Site icon আলাপী মন

অণু গল্প- সেল্ফি

সেল্ফি

-অঞ্জনা গোড়িয়া

 

 

“ও দিদি দাও না দুটো পয়সা”। ” ও দাদা, ও কাকু দুটো পয়সা দাও না গো।” হাতে ভিক্ষাপাত্র। পরনে নোংরা ছেঁড়া গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট। মাথায় জট পড়া উস্কোখুস্কো চুল। দু-তিন জন ছোটো ছেলে পায়ে পায়ে এগিয়ে আসছে আমাদের পথের দিকে। একটু অস্বস্তিই লাগছিল। ভালো পোশাক পরে স্নান সেরে ফিরছি সাগর থেকে। এবার পুজা দেওয়ার পালা।
আমাকে দেখে আর একজন বাঙালি ভদ্রমহিলা বলল, এদের জ্বালায় পথ চলার উপায়ই নেই। আসার সময় যদি কিছু চাল ডাল সঙ্গে নিতাম, বেশ হতো। খুচরো পয়সা এত পাই কোথায়? যদি মনে করে আনতাম খুব ভালো হতো। আমরা এসেছি সাগরে ডুব দিয়ে পূর্ণ অর্জন করতে। কপিল মুনির মন্দিরে পুজা দিতে।
সেই সাগর পাড়ে দুটি সারি বসে বৃদ্ধ -বৃদ্ধা আর কচিকাঁচার দল। কারোর হাত -পা কাটা। কেউ অন্ধ, কেউবা বোবা।আবার কেউ স্বাভাবিক। বোঝার উপায় নেই সত্যিই কি এরা অসহায়? কেউ কি এদের দিয়ে ব্যবসা করছে। আমরা তার খোঁজ ও রাখি না অবশ্য।
এই ভিক্ষুক দলেরই ওরা দুজন আমার একেবারে গায়ের কাছে। আঁচল টেনে দাঁড়িয়ে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে। বাধ্য হয়ে কিছু খুচরো পয়সা বের করে হাতে দিতে যাবো। ঠিক তখনই দুজন কলকাতাবাসী মেমসাহেবকে দেখে ওরা ছুটে গেল।
কি অদ্ভুত ব্যাপার। আমরা যাদের দেখে বিরক্ত বোধ করছিলাম। পায়ে পায়ে জড়িয়ে ধরছিল যাদের দুটো কচি হাত। তাদেরই কাছে টেনে নিলো ওরা। সেলফি তোলার জন্য। কি অনায়াসে মিশে গেল এদের সাথে। একমুখ হাসি ঠোঁটে মুখে। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল সেল্ফি তুলতে।
মাথার চুলটা ঠিক করে দিল মেমসাহেব। খুশিতে গদগদ হয়ে তাকিয়ে ক্যামেরার দিকে।
তারপর ওদের ছবিখানি ক্যামেরায় দেখিয়ে বলল, (আধো আধো বাংলাতে) ইউ আর ভেরি বিউটিফুল চাইল্ড । তোমরা খুব সুন্দর আছো। ইউ আর নট গোয়িং স্কুল? ছেলে দুটি স্কুল কথাটা বুঝতে পেরে মাথা নুইয়ে নিল।
মেম সাহেবরা কি বুঝল,জানি না।
এদের হাতে একশ টাকার নোট দিয়ে, বাংলা ইংরেজি মিশিয়ে বলল, দুজনে সেয়ার করে নিও চাইল্ড। ইউ আর গুড বয়। গুড বাই।
হাত নাড়িয়ে চলে গেল। ছেলে গুলো নোটটা হাতে নিয়ে একপ্রকার ছুটতে ছুটতে চলে গেল।আমাদের ধাক্কা দিয়ে। তবে ধাক্কাটা লাগল শরীরে নয় আমাদের বুকে।

Exit mobile version