নাটুয়া
-সুজিত চট্টোপাধ্যায়
খবর পেয়েই বলা ছুটে গেলো রিহার্সাল রুমে। নাটকের ডিরেক্টর চিৎ হয়ে পড়ে আছে ছেঁড়া শতরঞ্জির উপরে। বুকের ওপর মুঠো করা হাত, আর সেই মুঠোয় শক্ত করে ধরা আছে, নাটকের বইটা।
জগতে কিছু মানুষ জন্ম নেয় , আদেশ পালন করাতে। আদেশ পালন করতে নয়। বিনয়দা ছিলেন এমনই এক চরিত্রের অদ্ভুত মানুষ। শিশুর মতো সরল, বালকের মতো অবুঝ, যুবকের মতো চঞ্চল, জেদি।
সমাজের প্রচলিত নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, জিভ ভেঙচে, তিনি যে কী আনন্দ পেতেন , তার সদুত্তর কেবল তিনিই দিতে পারবেন।
সেদিন খালি গায়ে, সিল্কের লুঙ্গি পরা অবস্থায় রকে বসে, সাদা সুতো বিড়িতে সুখ টান দিয়ে বললেন, আচ্ছা বলা, একটা ব্যাপার খেয়াল করেছিস ?
বলা অবাক হয়ে বললো, কী? কোন ব্যাপার?
বিনয়দা বিড়িটা, বুড়ো আঙুল আর মধ্যমার মধ্যে নিয়ে, ক্যারমবোর্ডের স্ট্রাইকার মারার কায়দায় রাস্তায় ছুঁড়ে দিয়ে, উত্তমকুমার স্টাইলে বললেন, পাক্কা একমাস একদম জলপথে যাইনি , ঠিক?
জলপথ বলতে , সুরাপান ।লোকটা মদ খেতে পারে বটে।বিয়ার দিয়ে শুরু হবে , তারপর ইংলিশ। এখনো নেশা জমেনি, এবার বাংলা। তাতেও ঠিক জুত হলোনা। এবার চুল্লু। ব্যস, এবার চুড়ান্ত অবস্থা। রাস্তায়, রকে, নর্দমার পাশে, যেখানে সেখানে তার লণ্ডভণ্ড দেহ পড়ে থাকতে পারে।
অপরিচিত যারা, তারা বদ্ধ মাতাল বিবেচনা করে পাশ কাটিয়ে চলে যান। তাইবলে, পরিচিতরা যে খুব পাত্তা দেন, তেমনটাও নয়। তারা সমালোচনা করেন- কত বড়ো ফ্যামিলির ছেলে , ভাবা যায়? সে কিনা একপেট চুল্লু গিলে নর্দমায় গড়াগড়ি দিচ্ছে।
উস্কে দেবার লোকের অভাব নেই এ জগতে।
_ ঠিক বলেছেন দাদা। একেবারে কুলাঙ্গার। এমন সুন্দর চেহারা, একেবারে হিরো। অথচ স্বভাব দ্যাখো … ছি ছি ছি…
বলার ভালো লাগেনা। দু’চার জন বন্ধুবান্ধব যোগাড় করে, তাদের সাহায্যে কখনো রিক্সায় চাপিয়ে, কখনো চ্যাংদোলা করে তুলে বাড়ি পৌঁছে দেয়।
সত্যিই তাই। বিনয়দার অদ্ভুত স্বভাব। মদ খাবেনা তো একমাস দুমাস টানা ওপথে যাবেনা। সেই সময় মনে হবে, বিনয়দা ওসব পাঠ একেবারে চুকিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তা নয়। মাতাল সাসপেন্ড হয় রিটায়ার করেনা।
” একমাস জলপথে যাইনি ” যখনই বলেছে, বলার বুঝতে অসুবিধে হয়নি, এবার বিনয়দার মাথায় পোকা নড়েচড়ে উঠেছে। বলা শাসনের সুরে বললো- খবরদার বিনয়দা, আবার ওই সব শুরু করবেনা বলে দিলাম, খুব খারাপ হয়ে যাবে। রাস্তাঘাটে পড়ে থাকবে, আমি কিন্তু তুলে আনতে পারবো না।আচ্ছা , বৌদি এতো রাগ করে, কথা শোনায়, তোমার লজ্জা করেনা, আশ্চর্য লোক বটে তুমি।
বিনয়দা অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে হেঁ হেঁ করে হাসে। বলা বোঝে, আজ কপালে দুর্ভোগ আছে।
অনুমান এক্কেবারে ঠিক। বিকেলবেলা গলা অব্দি পান করে, টলমল করতে করতে হাজির। বৌদি যথারীতি রেগে কাঁই…
_ অসভ্য লোক কোথাকার। খবরদার বাড়িতে ঢুকবে না। যেখানে ওইসব গিলেছ, সেইখানেই গিয়ে থাকো। মাতাল কোথাকার…
বিনয়দা নেশায় আধখোলা চোখে বৌদির দিকে তাকিয়ে জড়ানো গলায় বললো, মোটেই না… একদম মাতাল বলবেনা… আমি পিপে শুদ্ধু গিলে নিতে পারি! কিন্তু, মাতাল হইনা। বুঝেছ…
_ থাক আমার আর বুঝে কাজ নেই। অনেক বুঝিয়েছ, অনেক বুঝেছি। রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে আবার বড়বড় কথা। কোন মাতাল নিজেকে মাতাল বলে শুনি। হাড়বজ্জাত লোক একটা।
বিনয়দা কথাটা শুনে এমন কায়দায় মাথা দোলালো, যেন মনে হলো, সে কথাটা মেনে নিয়েছে। ঠোঁটে অদ্ভুত একটি হাসি ঝুলিয়ে বললো, মা যার তাল সামলায়, সেই মাতাল…
আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। ধরাস করে দরজার সামনে বসে পড়লো। বৌদি, ধাঁ করে মুখ ঘুরিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গেলো। ভাবখানা এমন, যা পারিস কর, আমি নেই।
মজা দেখতে ভীড় জমছে। মুচকি হাসি, ফিসফাস শুরু হয়েছে। সুতরাং এ নাটকের এখানেই ইতি টানা উচিৎ। বলা, বিনয়দা কে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে গেল।
আরেকদিনের কথা, না বললেই নয়। পাড়ার ক্লাবের বাৎসরিক অনুষ্ঠানে সেবার নাটক করা হবে সিদ্ধান্ত হলো। নাটক নির্বাচন থেকে কে কে নাটকে জায়গা পাবে, কে কোন চরিত্রে অভিনয় করবে, ডিরেকশন, মানে নাটক সংক্রান্ত যাবতীয় দায়িত্ব বিনয়দার কাঁধে। বিনয়দাও অত্যন্ত প্রফুল্ল চিত্তে সেই দায়িত্ব নিয়ে, সকল কে নিশ্চিন্ত করলো।
একমাস টানা রিহার্সাল দিয়ে নাটক মঞ্চস্থ হতে চলেছে আজ সন্ধ্যায়। সাজসাজ রব। অভিনেতারা সকাল থেকেই খুব টেনশনে আছে। বিনয়দা ভোকাল টনিক দিচ্ছে।
_ চিন্তা করিসনা, বুক টানটান করে অভিনয় করবি। ফাটিয়ে দেওয়া চাই।
প্রাইজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেরা অভিনেতা পাবে মেডেল।
নিলুদা, ক্লাবের সম্পাদক। দুপুরবেলা বলা কে ডেকে বললো, দ্যাখ বলা! ওই বিনয় কে, বিশ্বাস নেই। এই এখন থেকে নাটক শেষ হওয়া পর্যন্ত চোখে চোখে রাখবি। ওর স্বভাব জানিস তো। ডুবিয়ে না দেয়… বুঝেছিস কী বললাম ?
বলার একথা মাথায় আসেনি তা নয়। কিন্তু বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু নিলুদা কথাটা বলার পরে, চিন্তা বেড়ে গেলো।
একজন পারমানেন্ট পাহারাদার মোতায়েন করা প্রয়োজন।দেবুকে সেই ভয়ঙ্কর শক্ত কাজের ভার দেওয়া হলো। দেবুকে বেশ ভালো করে বুঝিয়ে দেওয়া হলো, বিনয়দা যেন কোনমতেই বাইরে না যেতে পারে।
নাটকের ব্যাপারে ওরা একেবারেই অজ্ঞ। বিনয়দা র ভরসা তেই ওদের এই নাট্টযাত্রার সিদ্ধান্ত। ইলেভেন্থ আওয়ারে যদি বারোটা বাজায়, তাহলে পাড়ায় মুখ দেখাবার উপায় থাকবেনা। একটা বিদিকিচ্ছিরি কান্ড হবে।
সবই ঠিক আছে। কোথাও কোনও গোলমাল নেই। নাটক শুরুর ঘন্টা খানেক আগে, নিলুদা আর বলা গেল, ডিরেক্টরের খোঁজ নিতে। ঘরে গিয়ে দেখা গেল, দেবু একা বসে আছে, বিনয়দা নেই।
সর্বনাশ! এ কি রে… দেবু! বিনয়দা কই?
আঁতকে উঠলো বলা।
দেবু নেহাৎ ভালমানুষ গোবেচারা ছেলে।কাঁচুমাচু মুখ করে বললো, এই তো নাটকের বইখানা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে গেল।
_ সেকি রে কোথায় গেল ?
_ ওই তো, আমাকে বললো , নাটক তো করছিস, কিন্তু আজ এই শুভদিনে, নাটকের বইটাকে মন্দিরে পুজো দিতে হয়, সেকথা কারুর খেয়াল আছে? যাই মন্দিরে পুজোটা দিয়েই আসি, এইকথা বলে চলে গেল!
নিলুদা একটা লম্বা শ্বাস ছেড়ে, হতাশ গলায় বললো, ব্যাস হয়ে গেল!
সত্যিই তাই। ওরা যে বিপদের আশঙ্কা করছিল, বাস্তবে তাই হলো।
সেদিন বিনয়দা, মদ খেয়ে এমন সব বিধকুটে কান্ড করলো, ছেলেদের মাসখানেকের খাটুনি একেবারে নাকের জলে চোখের জলে ধুয়ে মাটিতে মিশে গেল।
নিলু দা বললো, সেরা অভিনেতার মেডেলটা বিনয়ের গলায় ঝুলিয়ে দে। ও ই আজকের নাটকের সেরা অভিনেতা।
এটা কিন্তু বিনয়দার পরিচয় নয়। বিনয়দা নাটক পাগল। হ্যাঁ পাগল। আমরা কারোর মধ্যে ভিন্নতর কিছু দেখলেই, তাকে পাগল আখ্যা দিতে পছন্দ করি। এমন উদাহরণ অনেক আছে। বিনয়দা বলে প্রেম। নাট্টপ্রেম। একমাত্র নাটকের কাছেই সে নত হতে রাজি।
হঠাৎ একদিন চিৎপুরে পেশাদার যাত্রাদলে নাম লিখিয়ে এলো বিনয়দা।
বলা শুনে বললো, সেকীগো! তাহলে তোমার চাকরি?
_ ধুত্তোর চাকরি। অনেকদিন চাকরি করেছি। ফালতু কাজ। পেটের জন্যে করা। প্রাইভেট কোম্পানির চাকরির কী দাম ? সরকারি হলে অন্য কথা। পঞ্চাশ ছাড়িয়ে গেছি। এবার মনের খোরাক মেটাবো। বলা, চোখ কপালে তুলে বললো, বৌদি কে কী বলবে? ওসব মনের খোরাক টোরাক মেরে ঘুচিয়ে দেবে। টাকা পাবে কোথায়? সংসার চলবে কিসে?
_ চল, চা খেয়ে আসি।
বলার কাঁধে হাত রেখে, এমন দুলকিচালে হাঁটতে লাগলো, যেন সারা পৃথিবীকে এক তুড়িতে ওঠবোস করাতে পারে। এ দুনিয়ায় অনন্ত তার জন্যে একচিলতেও দুঃখ, ঈশ্বর সৃষ্টি করতে পারেননি।
ফেবারিট কেবিনে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে জানা গেল। পেশাদারি যাত্রাদল। সুতরাং সেখান থেকে টাকা পয়সা পাওয়া যাবে। তাছাড়া, বছরে আটমাস তো বাইরে বাইরে যাত্রাপালার শো করেই কেটে যাবে। বাড়িতে একা বৌদি। খরচ কিইবা। সুতরাং আটকাবে না। ভৈরব বাবুর লেখা পালা। নির্দেশক নাকি কথা দিয়েছেন, ভিলেন চরিত্র বিনয়দাকে দিয়েই করাবেন। দলের মালিক প্রবোধ বন্ধু বাবুরও নাকি তাতে সায় আছে। এতো হাতে চাঁদ পাওয়ার সামিল। নাটক পাগল বিনয়দার পক্ষে এই সুযোগ হাতছাড়া করা, সত্যিই অসম্ভব।
_ বৌদি রাজি হবে , জিজ্ঞেস করেছ?
_ আরে, ছাড়তো। অত জিজ্ঞেস করার কি আছে। অসুবিধে না হলেই তো হলো। টাকা দিয়ে দেবো ব্যাস, ফুরিয়ে গেল।
একটু চুপ করে থেকে, মাথা নিচু করে গম্ভীর স্বরে বললো, আমি না থাকলেই তোর বৌদি বাঁচে! আমি মাতাল ফাতাল লোক, বুঝিস না?
_ ধুস, কি যে বলো। তুমি না থাকলে বৌদিকে দেখবে কে? কেউ তো নেই।
_ কেন ? তুই তো আছিস।
চমকে উঠলো বলা। লোকটা বলে কী ! আমি কী করবো?
_আমাদের কোনও সন্তানাদি হয়নি। হলে তো তোরই বয়সী হতো। যদিও তুই আমাকে দাদা বলিস, আসলে তুই তো আমার ছেলেরই মতো। মা’য়ের মতো বৌদিকে না হয় একটু দেখাশোনা করবি। কী রে পারবি না?
এরপরে সত্যিই আর কোনও কথাই চলে না।
বিনয়দা চলে গেল যাত্রার দলে। মাঝেমধ্যে ছুটি পেলে বা শো না থাকলে আসতো। বৌদি হাল ছেড়ে দিয়েছিল অনেক আগেই। এ মানুষ বশ মানার মানুষ নয়। বাউন্ডুলে খামখেয়ালি। এদের বিয়ে করাই উচিৎ নয়। এরা থিতু হতে জানেনা। নিজের ইচ্ছেই শেষ কথা। অন্যের ভালো মন্দ, পছন্দ অপছন্দ দেখার বা বোঝার মানসিকতা এদের থাকতে নেই। সম্ভবত এও একপ্রকার ব্যাধি।
বছর চারেক পরের কথা। বিনয়দা যাত্রাদল থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে এসেছে। বলা ভালো চলে আসতে বাধ্য হয়েছে। অনভ্যাসের ফলে যা হয়। রাতের পর রাত জাগা। দলের বাসে করে প্রতিদিন একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় ক্লান্তিকর ছুটে চলা। অনিয়মিত খাওয়া দাওয়া। সঙ্গে নেশা তো আছেই। শরীর একেবারে ভেঙে গেছে। দেখলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, সেই সুন্দর কার্তিকের মতো চেহারার মানুষটা, একেবারে জীর্ণ শীর্ণ মজে যাওয়া নদীর মতো হয়ে গেছে। চাকরিও নেই। রোজগার বলতে ওই কয়েকটা অফিস ক্লাবের নাটকে ডাইরেক্টরের কাজ। যাত্রাদলে কাজ করার সময়, খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন করতো দল। তাতে বিনয়দার নাম ছবি খুব ছাপা হতো। সেই সুবাদে এখন অনেকেই বিনয়দার নামটা জানে, তাই ডাকে। সামান্য অর্থের বিনিময়ে, নাটক পাগল বিনয়দা এখন, ভাড়ায় খাটা নাটুকে ডাইরেক্টর।
রোজগারের কোনও নিশ্চয়তা নেই। আর্থিক অনটন, বিনয়দা আর বৌদির জীবনে কালো ছায়া ফেলতে শুরু করেছে। অশান্তির আগুনে পুড়ছে দুজনেই। কিচ্ছু করার নেই। বিনয়দা হান্ড্রেড পারসেন্ট দায়ী এই করুণ অবস্থার জন্যে। বিনয়দা অবিশ্যি অকপটে স্বীকার করে সেকথা। তবে, দুঃখ করে বলে, অভিনয়কে এতো ভালবাসলাম অথচ অভিনয় আমাকে শুধুই দিলো, দুর্দশা আর বঞ্চনা।
নিলুদা সেদিন দারুণ একটা কথা বিনয়দাকে বলেছিল।
_ বিনয়, তুমি অভিনয় বা নাটককে খুব ভালবাসো সন্দেহ নেই মানলাম! কিন্তু, তুমি তাকে সম্মান কর কী? বিনয়… যেখানে সম্মান নেই , সেখানে ভালবাসারও কোনও মূল্য নেই। শ্রদ্ধাহীন ভালবাসা, কেবল যন্ত্রণাই দেয়।
ইতিমধ্যে খুশির খবর , বলা একটা চাকরি পেয়েছে। সরকারি। মা উঠেপড়ে লেগেছে, এবার ছেলের বিয়ে দেবেই। নইলে ঘরমুখো হবে না। খুঁটিতে বাঁধতে হবে।
সেদিন ছিল রবিবার। সন্ধ্যেবেলা কয়েকজনের বাড়িতে আসার কথা। বিষয় ওই বিয়ে। ওরা কন্যাপক্ষের লোক। সুতরাং রোববারের বাঁধাধরা সান্ধ্যকালিন জমাটি আড্ডা মাটি। বাড়িতে বেশ একটা উৎসব আবহাওয়া। যেকোনো মুহূর্তে অভ্যাগতদের আগমন ঘটতে পারে। আপ্যায়নের যাবতীয় আয়োজন প্রস্তুত। ঠিক সেই সময়, বলার মোবাইল বেজে উঠল।
ফোনের ওপ্রান্ত থেকে কি খবর ভেসে এলো, বলা ছাড়া কেউ জানলো না। ফোন নামিয়ে রেখে উর্ধশ্বাসে ছুটে গেলো পাশের পাড়ার ক্লাবের রিহার্সাল রুমে। নাটকের ডিরেক্টর বিনয়দা চিৎ হয়ে পড়ে আছে, ছেঁড়া শতরঞ্জির উপরে। বুকের ওপর মুঠো করা হাত। আর মুঠোয় শক্ত করে ধরা আছে নাটকের বইটা।
বিনয়দা মিথ্যে বলেনি। সে সত্যিই নাটককে বড্ডই ভালবাসতো। নাটকের ঘরে, নাটকের সাথে, নাটকের সংলাপ উচ্চারণ করতে করতে তার প্রস্থান। ক’জন নাটুয়া এমন সৌভাগ্যের অধিকারী। বিনয়দা হয়তো নাটককে যথার্থ রুপে শ্রদ্ধা করতে পারেনি। কিন্তু নাটক তাকে যেভাবে নাটকীয় আশ্রয় দিলো, তা বহুকাল বহু মানুষের মনে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বলা, বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে বিনয়দার নিথর দেহটার দিকে। কানে বাজছে বিনয়দার কন্ঠস্বর, “তুই তো আমার ছেলেরই মতো। মা’য়ের মতো বৌদিকে না হয় একটু দেখাশোনা করবি।কিরে পারবিনা ? “
বলা মনেমনে উচ্চারণ করলো, পারবো! পারবো বিনয়দা! নিশ্চয়ই পারবো!
মা”কে কী দূরে সরিয়ে রাখা যায় ? নিশ্চয়ই পারবো।
অনেক ভালোলাগা। এটি একটি সত্য নির্ভর কাহিনী ।
আলাপীমনএর সকল শুভানুধ্যায়ী বন্ধুদের জানাই আমার আন্তরিক ভালোবাসা।