“গোল্ডির কিছু কথা”
– সোমা কর্মকার
কী হবে?
তাহলে কী মরে যাবে?
এদিকে বারোটা বেজে গেছে, আবার ফিরে গেলে ওদিকে তো দেরী হয়ে যাবে? উফ্ ওকেই বরং একটা ফোন করি।
বাসে উঠি কিছুটা যেতেই বারবার অস্বস্তি হতে থাকে, নানান কথা ভেবে ভেবে না পেরে পিউ ফোনটা করেই ফেলে অর্ককে। ফোনটা বাজতেই অর্ক ফোনটা রিসিভ করে বললো, হ্যাঁ বলো তুমি বের হও নি এখনো?
পিউ বলে আরে বেরিয়েছি তো কিন্তু একটা ভুল হয়ে গেছে জানো তো, কী যে হবে বুঝতে পারছিনা।
অর্ক
:- আহা! আরে কী হয়েছে সেটা তো বলবে?
পিউ:- আরে মাছের পাম্পটা একবার বন্ধ করেছিলাম, আর চালাতে ভুল গেছি! আমি বাসে উঠে বেশ কিছুটা চলেও এসেছি। আবার তো আমরা সেই কালরাতে ফিরবো।
-যাঃ তুমি কেনই বা বন্ধ করতে গেলে, আমি তো সকালে চালিয়ে দিয়ে বলে এলাম বেরোনোর সময় দেখো যেন পাম্প বন্ধ না থাকে।
পিউ:- কী হবে গো? তাহলে কী মরে যাবে মাছটা?
-কী আর হবে মরেই যাবে, এমনিতেই বেশ কিছু দিন হয়ে গেল জল পাল্টানো হয়নি, এবার অক্সিজেন এর অভাবে মরে যাবে, যাক কি আর করা যাবে, যা হবার হবে, তিনটে তো এমনিতেই মরে গেছে। এখন পরে আছে একটা, ভালোই হবে মরে গেলে আমারও খাটুনি কমে যাবে। তুমি চিন্তা করো না সাবধানে যাও আর পৌঁছে আমায় ফোন করো, রাখছি কেমন।
এই বলে অর্ক ফোন কেটে দিলো।
সারা রাস্তা পিউ ভাবতে ভাবতে গেলো, এতোদিন পর বাপের বাড়ি যাচ্ছে কোথায় মনটা আনন্দে থাকবে তা না হয়ে শুধু ভাবছে, ইস আমার ভুলের জন্য বোধহয় হারাধনের বাকি একটাও গেলো। খুব মন খারাপ হলো পিউয়ের। অনেকদিন পরে বলে কয়ে রাজী করিয়ে অর্কর সাথে নিজে গিয়ে হাট থেকে বেছে বেছে একটু ভালো অরেন্ডা প্রজাতির চারটে দামি বড়ো গোল্ড ফিস নিয়ে এসেছিলো। তার মধ্যে দুটো রেড ক্যাপ ছিলো। এক সপ্তাহের মধ্যেই তিনটি মরে যায়, যাক সে সব কথা, এখন পড়ে আছে একটা রেড ক্যাপ। তখনই অর্ক বলেছিলো ‘এসবের দরকার নেই একে তো বাঁচে না তারপর খাটুনি।’
যাই হোক এখন তো ভগবানের উপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। পিউ মনে মনে ঠাকুরকে বললো প্লীজ ঠাকুর মাছটাকে তুমি বাঁচিয়ে দাও, দরকার হয় আমার জীবনের দশ পার্সেন্ট আয়ু ওকে দিয়ে দাও প্লীজ ঠাকুর প্লীজ.. ।
এসব নানা কিছু ভাবতে ভাবতে পিউ বাড়ি পৌঁছে যায়, বাড়ি ফিরে ও মাকে সব বলে। মাও শুনে খুব দুঃখ প্রকাশ করে, বলে কী সুন্দর মাছগুলো ছিল। যাই হোক বাপের বাড়ি গিয়ে হাসি মজা করে ভালো মন্দ খাওয়া দাওয়া করে ওরা পরদিন রাতে আবার বাড়ি ফিরে আসে, এসে ঘর খুলেই পিউ আগে অ্যাকোরিয়ামের লাইট আর পাম্প জ্বালায়। ভয়ে ভয়ে দেখে মাছটা একটা কোনায় গাছের ফাঁকে ঢুকে আছে, কোনো নড়াচড়া করছে না। প্রায় এক মিনিটের মাথায় মাছটা একটু নড়ে উঠল তারপর চলতে শুরু করে আস্তে আস্তে। খুব খুশি হলো পিউ। ছুটে গিয়ে অর্ককে বলে, জানো মাছটা বেঁচে আছে, উফ্
আমার যে কী টেনশন হচ্ছিল কি বলবো।
অর্ক তক্ষুণি বলে আরে অক্সিজেনের অভাবে ও অসুস্থ হয়ে পড়েছে, কোনো রকমের বেঁচে আছে কাল ঠিক মরে যাবে দেখো।
পিউ বলে, না না আর মরবে না, অর্ক বলে আমার এসবে অভিজ্ঞতা আছে আমি জানি।
আবার পিউ একটু চিন্তিত হয়ে পড়ে পরদিন সকালে উঠে দেখে মাছটা ঠিকই আছে, খুব খুশি হলো পিউ দেখতে দেখতে প্রায় দু’মাস কেটে গেলো এখনও মাছটা আছে ওদের সাথে।
পিউ ভগবানকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানায় মাছটার জন্য।
কেউই চিরকাল থাকে না তেমনি মাছটাও হয়তো একদিন মারা যাবে ঠিকই কিন্তু ওই দিন যদি কিছু হতো তাহলে হয়তো পিউর নিজের কাছে নিজেকে দোষী বলে মনে হতো।
এবার পিউ ঠিক করেছে ওই রেড ক্যাপের সাথে আরও একটা রেড ক্যাপ আরও দু’টো মাঝারি সাইজের এমনই গোন্ড ফিস এনে আবার চারটে পূর্ণ করবে।