অণুগল্প- পিঞ্জরের আকাশ

পিঞ্জরের আকাশ
-রীণা চ্যাটার্জী

আঁখি আর ঋক- ভালোবাসার দু’টি মন, এক আত্মা। অবশ্য আঁখির ছিল পাখির মন, উড়ু উড়ু ভাব। মোটে বিয়ের ফাঁদে পড়তে রাজি নয়। নিত্য নতুন অছিলায়, বাহানায়, খামখেয়ালীপনায় তাই ঋককে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল আঁখিকে রাজী করাতে। ঋক বলেছিল আঁখিকে, ‘তুমি পাশে থেকে সাথ দিও, আমি সব লড়াই জিতে নেব.. সবকিছু। যেভাবে চাইবে সাজিয়ে দেব সব শুধু সাথে থেকো ..”
পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে দু’জনে বাসা বেঁধেছিল কাঁধে দায়িত্ব আর দু’ চোখে স্বপ্ন নিয়ে।
কর্মনিষ্ঠা আর সততার মূলধনে দিনরাত এক করে পরিশ্রম করে ঋক ছুঁতে থাকলো এক একটা সাফল্যের সিঁড়ি। আর সেই সিঁড়ি ধরে অসীম ধৈর্য্য আর সহ্য নিয়ে অবিচল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো আঁখি সমস্ত প্রতিকূলতা আর সমালোচনা অগ্ৰাহ্য করে।
দিন যায়- সাফল্য যেমন আসে, দায়িত্ব- কর্তব্য তেমন পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। হাসি মুখে দু’জনে মিটিয়ে চলে জীবন সংগ্রামের প্রতিটি লয়-ক্ষয়। আঁখি শুধু চেয়েছে ঋক ভালো থাকুক‌, সফল হোক প্রতিটি ক্ষেত্রে। নিজের চাওয়া-পাওয়াগুলো কোনো এক অজানা সূত্রে মিশিয়ে দিয়েছে ভালোবাসার কাছে। ঋক কথা রেখেছে, আঁখির সব দায়িত্ব নিজের করে নিয়েছে, তাছাড়াও অনেক অযাচিত দায়ভার কাঁধে তুলে নিয়েছে নির্দ্বিধায়। শুধু একটাই কথা, ‘তুমি থাকবে আমার বাম পাশে।’ যেমন লক্ষীদেবী থাকেন নারায়ণের পাশে। নারায়ণ বাঁধা থাকলে লক্ষী তো আপনিই ধরা দেন, ওদের সংসার যেন মর্ত্যের বৈকুণ্ঠ। মনের সমীকরণ ওদের বড়ো অদ্ভুত- এক সুরে বাজে সবসময়।
যেভাবে চেয়েছে ঋক, সেভাবেই পাশে থেকেছে। সাফল্যের সূর্য ছুঁয়ে আজ আঁখির সংসারে ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য।
যে আত্মীয়রা একদিন কৌতুহলী দৃষ্টি, আর অমানবিক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতো ওদের দিকে তাচ্ছিল্য আর ভ্রুকুটি দিয়ে। আজ তারা সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ওদের ঐশ্বর্য, স্বচ্ছলতা, বৈভব বেশ আলোচিত বিষয়। আঁখি- ঋকের উদাহরণ দেয়, তারাই আজ নিজের ছেলেমেয়েদের কাছে। অতীত ভুলে যাওয়া তো খুব সহজ। তাই আত্মীয় স্বজনদের আপ্যায়ন, সম্মান এখন ওদের কাছে ভীষণ সহজলভ্য।

যাই হোক দিন এগিয়ে চলে, আঁখির সেই উড়ু উড়ু মনটা ঋকের সাথ দিতে দিতে শৃঙ্খল পরে নিয়েছে নিজের অজান্তেই। যে পাখিটা উড়তে চাইতো মনের আকাশে অনেক দূর খেয়াল খুশীতে, আজ তার বৈভবে পূর্ণ সোনার পিঞ্জরে। সবাই দেখে আঁখির সুখ।
কিন্তু সেই সোনার পিঞ্জরে আঁখির আকাশটা আজ ভীষণ ছোট- নাহ্ আঁখির মনপাখিটাও বুঝতে পারেনি ওর আকাশ কবেই শৃঙ্খলিত হয়ে গেছে। ও যে অভ্যাস করে নিয়েছে ধৈর্য্য আর সহ্যের। এখন মাঝে মাঝে শুধু হাঁফ ধরে আঁখির মনে- সেটা কি শুধুই ছোট্টো আকাশের জন্য!

Loading

8 thoughts on “অণুগল্প- পিঞ্জরের আকাশ

  1. বাহ, খুব সুন্দর। অত্যন্ত বাস্তবিক….. খুব ভালো লাগলো…

  2. ভালবাসার রাংতা কাগজে একটা অন্তর্নিহিত বেদনা লুকিয়ে আছে ঘন মেঘের মত।

  3. একটা সুন্দর মন ঘন মেঘের আড়ালে থাকা বেদনাও খুঁজে পেল, অসংখ্য ধন্যবাদ বন্ধু আপনাকে।

Leave A Comment