অণু গল্প

অণু গল্প- আজকের নেতাজী

আজকের নেতাজী
-অঞ্জনা গোড়িয়া

 

 

মহান দেশের মহান নাগরিক। ২৩ সে জানুয়ারি নেতাজীর জন্মদিন।
একদিকে চলছে নেতাজীর মূর্তিতে মাল্যদান। পতাকা উত্তোলন। অন্যদিকে চলছে পিকনিক।চড়ুইভাতি।
মাছ, মাংস আর মদের আয়োজন।দারুন আনন্দ । হই হুল্লোড়। ক্লাব প্রাঙ্গণে। নেতাজীর জন্মদিন বলে কথা। বিশেষ একটা ছুটির দিন। হেলায় নষ্ট করা ঠিক নয়। পাকা রাস্তা দিয়ে চলেছে পিকনিক গাড়ি। ডিজে বক্স আর উগ্র নাচের গানে বেশ জমজমাট রাস্তা।
মিথ্যা বলব না যথাযথ সম্মান জানিয়ে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে পালিত হলো নেতাজীর জন্মদিন।
আমি চলেছি স্কুলে। স্কুলের পালনীয় দিন, পালন করতে। নেতাজীর কথা শোনাতে। নেতাজীর কথা জানাতে। একজন উঠে দাঁড়িয়ে বলল, দিদিমনি দিদিমনি, সত্যি ই কি স্বাধীনতা এসেছে? স্বাধীনতা কি? আমরা কি স্বাধীন হয়েছি?
দেশ স্বাধীন হয়েছে। ঠিকই। আমরা এখনো স্বাধীন হই নি।অনেক প্রশ্নের ই উত্তর জানা নেই।
আমার মতো করে বুঝিয়ে দিলাম। তারপর লজেন্স বিস্কুট খাইয়ে বাড়ি ফেরার পথে রওনা দিলাম।

তখন ও পিকনিক চলছে। নাচ গান বক্স মদ্যপানের মাধ্যমে জমে উঠেছে পিকনিক।
হঠাৎ দূর থেকে লক্ষ্য করলাম। পতাকার বাঁশ টা হেলে যাচ্ছে। এখুনি বুঝি গায়ে এসে পরবে ওদের। কোনো দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।
কোথা থেকে একটা ছোটো ছেলে ছুটে এসে,বাঁশটা ছোটো হাতে চেপে ধরল। সোজা করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আমি দেখতে পেয়ে জোরে পা চালালাম। ছেলে টা কিছুতেই বাঁশ টাকে মাটিতে পড়তে দিল না।
এতক্ষণে টনক নড়ল ক্লাবের ছেলেদের। ছুটে এসে বাঁশটা ধরে পুঁতে দিল ভালো করে। ছোটো ছেলেটির নরম হাতদুটো লাল হয়ে গেছে। বাঁশের খোঁচায় সামান্য কেটে গেল।
কাছে এসে বললাম, তুমি বাঁশ টা চেপে ধরলে কেন? যদি তোমার গায়ে পড়ত?
ছেলেটা জোর গলায় বলল,আমাদের দেশের পতাকা কে কিছুতেই মাটিতে পড়তে দেব না। এতে মাতৃভূমিকে অসম্মান করা হয়। জাতীয় পতাকা আমাদের দেশ মাতার সম্মান।
মাটিতে ফেলতে নেই। স্কুলের স্যার বলেছে আজ।
ছেলেটিকে আদর করে বললাম, ভালো করে পড়াশোনা করো সোনা । তবে ই নেতাজীর মতো হতে পারবে।
মনে মনে স্যালুট করলাম আজকের নেতাজীকে।

Loading

Leave A Comment

You cannot copy content of this page