অণু গল্প

অণু গল্প- মনুষ্যত্ব চাই

মনুষ্যত্ব চাই
– সুজিত চট্টোপাধ্যায়

 

মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে, পাল মশাই সবে একটু গা এলিয়ে দিয়েছেন বিছানায়। একটু ঝিমুনি ধরেছে, ঠিক তখনই একটা ফেরিওয়ালার বাজখাঁই হাঁকে সেটা চটকে গেল।
অদ্ভুত ব্যাপার। কী হাঁকছে লোকটা? ভালো করে কান খাড়া করে ঝিমুনি কাটিয়ে শুনলেন, মনুষ্যত্ব চাই মনুষ্যত্ব….
আরে, পাগল মনে হয়। তবুও মনে সংশয়। গিন্নিকে ডাকলেন, বলি, শুনছো.. একবার এদিকে আসবে..
গিন্নি তখন টিভিতে সিরিয়াল দেখতে ব্যস্ত। এখন সেই মোক্ষম সিনটা চলছে। বউকে জব্দ করতে, তার রান্না করা পায়েসে নুন মিশিয়ে দিচ্ছে শাশুড়ী। যাতে তার ছেলে, মানে ওই বউয়ের বর, সেই পায়েস খেয়ে যাচ্ছেতাই করে অশান্তি করে তার বউয়ের সঙ্গে। শুধু তাই নয়। বাড়ি শুদ্ধ লোকের মাঝে, বউয়ের মুখে ঝামা ঘসা হবে এবং ভবিষ্যতে কোনদিন যাতে ওই বউ আর রান্নাঘরে ঢুকতে না পারে, তার ব্যবস্থা পাকা করতে হবে।
এইসময় বুড়ো ডাকে কেন? যত্তসব।
দেখি কী হলো আবার, গজগজ করতে করতে গিন্নি এলেন।
কি হলো কি। বেশ তো খেয়েদেয়ে ঘুমোচ্ছিলে।
পাল মশাই হতভম্ব হয়ে বললেন,
হ্যাঁ গো, একটা পাগল মনেহয় বাড়িতে ঢুকে পরেছে!
গিন্নির মাথায় আগুন জ্বলে গেল।
বলি, ভীমরতি হয়েছে নাকি? কথা নেই বাত্তা নেই, বাড়িতে পাগল ঢুকে পরেছে? স্বপ্ন দেখলে না কি গো?
না না,, নিজের কানে শুনলুম যে, পরিস্কার…
কি শুনলে শুনি, বাড়িতে পাগল ঢুকে পরেছে? মাথাটা গেছে মনে হচ্ছে।
না না, হাঁকছে..
কে হাঁকছে! পাগল ?
না না, মানে মনে হলো, মনুষ্যত্ব চাই, মনুষ্যত্ব
গিন্নি চটাস করে নিজের কপালে চাপড় মেরে বললেন, হায় কপাল আমার, ওরে বাবা, মনুষ্যত্ব নয়। ফেরিওয়ালা চেঁচাচ্ছে । আমসত্ত্ব বিক্রি করছে।
বলেই ফোকলা হাসির ছটা। হা হা হা..
বলছে আমসত্ত্ব, উনি শুনছেন মনুষ্যত্ব, হা হা হা। ছেলে ফিরুক ওকে বলতে হবে, ভারী মজার কান্ড। ও বৌমা শুনে যাও তোমার শ্বশুরের কান্ড,
গিন্নি হাসতে হাসতে পাশের ঘরে চলে গেলেন।
পাল মশাই বালিশ হেলান দিয়ে বসে বসে ভাবতে লাগলেন, তাইতো, সত্যিই তো.. মনুষ্যত্ব কি ফেরি করবার জিনিস। এতো পণ্য নয়। এযে ঈশ্বরের সর্বোচ্চ দান। মনুষ্যত্ব.. মনুষ্যত্ব।

টিভি সিরিয়ালে এখন শাশুড়ী, বৌমার যত্নে রাঁধা পায়েসের বাটিতে নুন মেশাচ্ছে। সন্তর্পণে। লুকিয়ে। ধরা না পড়ে যায় শেষে। ধরা পড়লেই সর্বনাশ। মুখোশ খুলে যাবে। মনুষ্যত্বের মুখোশ।

Loading

One Comment

Leave A Comment

You cannot copy content of this page