সরস্বতী
-সঞ্জয় গায়েন
বাঙালির ভ্যালেন্টাইন ডে এবছর দু’দিন। এক দৈনিক সংবাদপত্রের হেডলাইন। দেবী সরস্বতীর আরাধনার সংবাদ পরিবেশন করতে গিয়ে এমনই লিখেছেন জনৈক সাংবাদিক। বিস্তারিত বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, পঞ্জিকা মতে সরস্বতীপুজো এবার দ্বিমতে৷ কেউ বলছেন, বুধবার পুজো। কারও মত, বৃহস্পতিবার। এরপর আরও কিছু শব্দ খরচ করে উপসংহারে গিয়ে তিনি লিখেছেন, এতে অবশ্য সরস্বতীপ্রেমীদের কোন অসুবিধা নেই। তারা বরং খুশি। তার কারণ হিসাবে তারা জানিয়েছেন, এতে দু’দিন ধরে প্রেম করা যাবে। আর এভাবেই বাঙালির ভ্যালেন্টাইন ডে দু’দিন ধরে পালিত হবে।
সংবাদটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পাঠ করার পর রাগে সারা শরীর ঘিনিয়ে উঠল শাশ্বতের। এইভাবে দেবী সরস্বতীর আরাধনাকে হাসি ঠাট্টা মজার মোড়কে পরিবেশন করে হিন্দুত্বকে অপমান করেছেন এই সংবাদপত্র। তার চেয়ে বড় কথা সাংবাদিকটি দ্বিমতের পুজো ব’লে নিজের মুর্খামীর পরিচয়ও দিয়েছেন। পরক্ষণেই মনে হল, ওনাকে দোষ দিয়ে কি লাভ? বহু পুরোহিতই তো এমন বিধান দিচ্ছেন। ভুল পঞ্জিকা দেখিয়ে বলছেন, দু’দিন ধরে পুজোর কথা। নিজস্ব স্বার্থে।
শাশ্বত তাই কিছু কমেন্ট না করে এড়িয়েই যাচ্ছিল। পরে ভাবল, না। এভাবে এড়িয়ে গিয়ে গিয়েই সনাতন ধর্মে বিশ্বাস তলানিতে ঠেকছে। অথচ সনাতন ধর্মের আচার বিচার সংস্কারের সঙ্গে ওতোপ্রতো ভাবে বিজ্ঞান জড়িয়ে।
শাশ্বত নিউজটার লিঙ্কে গিয়ে দেখে ইতিমধ্যেই খিল্লি করা শুরু করে দিয়েছে সবজান্তা ফেসবুকওয়ালারা। ও আর থাকতে পারে না। কমেন্টে গিয়ে লেখে, সরস্বতী পুজো দিবারম্ভের পুজো। তাই এবছর পঞ্চমী তিথির সময়কালের মধ্যে যেহেতু বৃহস্পতিবার দিবারম্ভ আছে, সেই হেতু পুজো হবে বৃহস্পতিবারের প্রত্যুষে। দ্বিমতের পুজো বলে যারা প্রচার করছেন তারা ভুল বলছেন। আর অন্যায় করছেন বিদ্যার দেবীকে প্রেমের দেবীর সঙ্গে তুলনীয়া করে তুলে… শাশ্বতের কলম এভাবেই এগিয়ে চলতে থাকে। আর মনের মধ্যে উচ্চারিত হতে থাকে, দেবীর অঞ্জলির মন্ত্র–
শ্বেত পদ্মাসনা দেবী শ্বেত পুষ্পোপশোভিতা
শ্বেতাম্বরা ধরা নিত্যা শ্বেত গন্ধানুলেপনা
শ্বেতাক্ষসূত্রহস্তা চ শ্বেতচন্দনচর্চিতা
শ্বেতবীণা ধরা শুভ্রা শ্বেতাভরণভূষিতা….।
ঋনস্বীকার- জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়