Site icon আলাপী মন

ধারাবাহিক- দি এম্পটি আর্থ (শেষাংশ)

দি এম্পটি আর্থ (শেষাংশ)
-বিশ্বদীপ মুখার্জী

 


……………..
পর্ব – ১৭
…………….

‘ননসেন্স! কে বলেছে এটা ওর আইডিয়া ছিলো? এই যে, মিস্টার এন এস ডব্ল্যূ, তুমি যে বারবার বলছো যে আমি নাকি ডাঃ ব্যানার্জীর আইডিয়া চুরি করেছি, তার পিছনে কোনও ভিত্তি আছে? কোনও প্রমাণ আছে তোমার কাছে? যখন প্রমাণ নেই তখন কারোর উপরে দোষারোপ করবে না। আগে সলিড প্রমাণ নিয়ে এসো। তারপর কথা হবে তোমার সাথে। আমি যদি বলি, আইডিয়া চুরি আমি না ডাঃ অনুপম ব্যানার্জী করেছে। তুমি সেটা বিশ্বাস করবে তো? পপুলেশন কন্ট্রোলের কথা বলেছে ডাঃ ব্যানার্জী? কে দিয়েছিল সেই আইডিয়াটা তার মগজে? আজ যদি ডাঃ ব্যানার্জী জীবিত থাকতো তাহলে ওকে সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করতাম আমি।’
‘তার মানে আপনি জানেন যে ডাঃ অনুপম ব্যানার্জী জীবিত নেই।’
অর্চিষ্মানের এই কথায় হকচকিয়ে গেলেন ডাঃ চৌধুরী। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে বললেন – ‘আমি কেন? এটা তো সবাই জানে যে ডাঃ অনুপম ব্যানার্জী আর বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে এত দিনেও কি সে সামনে আসতো না?’
‘পুলিশ কিন্তু তার ডেড বডি পায়নি। নিরুদ্দেশ হওয়ার বারো বছর পর ফাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু ডাঃ ব্যানার্জী নয়, তার স্ত্রী এবং পুত্রকেও পরবর্তী কালে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যার ডেড বডি পাওয়া যায় না, তার মৃত হওয়ায় অল্প হলেও সন্দেহ থেকেই যায়। তাই তো আমরা আবার সেই বন্ধ ফাইলকে রিওপেন করেছি ডাঃ চৌধুরী। সে সব কথা পরে হবে। আপনি বললেন যে ডাঃ ব্যানার্জী নাকি আপনার আইডিয়া চুরি করেছেন।’ অর্চিষ্মান বলল।
‘হ্যাঁ, আমার আইডিয়া। আমার আইডিয়া চুরি করে গবেষণা করছিল সে। আমি গোপন ভাবে সেটা জানতে পারি। তাকে বলেওছিলাম যে সে গবেষণা করছে, করুক। আমার তাতে কোনও আপত্তি নেই। আমার ডিমান্ড শুধু এটুকুই ছিলো যে গবেষণার শেষে যেন ক্রেডিটে আমার নামটা দেয়। কিন্তু রাজি হয়নি সে।’
‘কী ছিলো আপনার আইডিয়া?’ জিজ্ঞাসা করলো অর্চিষ্মান।
খানিক চুপ থেকে ডাঃ চৌধুরী বললেন – ‘জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের এক অন্যতম পদ্ধতি। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক ওষুধ বা ইনজেকশন বাজারে এসেছে। কিন্তু তাতে কোনও দিন কোনও কাজ হয়নি। সেই সময় আমি এক ধরনের ওষুধের ফর্মুলা বের করেছিলাম। তখনও ওষুধটা আমি আবিষ্কার করে উঠতে পারিনি।’
‘কী ধরনের ওষুধ?’ জিজ্ঞাসা করলো অর্চিষ্মান।
‘সেটা একটা ব্যাকটেরিয়ার মত। একটা ছোট্ট ক্যাপসুল। সেই ওষুধটা নিয়ে আমার অনেক প্ল্যান ছিল। ভেবেছিলাম নিজের গবেষণা আর প্ল্যানের বিষয় ভারত সরকারের সাথে কথা বলবো। কিন্তু সেটা হয়ে উঠলো না। আমার সব থেকে বড় ভুল কী ছিলো জানেন অফিসার? আমার সব থেকে বড় ভুল ছিলো নিজের প্ল্যানের বিষয় অনুপমের সাথে আলোচনা করা। তার মনের মধ্যে যে বিষ আছে সেটা আমি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারিনি। আমার প্ল্যান ছিলো প্রত্যেক সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে সেই ওষুধটা যেন পাওয়া যায়। এবং সেই ওষুধটা ডক্টরের দেওয়া আর পেশেন্টের নেওয়া যেন বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়। কোনও মহিলার প্রথম ডেলিভারির পর অপারেশন টেবিলেই সেই ক্যাপসুলটা মহিলাকে দিয়ে দেওয়া হলে আমরা জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ পেতে পারতাম। সেই ক্যাপসুলটা মহিলার শরীরে প্রবেশ করার পর যদি কোনও পুরুষ তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে তাহলে সেই পুরুষের শুক্রাণু হ্রাস হবে আর পরবর্তী কালে সে বাপ হতে পারবে না। তার মানে এটা নয় যে তার মধ্যে শারীরিক মিলনের ক্ষমতা কমে যাবে। সে আগের মতই শারীরিক মিলন করতে পারবে, কিন্তু তার বীর্যে শুক্রাণু থাকবে না। কোনও পুরুষকে জোর জবরদস্তি ওষুধ খাওয়ানো বা ইনজেকশন দেওয়ানোর থেকে এই উপায়টা আমার নজরে খুব সহজ ছিলো। যে কথাগুলো আমি তোমাদের বললাম সেগুলো অনুপমকেও বলেছিলাম। বলে না- সাদা মনে কাদা নেই। সেই অবস্থা ছিলো আমার। নিজের ফর্মুলার বিষয়েও আমি তাকে অনেকটা বলেছিলাম। সে যে বেইমানি করবে সেটা কে জানতো? হঠাৎ এক দিন জানতে পারলাম অনুপম কোনও বিষয় রিসার্চ করছে। নিজের স্পাই লাগিয়ে তার রিসার্চের বিষয়টা জানতে পারলাম। তখনই মাথা ঘুরে গেল আমার। অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করেছিলাম। তাকে বলেওছিলাম যে সে করুক রিসার্চ, কিন্তু অবশেষে ক্রেডিটে যেন আমার নামটা দেয়। সে পুরোপুরি অস্বীকার করলো। এবার তুমি নিজেই বলো অফিসার, আমার বদলে তুমি হলে কী করতে?’
‘রিভেঞ্জ নিতাম।’ গম্ভীর গলায় অর্চিষ্মান বলল। অর্চিষ্মানের কথায় চমকে গেল স্বপ্নীল। কিন্তু ডাঃ চৌধুরী চমকালেন না। উত্তেজিত হয়ে বললেন – ‘একদম ঠিক বলেছো। রিভেঞ্জ। এদেরকে ক্ষমা করা যায় না। এদেরকে ক্ষমা করলে ঈশ্বর কোনও দিন ক্ষমা করবে না। এদের থেকে রিভেঞ্জ নিতে হয়। আমিও তাই করলাম। আমিও রিভেঞ্জ নিলাম অফিসার, আমিও রিভেঞ্জ নিলাম।’
এবার অর্চিষ্মান উঠে দাঁড়ালো।
‘খুব ভালো করলেন ডাঃ চৌধুরী, খুবই ভালো করলেন। এবার আমাদের অফিসে গিয়ে বলবেন যে আপনি রিভেঞ্জটা কী ভাবে নিলেন। স্বপ্নীল, আমি ভুল করিনি ডাঃ ব্যানার্জীর ফাইলটা রিওপেন করে।’
ডাঃ চৌধুরী কিছুক্ষণের জন্য কিছুই বুঝতে পারলেন না যে কী হলো। যখন বুঝতে পারলেন তখন তার আর করার কিছুই নেই। কী বলবেন ভেবে পেলেন না। অবশেষে মুখ খুললেন ডাঃ চৌধুরী। বললেন – ‘তোমরা কী ভাবছ, এখান থেকে তোমরা বেরিয়ে যেতে পারবে? চারিদিকে আমার গার্ড আর সিকিউরিটি আছে। ক্যামেরাতে যা যা রেকর্ড করা আছে সবগুলোকে ডিলিট করো আমার সামনে। না তো এখান থেকে বেরোনো তোমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।’
মুচকি হাসলো অর্চিষ্মান।
‘ডাঃ চৌধুরী, যখন থেকে আমরা দু’জন এখানে বসে আছি, তখন থেকে আমাদের কমান্ডো এই ফার্ম হাউসকে চারিদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে। আমরা কাঁচা খেলা খেলি না ডাঃ চৌধুরী। চিন্তা করবেন না, আপনাকে আমাদের অফিসে খুব ভালো করেই ওয়েলকাম জানানো হবে।”

পর্ব – ১৮
……………..

‘আর কোনও উপায় নেই। এর থেকে বেশি আমরা আর কিছুই করতে পারবো না।’ হতাশার সুরে কথাগুলো বলল অর্চিষ্মান।
তার সামনে ন্যাশনাল সিকিউরিটি উইংএর বড়বড় অফিসাররা দাঁড়িয়ে আছে। সাথে আছেন আবির্ভাব গাঙ্গুলীও।
‘তোমাকে এমনি হতাশ হতে এর আগে কোনও দিন দেখিনি অর্চিষ্মান।’ আবির্ভাব গাঙ্গুলী বললেন।
‘আর আমরা করতেই বা কী পারবো স্যার? এটা বাইলজিক্যাল ওয়েপানের মত চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে। যেটা ছড়িয়ে গেছে সেটাকে আটকানো সম্ভব নয়। খুব বেশি আমরা নতুন ওয়েপান তৈরি বন্ধ করতে পারি। আর আমি সেটাই করতে যাচ্ছি। একটা মেঘমিত্রাকে আমরা পেয়েছি। এমন অসংখ্য মেঘমিত্রা দেশের চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদেরকে খুঁজে বের করা জাস্ট ইম্পসিবল। আমরা চেষ্টা করতে পারি যাতে নতুন মেঘমিত্রা আর তৈরি না হোক। স্যার, আমার ফোর্স দরকার। সেখানকার পরিস্থিতি আমার জানা নেই।’

‘লাইফ লাইন ড্রাগস্’ ডাঃ দিবাকর চৌধুরীর ওষুধের কোম্পানি। কোলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে বেশ কিছুটা দূরে এই কোম্পানির ফ্যাক্টরি। এই ফ্যাক্টরিতেই তৈরি হয় এমন ওষুধ যেগুলো স্বল্প মূল্যে বহু লোকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এবং এই ফ্যাক্টরি থেকেই তৈরি হয় অর্চিষ্মানের কথায় ‘বাইলজিক্যাল ওয়েপান’। দেশের বেশ কিছু বড়বড় শহরে ডাঃ দিবাকর চৌধুরীর কোম্পানির ফ্যাক্টরি আছে। যে যে শহরের ডাঃ চৌধুরীর কোম্পানির ফ্যাক্টরি আছে, সেই রাজ্যের ন্যাশনাল সিকিউরিটি উইংএর ব্রাঞ্চকে খবর পাঠানো হয়ে গেছে। একটা বিশেষ ক্যাপসুল যেন তৈরি না হয়।
পশ্চিমবঙ্গে একমাত্র ফ্যাক্টরি কোলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে। অর্চিষ্মান কিছু ফোর্স নিয়ে রওনা হলো সে দিকে। ফ্যাক্টরিটা বানানো বেশ অনেকটা জায়গা ঘিরে। চারিদিকে সিকিউরিটিতে ভরা। ফ্যাক্টরির গেটের সামনে একটা গাড়ি এবং দু’টো ফোর্সে ভরা ভ্যান এসে থামলো। ফ্যাক্টরির সিকিউরিটি ইনচার্জের চেহারা বেশ লম্বা চওড়া। অর্চিষ্মানের গাড়ি থেকে নামতেই সে এগিয়ে এলো। অর্চিষ্মান তাকে নিজের আই ডি কার্ড দেখিয়ে বলল – ‘আপনি হয়তো খবর পাননি এখন যে এই ফ্যাক্টরির, এই কোম্পানির মালিক এখন আমাদের আন্ডারে। আমার কাছে অর্ডার ছিলো ফ্যাক্টরি সিল করে দেওয়ার। কিন্তু আমি সেটা করবো না। এই ফ্যাক্টরিতে অনেক ওষুধ তৈরি হয় যেটা সাধারণ মানুষের উপকার করে। তাই আমরা শুধু একটা বিশেষ ওষুধের ম্যানুফ্যাকচারিং বন্ধ করতে এসেছি।’
সিকিউরিটি ইনচার্জ ভালো করে অর্চিষ্মানকে দেখে বলল – ‘আমার বস ডাঃ দিবাকর চৌধুরী নয়। আমার বস হলো এই সিকিউরিটি এজেন্সির মালিক। দিবাকর চৌধুরীকে আপনারা গ্রেপ্তার করুন বা মেরে ফেলুন, যতক্ষণ না নিজের বস থেকে আমি অর্ডার পাবো নিজের ডিউটি আমি বন্ধ করবো না। বাইরের কোনও লোকের ভিতরে প্রবেশ নিষেধ।’
‘তার মানে আপনি ভিতরে ঢুকতে দেবেন না। তাই তো?’
‘না।’
সিকিউরিটি ইনচার্জের না বলার সাথে সাথে দু’টো ভ্যান থেকে যে ফোর্স নেমেছিল তারা নিজের হাতে নিমেষের মধ্যে বন্দুক উঠিয়ে নিলো। সিকিউরিটি গার্ড ফ্যাক্টরিতেও প্রচুর ছিলো। তাদের বন্দুকও গুলি চালাবার জন্য প্রস্তুত হলো। ফ্যাক্টরির সিকিউরিটি ইনচার্জ অর্চিষ্মানের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল – ‘বন্দুক এদিকেও আছে অফিসার।’
‘অদ্ভুত ব্যাপার। আজকাল প্রাইভেট সিকিউরিটি এজেন্সির কর্মীদের দেখছি সাহস অনেক বেড়ে গেছে। তারা নাকি আমাদের উপর কথা বলে, তারা নাকি আমাদের দিকে বন্দুক তাক করে। কোথা থেকে পাও হে এত সাহস?’
কথাটা বলার পর অর্চিষ্মান আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করলো না। নিজের কোমর থেকে পিস্তলটা বের করে সোজা সিকিউরিটি ইনচার্জের কপালে ঠেকিয়ে বলল – ‘ট্রিগারটা টিপলেই গল্প শেষ।’

কোলকাতা সহ দেশ জুড়ে ডাঃ দিবাকর ব্যানার্জীর কোম্পানির যত ফ্যাক্টরি আছে সবগুলোতে আপাতত তালা লাগিয়ে দেওয়া হলো। অর্চিষ্মান যখন ফ্যাক্টরিতে ঢোকে তখন তার কাছে আবির্ভাব গাঙ্গুলীর ফোন আসে। তিনি ফোনে বলেন – ‘ফ্যাক্টরি আপাতত সিল করে দাও অর্চিষ্মান। দিল্লী হেডকোয়ার্টার থেকে সেটাই অর্ডার এসেছে। ডাঃ চৌধুরীকে আজ রাতে স্পেশাল ফ্লাইটে দিল্লী নিয়ে যাওয়া হবে। সাথে তুমিও থাকবে।’
আবির্ভাব গাঙ্গুলীর কথার মতই কাজ হলো। শুধু ফ্যাক্টরি সিল করা হলো না, যত প্রাইভেট সিকিউরিটির গার্ড ছিলো প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করা হলো।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি উইংএর কিছু কমান্ডোর সাথে সেই রাতেই অর্চিষ্মান ডাঃ দিবাকর চৌধুরীকে নিয়ে দিল্লীর জন্য রওনা হলো।

পর্ব – ১৯
……………….
দু’দিন পর….
…………………..

নিজের ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে অর্চিষ্মান। সন্ধ্যার সময়। সামনে সূর্যাস্ত হচ্ছে। পিছন থেকে অনন্যা দু’ হাতে দুটো কফির কাপ হাতে নিয়ে এলো। একটা অর্চিষ্মানকে দিলো। কফিতে এক চুমুক দিয়ে সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে অর্চিষ্মান বলল – ‘আমি পারলাম না অনন্যা। পারলাম না এই দেশকে রক্ষা করতে।’
নিজের এক হাত অর্চিষ্মানের কাঁধে রাখলো অনন্যা। বলল – ‘তোমার যা করার সেটা তুমি করেছো। এর থেকে বেশি তোমার কিছু করার ছিলো না। তুমি তো নিজেও জানো যে এটাকে আটকানো অসম্ভব।’
‘প্রতিশোধের আগুন চারিদিক ছারখার করে দেয়। প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকা মানুষ নিজেও পুড়ে যায় এবং আশেপাশের বহু মানুষকে পুড়িয়ে দেয়। এটাই হলো ডাঃ দিবাকর চৌধুরীর সাথে। তিনটে গুমখুন, যার লাশ পাওয়া গেলো না। এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নামে এমন সর্বনাশ। এক দিকে কম দামে ওষুধ বাজারে ছেড়ে গরীব বাঁচানোর ঢং, অন্য দিকে মানুষের জন্মের উপর লাগাম লাগিয়ে দেওয়া। সব ঠিক থাকতো অনন্যা, সব ঠিক থাকতো যদি ডাঃ চোধুরী নিজের বানানো ফর্মুলা নিয়েই এগোতেন। কিন্তু তিনি সেটা করলেন না। তিনি ওষুধটাকে আরও কড়া বানালেন। শেষে ওষুধটা এমন কড়া হলো যে পুরুষরা চিরকালের মত শারীরিক মিলনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেললো। ডাঃ ব্যানার্জীর প্ৰতি আক্রোশ তাকে এই পর্যায় নিয়ে গিয়েছিল যে তিনি এটা দেখতে পারলেন না যে তিনি পুরো দেশকে মারাত্মক সর্বনাশের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ডাঃ চৌধুরীর ফার্ম হাউস থেকে কিছু পুরনো কাগজ পাওয়া গেছে। কাগজগুলো অনেক পুরনো। ওষুধের ফর্মুলা লেখা আছে তাতে। হাতের লেখা যে ডাঃ চৌধুরীর নয় সেটা দেখেই বোঝা যায়। খুব মারাত্মক প্ল্যান করেছিলেন তিনি। ডাঃ ব্যানার্জী এবং তার পরিবারকে মারার পরেও তিনি শান্তি পাননি। ডাঃ ব্যানার্জীকে পুরো দেশ ও দুনিয়ার নজরে বদনাম করা ছিল তার আসল উদ্দেশ্য। দূরদর্শিতায় ভরা ডাঃ চৌধুরী এটা অনুমান লাগিয়েছিলেন যে কোনও না কোনও দিন গভর্মেন্টের নজর পড়বেই জনসংখ্যা বৃদ্ধি অনুপাতের উপর। হয়তো তদন্তও হতে পারে। তখন তিনি ডাঃ অনুপম ব্যানার্জীর ফর্মুলাটা সবার সামনে আনবেন। ডাঃ ব্যানার্জী নিরুদ্দেশ হওয়ার আগেই সেই ভয়ানক ওষুধটা বাজারে ছেড়ে দিয়েছিলেন। জানি না এটা ডাঃ চৌধুরী কী ভাবে করতেন, কিন্তু তার প্ল্যান এটাই ছিলো। আজকের দিনে দেশের বহু মহিলার শরীরের সেই ক্যাপসুল প্রবেশ করে গেছে। তারা বহু অল্প বয়সী ছেলের সাথে সম্পর্ক করে তাদের নপুংসক বানিয়ে দিচ্ছে। এই কারণেই চারিদিকে লেসবিয়ানের সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। টাকা দিয়ে কী না করা যায় অনন্যা। বলতে গেলে ডাঃ চৌধুরী নিজের ইনকামের অর্ধেক থেকে বেশি অর্থ খরচ করেছেন এই র্যােকেটের পিছেনে। জানি না এই অগুনতি মহিলারা আর কত ছেলের জীবন নষ্ট করবে। শায়ক আর প্লুটোর মত হয়তো অসংখ্য পুরুষ ও অল্প বয়সী ছেলে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা তাদের দেখতে পারছি না, তাদের চিনতে পারছি না। এটাই হয়তো আমাদের দুর্ভাগ্য। ডাঃ চৌধুরী দেশের ভিতরেই ভয়ানক বাইলজিক্যাল ওয়ার লাগিয়ে দিলেন। জানি না অনন্যা, ডাঃ চৌধুরীর এই বাইলজিক্যাল ওয়েপান পরবর্তী কালে মনুষ্য জাতির আর কত ক্ষতি করবে।’
অস্তের দিকে যাওয়া সূর্যের দিকে খানিক তাকিয়ে নিজের দু’ চোখ বন্ধ করলো অর্চিষ্মান। অনন্যা তার হাত নিজের হাতে চেপে ধরলো।

*সমাপ্ত।*

Exit mobile version