোকে বলল – ‘তোমাকে একটা দরকারি কথা বলতে চাই প্লুটো। যেহেতু তুমি পরবর্তী কালে এখানেই কাজ করতে চাও, তাই তোমাকে এ কথাগুলো বলা উচিত বলে মনে করি।’
‘কী কথা?’ প্লুটো জিজ্ঞাসা করলো।
এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে অর্চিষ্মান বলল – ‘প্লুটো, ঘটনাটা তোমার সাথে রিলেটেড। তোমার আর মেঘমিত্রার সাথে।’
মেঘমিত্রার নাম শুনে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল প্লুটোর।
‘দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই প্লুটো। মেঘমিত্রা একা নয়, আর একা নয় প্লুটোও। অসংখ্য মেঘমিত্রা ও অসংখ্য প্লুটো আজ চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মেঘমিত্রাদের কাজ প্লুটোদের নিজের জালে ফাঁসিয়ে নেওয়া। বহু বছর আগে থেকে মেঘমিত্রাদের আবির্ভাব হয়। তবে থেকে তারা অসংখ্য প্লুটোদের নিজের জালে ফাঁসিয়ে তাদের দিয়ে কিছু ভুল কাজ করিয়ে যাচ্ছে। এমন কাজ যেটা সমাজের আর এন এস ডব্ল্যূ’র নজরে ক্রাইম। এই মনে করো আজ তোমায় ছেড়ে চলে গেল মেঘমিত্রা। তুমি তার দুঃখে অবসাদে ভুগছো। কিছু দিন পর হঠাৎ করে সে ফিরে এলো। এই অপ্রত্যাশিত খুশি তুমি নিতে পারলে না। ছুটে গেলে তার দিকে। ব্যাস, এখানেই বাজিমাত করে নিলো সে। এবার সে যা বলবে, তুমি তাই করবে। প্লুটো, এদের দল অনেক বড়। কত দূর পর্যন্ত তারা ছড়িয়ে আছে সেটা এখনও আমরা জানি না। জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এখনও। আজ তুমি আমাদের সাহায্য করবে প্লুটো। এন এস ডব্ল্যূ’র তোমার সাহায্যের প্রয়োজন।’
এন এস ডব্ল্যূ-কে সাহায্য করার সুযোগ পাবে কোনও দিন ভাবেনি প্লুটো। এটা তার জন্য আশাতীত। মনটা আনন্দে ভরে গেল তার।
‘কী করে আমি এন এস ডব্ল্যূ’র কাজে আসবো?’ প্লুটো জিজ্ঞাসা করলো অর্চিষ্মানকে।
‘এন এস ডব্ল্যূ’র একটা অফিসারের কাছে আমি তোমায় নিয়ে যাবো। সে তোমায় কিছু প্রশ্ন করবে মেঘমিত্রার বিষয়ে। তুমি তার বিষয়ে যা যা জানো সেগুলো বলো। আমাকে যা বলেছো, তার থেকেও বেশি কিছু জানলে সেই অফিসারকে বলো। ঠিক আছে?’
প্লুটো ঘাড় নেড়ে সহমত দিলো।
এন এস ডব্ল্যূ’র আন্ডার গ্রাউন্ডে অর্চিষ্মান নিয়ে গেল প্লুটোকে। হল ঘরের মত এক বড় ঘরে ঢুকলো তারা। ঘরের একদিক সবুজ পর্দা দিয়ে ঢাকা। পর্দার ওপারে কী আছে সেটা দেখা মুশকিল। অন্য দিকে এক রিভলবিং চেয়ারে বসে আছেন মাঝ বয়সী এক ভদ্রলোক। তার সামনে একটা বড় টেবিল ও টেবিলের ওপারে দু’টো চেয়ার। ভদ্রলোকের নাম ডক্টর শত্রুঘ্ন বিশ্বাস। তিনি সাইক্রিয়াটিস্ট। ভালো করে একবার প্লুটোকে দেখে তিনি অর্চিষ্মানকে বললেন – ‘চিন্তা নেই অফিসার। তুমি নিশ্চিন্ত হয়ে যেতে পারো। আমি ঠিক নিজের কাজ করে নেবো।’
পর্ব – ১৪
………………
‘যদি তোমার ডাউট ঠিক হয় তাহলে এটাকে আটকানো প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে।’ বললেন আবির্ভাব গাঙ্গুলী।
প্লুটোকে ডাঃ শত্রুঘ্ন বিশ্বাসের কাছে ছেড়ে অর্চিষ্মান দেখা করতে গেল আবির্ভাব গাঙ্গুলীর সাথে। প্লুটোর উপর কোনও মেডিক্যাল পরীক্ষা করাতে তিনিও আগে অনুমতি দেননি। কিন্তু পরে অর্চিষ্মানের তর্কে তিনি হার মেনে গেলেন। প্রতিটি সমীকরণ একে একে মিলিয়ে তাকে বুঝিয়েছিল অর্চিষ্মান। শুধু শেষ প্রমাণের অপেক্ষা। খুব সম্ভব সেটাও আজ পেয়ে যাবে।
আবির্ভাব গাঙ্গুলীর কথায় অর্চিষ্মান বলল – ‘এখনই আমি কিছু ফাইনাল বলতে চাই না স্যার। শেষ প্রমাণটা আগে পেয়ে যাই। 2022 সালে প্রফুল্ল গুহ নামের এক প্রফেসার ‘দি এম্পটি আর্থ’ নামের এক বই লিখেছিলেন। মনুষ্য জাতি লুপ্ত হওয়ার অনেক কারণের ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনি। মুখ্য কারণ দিয়েছিলেন বিষাক্ত রেডিয়েশন। কারণ আলাদা যাই হোক না কেন, মনুষ্য জাতি কিন্তু বিলুপ্তের দিকে পা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমিও ঠিক বুঝতে পারছিলাম না যে তদন্তটা শুরু করবো কোথা থেকে। ইন্টারনেট ঘাঁটতে গিয়ে ডাঃ ব্যানার্জীর বক্তৃতা চোখে পড়লো। ভাবলাম, এখান থেকেই শুরু করা যাক।’
‘ডাঃ চৌধুরীর ইন্টারভিউয়ের কী ব্যবস্থা করলে?’ প্রশ্ন করলেন আবির্ভাব গাঙ্গুলী।
‘সেটাও দিন দুয়েক-এ হয়ে যাবে স্যার।’
খানিক বিরতি নিয়ে আবির্ভাব গাঙ্গুলী বললেন – ‘তোমার ধারনা এদের বড় গ্যাং কাজ করছে। কোনও বড় র্যাভকেটের সাথে যুক্ত তারা। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য জানা যায়নি এখনও। তারা যে এমন করছে তার পিছনে কোনও তো কারণ হবে?’
‘স্যার, ডাঃ অনুপম ব্যানার্জীর এক অসমাপ্ত গবেষণা বারবার খোঁচা মেরেছে আমায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির উপর নিয়ন্ত্রণ আনার কথা তিনি বলেছিলেন। বলেছিলেন এক নতুন পদ্ধতির কথা। কিন্তু সে পদ্ধতি কারোর সামনে আর এলো না।’
‘তোমার কী মনে হয়? এরা ওই অজানা পদ্ধতির ভিত্তিতে এমন কাজ করছে? যে গবেষণা কোনও দিন পুরো হয়নি, সেটার ভিত্তিতে কাজ করা তো অসম্ভব।’
‘উত্তরের খোঁজে তো আমিও আছি স্যার।’
দরজায় টোকা মেরে ঘরে ঢুকলো ডাঃ শত্রুঘ্ন বিশ্বাস। তাকে দেখেই অর্চিষ্মান জিজ্ঞাসা করলো – মেডিক্যাল টেস্ট হলো?’
‘হ্যাঁ, হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার জ্ঞান ফিরে আসবে। আমার টিম তার সাথেই আছে। প্লুটোর জ্ঞান ফেরার সাথে সাথেই তার মস্তিষ্কে এটা ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে যে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিল সে। মেঘমিত্রা এবং তাদের মত মেয়েদের প্রতি ঘৃণার কারণে হাত-পা কাঁপতে শুরু করেছিল তার। অবশেষে নিজের নার্ভে কন্ট্রোল না রাখতে পেরে সেন্স লেস হয়ে যায় সে।’
‘ভেরি গুড। তার মেডিক্যাল রিপোর্ট কী বলছে?’ অর্চিষ্মান জিজ্ঞাসা করলো।
ডাঃ বিশ্বাস একবার আবির্ভাব গাঙ্গুলীর দিকে তাকালো, তারপর অর্চিষ্মানের দিকে তাকিয়ে বলল – ‘তোমার ধারনা ঠিক ছিল অর্চিষ্মান। প্লুটো নিজের পুরুষত্ব হারিয়ে ফেলেছে।’
পর্ব – ১৫
রাত প্রায় দু’টো। এন এস ডব্ল্যূ’র অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে অর্চিষ্মান। তার সাথে আছে হাতে অস্ত্র নিয়ে এন এস ডব্ল্যূ’র কিছু কমান্ডো ও অফিসার।
অর্চিষ্মান তাদের বলছে – ‘সালটা 2048 থেকে 2050এর মধ্যে। পুলিশ ডিপার্টমেন্ট দেশ জুড়ে এমন অনেক মহিলাদের গ্রেপ্তার করেছিল যারা অল্প বয়সী ছেলেদের ধর্ষণ করতো। সেই মহিলাদের গ্যাং এখনও সক্রিয়। এখন তারা প্রতক্ষ্যভাবে না হোক অপ্রতক্ষ্যভাবে অল্প বয়সী ছেলেদের ধর্ষণ করছে। তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে আমাদের। পুলিশ যদি আজ থেকে কুড়ি বছর আগে এ কাজটা করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারবো না? আমরা যদি না পারি তাহলে এ দেশে এন এস ডব্ল্যূ’র প্রয়োজন কী? আমাদের এই কাজটা করতেই হবে। তবে হ্যাঁ, সতর্কতা অবলম্বন করে। আমরা কী করছি তার খবর যেন বাইরের কেউ না জানতে পারে। এখন আমরা বালিগঞ্জ যাবো। আমাদের প্রথম শিকারের নাম মেঘমিত্রা। খুব সম্ভব তাকে আমরা সেখানে পাবো না। তার ফ্ল্যাট সার্চ করবো আমরা। দেখা যাক, সেখান থেকে কী পাওয়া যায়।’
বালিগঞ্জের সেই অ্যাপার্টমেন্টের সামনে এসে যখন এন এস ডব্ল্যূ’র দল পৌঁছলো তখন প্রায় রাত তিনটে। অর্চিষ্মান সহ মোট ছ জন বন্দুকধারী অফিসার ছিল। চৌকিদারকে আগেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেঘমিত্রার ফ্ল্যাট বারো তলায়। ফ্ল্যাটের সামনে পৌঁছে দেখা গেল দরজা বন্ধ। দরজা খোলার চাবি অর্চিষ্মানের কাছে ছিল। অন্ধকার ফ্ল্যাটে ঢুকেই নিজের হাতের ছোট্ট টর্চটা জ্বালালো অর্চিষ্মান। টর্চটা ছোট, কিন্তু তার আলোর জোর প্রচন্ড। একটা ড্রইং রুম, বেশ বড়। সুইচ বোর্ড খুঁজে আলো জ্বালানো হলো। পুরো ড্রইং রুমের মেঝেতে পাতা আছে দামী কার্পেট। দেয়ালে ঝুলছে দামী এক টি ভি। ভিতরের বেড রুমে ঢুকলো এন এস ডব্ল্যূ’র দল। বিছানার চাদর এলোমেলো। বিছানায় রাখা আছে একটা ল্যাপটপ।
‘আজ হয়তো এখানে এসেছিল মেঘমিত্রা।’ প্রায় ফিসফিস করে অর্চিষ্মান বলল।
খাটে বসে ল্যাপটপ খোলার চেষ্টা করলো সে। স্ক্রিনে কৃত্তিম রোবোটিক মুখ ভেসে এলো। ল্যাপটপ থেকে আওয়াজ এলো – ‘Welcome to your world. Please give your eyes.’
ল্যাপটপের ঠিক মাথার কাছ থেকে হালকা আলোর রেখা বেরিয়ে এলো। অর্চিষ্মানের চোখে এসে পড়লো সেই আলোর রেখাটা। অর্চিষ্মান বুঝতে পারলো যে ল্যাপটপ তার চোখের রেটিনা স্ক্যান করতে চাইছে। ল্যাপটপের সামনে বসে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। বাকি লোকেরা তন্নতন্ন করে পুরো ফ্ল্যাট সার্চ করছে। হঠাৎ দরজায় কোনও শব্দ পেলো তারা। দরজা খোলার শব্দ। অর্চিষ্মান এক লাফে বেড রুম থেকে ড্রইং রুমে এলো। দরজা খুলতেই তারা সামনে একা রমণীকে দেখলো। অর্চিষ্মান তাকে আগেও দেখেছে, প্লুটোর সাথে। এই রমণীর নামই, মেঘমিত্রা। অর্চিষ্মানের নজর গেল সব থেকে আগে মেঘমিত্রার গলার কাছে। সে আগের ঘটনা জানে। এদের গলায় নাকি পটাশিয়াম সায়নায়েড ঝোলানো থাকে লকেটের মত। অনেকে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে এবং অনেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর পটাশিয়াম সায়নায়েড খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। মেঘমিত্রার গলায় পাতলা একা সোনার হার ঝুলছে। সাথে আছে গোল মত ছোট্ট এক লকেট। সেটাও সোনা দিয়ে বাঁধানো। এই ছোট্ট লকেটের মধ্যেই হয়তো আছে সেই বিষাক্ত জিনিসটা, যেটা একবার জিভে স্পর্শ করালে নিমেষের মধ্যে চিরকালের মতো ইহলোক ত্যাগ করে দিতে হয়। মেঘমিত্রা অবাক দৃষ্টিতে খানিক তাকিয়ে রইল তাদের দিকে। অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞাসা করলো – ‘কে আপনারা? এখানে কী করছেন?’
অর্চিষ্মান ধীর গতিতে এগিয়ে গেল তার দিকে। বলল – ‘আমরা কিছু জানতে এসেছি এখানে।’
‘কী জানতে এসেছেন?’
‘এটাই যে আপনারা কার হয়ে কাজ করছেন?’
মেঘমিত্রা ভ্রুকুটি করে তাকালো অর্চিষ্মানের দিকে। হালকা রুক্ষ স্বরে বলল – ‘কার হয়ে কাজ করছি মানে? কী কাজ? আর আপনারা আমার অনুমতি ছাড়া আমার ফ্ল্যাটে ঢুকেছেন কী করে?’
‘প্লুটোকে চেনেন?’
অর্চিষ্মানের এই প্রশ্নে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল মেঘমিত্রার।
অর্চিষ্মান আরও কাছে এলো তার।
‘আপনি জানেন হয়তো প্লুটোর সাথে যে নোংরা খেলাটা আপনি খেলেছেন তাতে তার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে। আপনাদের উদ্দেশ্যটা কী এবং আপনারা কার হয়ে কাজ করছেন এটা জানা আমাদের জন্য খুব দরকার। আপনি একা নন। আপনাদের মত বহু মহিলা এ কাজে লিপ্ত। আজ থেকে নয়, বহু বছর থেকে।’
কথা শেষ করে অর্চিষ্মানের ডান হাতটা ঝড়ের বেগে এগোলে মেঘমিত্রার গলার দিকে। মেঘমিত্রা কিছু বোঝার আগেই, তার সোনার হার আর লকেট অর্চিষ্মানের হাতে চলে এলো।
‘এর মধ্যেই না লুকিয়ে আছে, আপনাদের সহজ মুক্তির রহস্য? অফিসার, অ্যারেস্ট করেও নাও। ভয়ের কিছু নেই, এর মুক্তির রাস্তা বন্ধ। নিয়ে যাও একে এন এস ডব্ল্যূ’র অফিসে।’
চলবে……