কবিতা- কারশেড

কারশেড

-অমল দাস

 

 

রাত বারোটার পর গাড়িটি কারশেডে দাঁড়াতেই..

কতগুলি নোংরা দেহ গিট বাঁধা পুটলি নিয়ে,  

  ধুপধাপ শব্দ করে লাফিয়ে ওঠে নির্জন কামরায়।

না! কোন ডাকাত নয়, রেলের পাত বিক্রি করা মাফিয়া নয়,

এরা চোর ছেঁচোড়ও নয়!

এরা উপেক্ষিত নাগরিক, দেশের বোঝা, দশের বোঝা।    

এমনকি এই একবিংশ শতকের পৃথিবীরও বোঝা…  

ধূলা মিশ্রিত খর্ব কুঞ্চিত শীর্ণ চামড়ার দেহে পেটে খিল দেওয়া নাগরিক।

খিলটা বেশ শক্তপোক্ত, কারণ..

বাইরের হাওয়া পেটে-  

             আবার পেটের হাওয়া বাইরে যেন আসতেই দেয়না।

 

ওরা একটু আগেই লাইনের ধারে আগুন শিখা জ্বেলেছিল।

খাবার কি? আর কতটা ছিল জানা নেই!

তবে অনেকক্ষণ ধরে ফুটছিল খুব..

আসলে ফুটছিল শিরা উপশিরায় জমাট বাঁধা রক্তও..   

বাইরে কুয়াশায় ঢেকে এসেছে, ফুরফুরে হাওয়ায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডা,

বোধহয় তাপ নিচ্ছিল –

             ফাটাফুটি পোশাকে উলঙ্গ মানচিত্রের শরীরে!  

নিয়েছে যা, আবার ক্ষণিকে বেরিয়েও গেছে।

ধরে রাখতে পারেনি, ধরে রাখাও যায়না..

ওরা ঝুলি থেকে কয়েকটি অ্যালমুনিয়ামের অর্ধচন্দ্রাকৃতি থালা বার করে

পাত পেরে খেয়েছিল।

চাল সিদ্ধ বা আটা সিদ্ধ হবে!

মনে হয় সব্জি ছিলনা.. সব্জি ওদের বিলাসীতার মত!  

পেট ভরেছিল? জানিনা!

গরিবের খিদে মিটলেও সই, না মিটলেও সই।

কে আর খোঁজ রাখে…

এতো রাতে ঘুম তো একটা দরকার, তাই.. কারশেডের গাড়িটায়…

 

এখন প্রায় মধ্যরাত!  

এ গাড়ি তিনটেয় ফের ছেড়ে যাবে..

হাতে মোটে ঘণ্টা দুই তিন, তাহলে?

ট্রেনেই ওরা থেকে যাবে।

ঘুম ভাঙলে যেখানে দাঁড়াবে ট্রেন, সেখানেই ওরা নেমে যাবে।

সেখানেই ওদের সংসার, সেখানেই ওদের দেশ..

আঁধার নামলে কারশেডের কোন গাড়িই হবে মাথার ছাদ!   

ওদের প্রতি কারও খেয়াল নেই, দরদও নেই..

কর্তারা বলেন ‘অবাঞ্ছিতদের দল!

         মরুকগে, যেখানে খুশি মরুকগে… আমাদের কি’?   

 

আমাদের কিছুনা, তোমাদেরও কিছুনা, জন্তু জানোয়ারের তো নয়ই…

দায় কার? ঈশ্বরের..?

সে তো অনেক আগেই দায় ঝেড়ে মুক্ত হয়েছে! 

ছেড়ে দিয়েছে জীবিতের জঙ্গলে..

এ জঙ্গলে পশু আছে, পশুর মত মানুষ আছে

কেবল কারও হুঁশ নেই…  

         অবাঞ্ছিতের প্রতি প্রেম নেই,

মানবতা.. না! তাও নেই…  

 

Loading

2 thoughts on “কবিতা- কারশেড

  1. বড়ো রূঢ় বাস্তব। সত্যিই দেখা যায় এমন নির্মম জীবন যাপন রাতের অন্ধকারে, আমাদের অভ্যস্ত চোখ দেখে, আবার ব্যস্ততার মাঝে ভুলেও যায়, সেই প্রান্তিক মানুষগুলোর কথা এভাবেও ভাবা যায়!

    1. আসলে আমাদের চারিপাশে এতো সব দৃশ্য ধরা পড়ে তা বাস্তবের চাইতেও ভয়ানক। অনেক সময় নিজ চোখে দেখেও তার গভীরতা উপলব্ধি করা যায় না। এই প্রান্তিক মানুষগুলোর কথা কেউ ভাবি না ভাবার সময়ও নেই সমাজের।

Leave A Comment