কবিতা- বাগদেবীর আরাধনা

বাগদেবীর আরাধনা
-উজ্জ্বল দাস

 

 

একটু জ্ঞান, একটু বিদ্যে চেয়েছিলাম ছোটবেলা থেকে।
বদলে পেলাম কিছু সই করা কাগজ।
স্কুল থেকে বেরোনোর পর, মাস্টার মশাই বললেন

“আপদ বিদেয় হয়েছে”।

হ্যাঁ মা আমি পাশ করেছি, ডিগ্রি পেয়েছি
এটা ওটা সেটা,
আরো আরো আরো অনেক কিছু পেয়েছি।
দুহাতে কামিয়েছি। নাম-যশ-খ্যাতি।

আজ কেন যেন মনে হয় নাহ-
না পেলাম বিদ্যা, না এলো অর্থ।
না তৈরি হলো বোধ, না হলো বুদ্ধি।
শুধু বসন্ত পঞ্চমীতে ছেলে মেয়ের হাতেখড়ি দিয়ে বললাম

“আমি হতে পারিনি তো কি হয়েছে , ওদের মানুষ করো মা”

শিশুকাল থেকেই ওদের যুদ্ধে পাঠিয়ে দিলাম।
ছোট্ট ছোট্ট হাত পা গুলোতে ওরা হারিয়ে ফেললে শৈশব।
ওদের মাথায় পুরে দেওয়া হলো সাদা কাগজের বস্তা পচা স্তুপ।

বলা হলো “প্রথম হতে হবে”।

প্রথম হলো। ক্লাস বাড়লো ক্রমশ।
আরো তির গতিতে আমার টাকা পয়সা ধংস করে করে,
তৈরি হলো একজন বিরাট চাকুরে।
অনেক অর্থ, অনেক রোজগার।

কলার টা তুলে বললাম

–“হে বাগদেবী, কি তৈরি করলাম দেখলে।”

আমার আর কোন কাজ নেই, আমি মুক্ত- আমি মুক্ত।

আমার বাসস্থানের চতুর্দিকে ফুল ফলে ভরা,
কলকাকলিতে ভরা।
কি ভালো ভালো লোক চারপাশে।
আমি এখন সত্তর।
আমার পরনে রাজকীয় ধবধবে সাদা জামা কাপড়-
বাদশাহী খানাপিনা-
নিয়মিত ডাক্তার-
নিয়মিত পথ্য-
হুঁ হুঁ প্রচুর খরচ।

সারাক্ষন ইস্ত্রি করা সাদা পরিয়ে রাখে এরা সবাইকে।
শেষ দিনে যাতে পাল্টাতে না হয়।
এটা একটা বৃদ্ধাশ্রম । রাজকীয় বৃদ্ধাশ্রম।

হেঁ হেঁ, হে বাগদেবী! কেমন অঞ্জলি দিলাম বলো।
মানুষের মত মানুষ করতে পেরেছি।
আমি এখন একজন গর্বিত বাবা।

Loading

4 thoughts on “কবিতা- বাগদেবীর আরাধনা

  1. আলাপীমনের সান্নিধ্যে সাহিত্যের বিপ্লব ঘটুক।
    উজ্জ্বল

Leave A Comment